নিজস্ব প্রতিনিধি: একের পর এক সিবিআইয়ের সমন এড়িয়েছেন। সোমবারও এড়িয়েছেন হাজিরা। এবার সিবিআই সক্রিয় হতেই গ্রেফতারির আশঙ্কা বেড়েছে তাঁর। তাই সেই গ্রেফতারি ঠেকাবার প্রক্রিয়াও শুরু হয়ে গেল। বাড়িতে সিবিআই(CBI) আসার আগেই হাজির হয়ে গেল মেডিকেল টিমও(Medical Team)। তাঁরা জানিয়েও দিলেন কেষ্টবাবুর শরীরের হাল খুবই খারাপ। তাঁকে থাকতে হবে বিশ্রামে। যদিও তাতে তাঁর বাড়িতে সিবিআইয়ের নোটিস আসা ঠেকানো যায়নি। আর সেই নোটিসে সাফ জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, আগামিকাল মানে বুধবার কলকাতার(Kolkata) নিজাম প্যালেসে সিবিআইয়ের কার্যালয়ে হাজিরা দিতেই হবে বীরভূমের দোর্দণ্ডপ্রতাপশালী অনুব্রতকে। আর সেটাও বেলা ১১টার মধ্যে। যদিও এই চিকিৎসকদের কে পাঠিয়েছে তা নিয়ে যেমন প্রশ্ন উঠে গিয়েছে তেমনি আগামিকাল তিনি সিবিআই কার্যালয়ে হাজিরা না দিলে গ্রেফতারি ঠেকাতে পারবেন কিনা তা নিয়েও প্রশ্ন উঠে গিয়েছে। গরু ও কয়লা পাচারের ঘটনায় সিবিআইয়ের আতসকাচে অনুব্রত মণ্ডল(Anubrata Mondol) । তাঁকে ফের তলব করেছে সিবিআই, আর সেই তলব এড়াতে ‘কেষ্ট’র বাড়িতে হাজির সরকারি মেডিকেল টিম। কিন্তু এই টিম পাঠাল কে? উঠে গেল প্রশ্ন।
গরুপাচার(Cattle Smuggling) কাণ্ডে সিবিআই তদন্তে নেমেছে আদালতের নির্দেশে। আর সেই তদন্তেই তারা নাম পেয়েছেন বীরভূম জেলা তৃণমূলের সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের। যদিও এখনও পর্যন্ত কোনও প্রমাণ কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা বাহিনীর তরফে সামনে আনা হয়নি যাতে অনুব্রত এই চক্রে জড়িত তা প্রমাণ হয়। তবে অনুব্রতের দেহরক্ষী সায়গল হোসেন গ্রেফতার হয়েছে সিবিআইয়ের হাতে। অভিযোগ, ১০০ কোটির সম্পত্তি বানিয়েছেন সায়গল। সেই টাকা ও সম্পত্তি কার ও কীভাবে এল তা নিয়ে প্রশ্ন আগেই উঠে গিয়েছে। এবার সেই প্রশ্নের উত্তরের সন্ধানে নেমে সিবিআই সায়গলের কাছ থেকে বেশ কিছু সূত্র পেয়েছে, যে সূত্র ধরে অনুব্রত মণ্ডলকে আবারও জিজ্ঞাসাবাদ করতে চাইছে সিবিআই। সেই সূত্রে সোমবার রাতে যেমন তাঁকে ইমেল করা হয়েছে সিবিআই থেকে তেমনি এদিন সকালে কলকাতার রাজারহাটের চিনার পার্কের ফ্ল্যাটে এবং বোলপুরের(Bolpur) বাড়িতে নোটিস দিয়ে গিয়েছে। তাতেই বলা হয়েছে আগামিকাল বুধবার সকাল ১১টার মধ্যে অনুব্রত মণ্ডলকে কলকাতার নিজাম প্যালেসে সিবিআইয়ের কার্যালয়ে হাজিরা দিতে হবে।
অনেকেই মনে করছেন, সিবিআই এবার আঁটঘাট বেঁধে অনুব্রত মণ্ডলকে বাগে আনতে চাইছে। বিপদ আঁচ করে মেডিকেল কারণ দেখিয়ে হাজিরা এড়াতে মরিয়া অনুব্রত। গতকাল এসএসকেএম ফেরালেও এদিন সকালে বোলপুরে ‘কেষ্ট’র বাড়িতে হাজির হয়েছে বোলপুর মহকুমা হাসপাতালের ৪ জনের একটি মেডিকেল টিম। কে তাঁদের পাঠিয়েছে এবং কেনই বা তাঁরা অনুব্রতের চিকিৎসা করছেন সেই প্রশ্ন অবশ্য ইতিমধ্যেই উঠে গিয়েছে? সূত্রের খবর, অনুব্রতের অর্শ ও ফিশচুলার সমস্যা রয়েছে। সেই সমস্যার চিকিৎসা করতেই নাকি কেষ্টর বাড়িতে গিয়েছে মেডিকেল টিম। যদিও এই দাবি মানতে নারাজ অনেকেই। আর তাই মেডিকেল টিম তাঁকে ঘরে বিশ্রাম নেওয়ার কথা জানালেও এই মেডিকেল টিমের রিপোর্ট আদৌ সিবিআই পাত্তা দেবে কিনা তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। সূত্রের খবর, দূর্গাপুরে থাকা কেন্দ্রীয় বাহিনীর একটি টিমকে ইতিমধ্যেই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক থেকে অ্যালার্ট করে দেওয়া হয়েছে। মনে করা হচ্ছা আগামিকাল অনুব্রত হাজিরা না দিলে কেন্দ্রীয় বাহিনী সঙ্গে নিয়ে গিয়ে গ্রেফতারির পথেই হাঁটবে সিবিআই।
কার্যত সেই প্রক্রিয়া যা শুরু হয়ে গিয়েছে তার সব থেকে বড় প্রমাণ, এদিন সকালেই দিল্লি থেকে কলকাতায় এসে হাজির হয়েছেন সিবিআইয়ের অতিরিক্ত ডিরেক্টর অজয় ভাটনাগর। এসেই তিনি জরুরি বৈঠকে বসেছেন সিবিআই আধিকারিকদের নিয়ে। কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে রাজ্যে যে ঘটনাগুলিতে সিবিআই তদন্ত চলছে, সেগুলির তদারকিতে রয়েছেন অজয় ভাটনাগর। এর আগেও তিনি কলকাতায় এসেছিলেন। মঙ্গলবার সেই সব ঘটনার তদন্তের গতিবিধি পর্যালোচনা করতেই আধিকারিকদের সঙ্গে তাঁর বৈঠক বলে সিবিআইয়ের তরফে জানানো হয়েছে। যদিও ওয়াকিবহাল মহলের ধারনা, সবটাই অনুব্রতের গ্রেফতারির প্রাক অনুষ্ঠানসূচির অন্তর্গত।