নিজস্ব প্রতিনিধি: নদী বাঁধে ফাটল অনেক আগেই দেখা দিয়েছিল। স্থানীয় বাসিন্দারা বার বার সেই বাঁধ সারাবার জন্য দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় প্রশাসন থেকে পঞ্চায়েত সমিতি মায় এলাকার বিধায়ক তথা রাজ্যের মন্ত্রীর কাছেও। কিন্তু বাঁধ সারানো হয়নি। এবার গুরুপূর্ণিমায় গঙ্গা ফুলে ফেঁপে উঠতেই সেই বাঁধ কার্যত তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়েছে। আর তাতেই হু হু করে বিস্তীর্ণ এলাকায় ঢুকে পড়েছে গঙ্গার নোনা জল। প্লাবিত এলাকায় কোথাও হাঁটু সমান জল তো কোথাও বুক সমান। ঘরবাড়ি ফেলে রেখে কয়েকশো বাসিন্দা উঁচু স্থানে চলে যেতে বাধ্য হয়েছেন। জলের তলায় চলে গিয়েছে মাঠের সবজি, পুকুরের মাছ। কম বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে খুব করেও ২০০টি বাড়ি। আর সেই এলাকা পরিদর্শনে গিয়েই শুক্রবার সকালে বিক্ষোভের মুখ পড়লেন এলাকার বিধায়ক তথা রাজ্যের মন্ত্রী। ঘটনাস্থল দক্ষিণ ২৪ পরগনা(South 24 Pargana) জেলার কাকদ্বীপ(Kakdwip) মহকুমার সাগর(Sagar) ব্লকের বঙ্কিমনগর(Bankim Nagar) এলাকা। সেখানেই এদিন প্লাবিত এলাকা পরিদর্শন করতে গিয়ে বিক্ষোভের মুখে পড়েন স্থানীয় তৃণমূল বিধায়ক তথা রাজ্যের সুন্দরবন উন্নয়নমন্ত্রী বঙ্কিম হাজরা(Bankim Hajra)।
জানা গিয়েছে, বঙ্কিমনগরের পাশ দিয়েই বয়ে গিয়েছে গঙ্গা। কিছু দূরে গিয়ে গঙ্গাসাগরে সে মিশেছে বঙ্গোপসাগরে। বঙ্কিমনগরে গঙ্গা যেমন চওড়া তেমনই তার জলের স্রোত। কোটালের সময়ে গঙ্গার জল যাতে গ্রামে ঢুকে পড়তে না পারে তার জন্যই গ্রামের পাশে দেওয়া হয়েছিল বাঁধ। কিন্তু সেই বাঁধেই ফাটল ধরা পড়ে বহু আগেই। বর্ষার সময় গঙ্গার জল বাড়লে কোটালের দিনে যে বাঁধ ভেঙে পড়তে পারে এমন আশঙ্কা আগেই করেছিলেন বঙ্কিমনগরের বাসিন্দারা। তাই তাঁরা স্থানীয় সাগর ব্লকের পঞ্চায়েত সমিতি থেকে এলাকার বিধায়ককে বহু বার সেই বাঁধ সারাতে আবেদন জানিয়েছিলেন। কিন্তু বাঁধ সারানো হয়নি। বৃহস্পতিবার থেকে কোটালের জল সেই বাঁধে ধাক্কা দিয়ে তা ধসিয়ে দেওয়া শুরু করে। সেই সময় থেকেই গ্রামে জল ঢুকতে শুরু করে দেয়। শুক্রবার সকালে ফের কোটালের জল বাঁধে আছড়ে পড়লে তা কার্যত তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়ে। আর তারপরেই গঙ্গার জল হু হু করে ঢুকতে শুরু করে বঙ্কিমনগর এলাকায়। আর তার জেরে জলবন্দী হয়ে পড়েন প্রায় ৩০ হাজার মানুষ।
জলবন্দির খবর পেয়ে এলাকা পরিদর্শনে যান বঙ্কিমবাবু। আর সেখানেই তিনি আমজনতার বিক্ষোভের মুখে পড়েন। যদিও মন্ত্রী তাঁদের আস্বাস দিয়েছেন দ্রুত বাঁধ সারাই করা হবে। এদিকে কোটালের জলে যেমন সুন্দরবন এলাকায় এলাকায় নদীবাঁধে ফাটল দেখা দিয়েছে তেমনি ফেজারগঞ্জ এলাকায় সাগরের জল ঢুকতে শুরু করে দিয়েছে। একই রকম ভাবে দিঘায় সমুদ্রের জল গার্ডওয়াল টপকে ঢুকে পড়েছে এলাকার ভিতরে। ওল্ড ও নিউ দিঘা মিলিয়ে প্রায় ৩৭টি হোটেলের ভিতরে জল ঢুকে পড়েছে। ওই সব হোটেলের গ্রাউন্ড ফ্লোরে প্রায় এজ হাঁটু জল দাঁড়িয়ে যায়। এই ঘটনার জেরে পর্যটকেরা রীতিমত আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। তাঁরা দ্রুত হোটেল ছেড়ে বেড়িয়ে আসেন। যদিও পুলিশ তাঁদের নিরাপদে বাসস্ট্যান্ড ও স্টেশনে পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করে দেয়।