নিজস্ব প্রতিনিধি: একুশের বিধানসভা নির্বাচনে বাংলা দখলের ছক কষে এগিয়েছিল গেরুয়া বাহিনী। তার জন্য যেমন দেশের প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী দিল্লি থেকে বাংলা ডেলি প্যাসেঞ্জারি শুরু করেছিলেন তেমনি একাধিক রাজ্যের গেরুয়া মুখ্যমন্ত্রীরাও বাংলায়(Bengal) এসে দখলদারির ডাক দিয়ে গিয়েছিলেন। এর পরেও ছিল কেন্দ্রীয় বাহিনীর দাপাদাপি, কেন্দ্রীয় এজেন্সির দাপাদাপি এবং সর্বোপরি নির্বাচন কমিশনের একবগগা নীতি। যদিও এত কিছু করেও বিশেষ সুবিধা করতে পারেনি পদ্মশিবির। দৌড় তাঁদের থেমে গিয়েছিল মাত্র ৭৭টি আসন জিতেই। সেই পরাজয়ের জ্বালা এখনও ভুলতে পারেননি দিল্লিরবাবুরা। তাই পদে পদে বাংলাকে বঞ্চনা করার পাশাপাশি চলছে একের পর এক প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপ। বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়(Mamata Banerjee) বার বার সরব হয়েছেন বাংলার প্রতি কেন্দ্র সরকারের বঞ্চনার প্রতিবাদে। যদিও কোনওবারই তা স্বীকার করেনি মোদি সরকার(Modi Government)। কিন্তু এবার সেই মোদি সরকারের রিপোর্টেই ধরা পড়ল বাংলাকে বঞ্চনা করার ছবি।
বেশ কয়েক মাস ধরে বাংলাকে আর ‘প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা’(Pradhanmantri Awas Yojana) খাতে টাকা দিচ্ছে না কেন্দ্র সরকার। কার্যত অনিয়ম ও পদ্ধতিগত ত্রুটির কথা বলে গরিব মানুষের বাড়ি তৈরির বরাদ্দ আটকে রেখেছে কেন্দ্র। অথচ, একই ‘খামতি’ থাকা সত্ত্বেও একাধিক রাজ্য আবাস যোজনা প্রকল্পের বরাদ্দ যথারীতি পাচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে একাধিক ‘ডবল ইঞ্জিন’ রাজ্যও। বাংলার রাজ্য সরকার বার বার দাবি তুলেছে কেন্দ্র সরকারের একাধিক দফতর বেশ কিছু প্রকল্পের ক্ষেত্রে সোশ্যাল অডিট না করেও বহু বিজেপি শাসিত রাজ্যকে বরাদ্দ করে যাচ্ছে। সেখানে বহুলাংশে অডিট(Audit) সম্পন্ন করেও বাংলা চলতি আর্থিক বছরে এক টাকাও পায়নি ওই সব প্রকল্পের জন্য। এই ঘটনা বাংলাকে কোণঠাসা করার এক অপচেষ্টা ছাড়া আর কিছু নয়। গরিবদের জন্য বাড়ি তোইরির ক্ষেত্রে বাংলা দেশের মধ্যে চতুর্থ স্থানে রয়েছে। অথচ সেই প্রকল্পের জন্যই বাংলাকে টাকা দিচ্ছে না কেন্দ্র। কেন্দ্র সরকারের রিপোর্ট থেকেই জানা যাচ্ছে, গুজরাত, মহারাষ্ট্র সহ মোট ২১টি রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার সোশ্যাল অডিট একেবারেই হয়নি। অথচ তাঁরা প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা খাতে টাকা পেয়ে গিয়েছে।
রাজ্য সরকারের আধিকারিকদের পাশপাশি রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসের অভিযোগ, পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে গেরুয়া শিবির ইচ্ছা করে চক্রান্ত করেই কেন্দ্রীয় প্রকল্পের বরাদ্দ আটকে রেখেছে। এ প্রসঙ্গে রাজ্যের পঞ্চায়েত মন্ত্রী প্রদীপ মজুমদারের দাবি, ‘বাংলায় নিয়মকানুন মানা হচ্ছে না, এ কথা কেউ বলতে পারবে না। টাকা আটকে রাখার কোনও যৌক্তিকতা নেই। এটা একেবারেই রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে বাংলাকে বঞ্চনা।’ যদিও কেন্দ্রের দাবি, শুধু সোশ্যাল অডিট নয়, আরও কিছু কারণে আটকে রয়েছে বরাদ্দ। ২০১৯ সালে গ্রামীণ আবাস যোজনার জন্য পৃথকভাবে সোশ্যাল অডিট করার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করে কেন্দ্রীয় পঞ্চায়েত মন্ত্রক। তার আগে ‘১০০ দিনের কাজ’ প্রকল্পের সঙ্গেই আবাস যোজনার অডিট সেরে ফেলা হতো। প্রকৃত উপভোক্তাদের কাছে প্রকল্পের সুবিধা ঠিকঠাক পৌঁছনো নিশ্চিত করতেই মূলত পৃথকভাবে সোশ্যাল অডিটের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল কেন্দ্র। অডিটের টিম গ্রামে গ্রামে ঘুরে প্রকল্পের রূপায়ণ সরেজমিনে যাচাই করে। কেন্দ্রীয় সরকারের তথ্য অনুযায়ী, ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এই প্রকল্পে ২ লক্ষ ১৮ হাজার ২১০টি ক্ষেত্রে সোশ্যাল অডিট হয়েছে। এর মধ্যে বাংলায় হয়েছে ১২ হাজার ৫৪৭টি অডিট। তালিকায় বাংলা দেশের মধ্যে চতুর্থ। তার আগে রয়েছে মেঘালয়, ত্রিপুরা এবং উত্তরপ্রদেশ।
সামান্য হলেও সোশ্যাল অডিট হয়েছে উত্তরাখণ্ড, অসম, মিজোরাম, ঝাড়খণ্ড, অন্ধ্রপ্রদেশ, হিমাচল প্রদেশ এবং ওড়িশায়। একেবারেই হয়নি মহারাষ্ট্র, গুজরাত, মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান, হরিয়ানা, কর্ণাটক, কেরল, পাঞ্জাব, সিকিম এবং তামিলনাড়ুতে। আন্দামান সহ একাধিক কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলেও প্রকল্পের কোনও সোশ্যাল অডিট হয়নি। রাজ্যের এক আধিকারিক বলেন, ‘আবাস যোজনা, সড়ক যোজনা এবং ১০০ দিনের কাজ সংক্রান্ত সমস্ত তথ্য কেন্দ্রের কাছে জমা দেওয়া হয়েছে। সোশ্যাল অডিটের ক্ষেত্রে কেন্দ্রের তথ্যই বলছে, দেশের মধ্যে বাংলা খুব ভালো জায়গায় রয়েছে। তাই আমরা আশাবাদী, বাংলা শীঘ্রই নিজের বরাদ্দ পাবে। তাছাড়া বাংলাকে বাদ দিয়ে কেন্দ্র তাদের লক্ষ্যমাত্রা ছুঁতেও পারবে না।’