নিজস্ব প্রতিনিধি: আশা ছিল, ভালবাসা ছিল, কত স্বপ্ন ছিল, সব ভেসে গেল। হ্যাঁ এই গানই এখন বাজছে বিজেপি(BJP) নেতাদের ঘরে ঘরে। বিশেষ করে যারা মতুয়া(Matua), তাঁরা এদিন সকাল থেকেই তাকিয়ে ছিলেন কৃষ্ণনগরের(Krishnanagar) পানে, যদি সেখান থেকে প্রধানমন্ত্রী নাগরিকত্ব ইস্যু নিয়ে কিছু ঘোষণা করেন। কিন্ত সেই আশায় জল দিলেন খোদ নরেন্দ্র মোদি(Narendra Modi)। মতুয়াদের নাগরিকত্ব ও CAA লাগু করা নিয়ে টুঁ শব্দটিও করলেন না। অথচ এদিন তাঁর সভায় ভিড় জমিয়েছিলেন মতুয়ারা। সভায় ছিলেন বঙ্গ বিজেপির সভাপতি সুকান্ত মজুমদার সহ রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। তাঁদের মুখ থেকেও এদিন মতুয়াদের নাগরিকত্ব ও CAA লাগু করা নিয়ে কিছু শোনা যায়নি। সব থেকে বড় কথা সভায় হাজির ছিলেন মতুয়াদের ঠাকুরবাড়ির বড় ছেলে তথা বনগাঁ লোকসভা কেন্দ্রের বিজেপি সাংসদ ও কেন্দ্রীয় জাহাজ প্রতিমন্ত্রী শান্তনু ঠাকুর। অথচ তিনিও নীরবই রইলেন মতুয়াদের নাগরিকত্ব ও CAA লাগু করা নিয়ে। আর সেখানেই হতাশা গ্রাস করেছে বিজেপির মতুয়া নেতাদের।
বাংলার দুটি লোকসভা কেন্দ্র রানাঘাট ও বনগাঁ মতুয়া অধ্যুষিত। উনিশের ভোটে এই মতুয়া সমাজকেই নাগরিকত্ব প্রদানের আশ্বাস দিয়ে ভোট চেয়েছিল বিজেপি। পেয়েওছিল। ২টি লোকসভা কেন্দ্রই গিয়েছিল বিজেপির দখলে। একুশের নির্বাচনে কিন্তু সেই মতুয়া ভোট ফের তৃণমূলমুখী হওয়ার ছবি ধরা পড়েছিল। সেই ধারা বজায় ছিল পঞ্চায়েত ও পুরসভা নির্বাচনেও। সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে এদিন বাংলার মতুয়া সমাজের বিজেপি নেতারা আশা করেছিলেন নদিয়া জেলার কৃষ্ণনগর শহরে সভা করতে এসে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি হয়তো মতুয়াদের জন্য কিছু ঘোষণা করবেন। কিন্তু সেই আশা বৃথাই গিয়েছে। মোদি কৃষ্ণনগরের সভা থেকে বাংলার ৪২টি লোকসভা কেন্দ্রেই পদ্মফুল ফোটানোর আর্জি জানিয়েছেন। কিন্তু কোন পথে হাঁটলে পদ্ম ফুটবে সেই রাস্তা বিজেপির নেতাদের দেখাননি তিনি। কারণ সম্ভবত তিনি নিজেও তা জানেন না। কেননা তাঁর দলের জয় যে দাঁড়িয়ে ছিল মিথ্যা প্রতিশ্রুতির আর জুলুমবাজির ওপরে সেটা এখন বাংলার মানুষেরা বেশ ভালই বুঝে গিয়েছেন। মোদি নিজেও সম্ভবত জানেন, বাংলায় CAA লাগু করা সম্ভব নয় রাজ্য সরকারের সহায়তা ছাড়া। আর তাই এদিন তিনি নিরবই থেকেছেন।
CAA নিয়ে এদিন মোদির নিরবতাকে হাতিয়ার করেছে তৃণমূল। তাঁদের দাবি, প্রধানমন্ত্রী কার্যত বুঝিয়ে দিলেন, মতুয়াদের জন্য তাঁর প্রাণ আর কাঁদছে না। মতুয়াদের জন্য আর কিছু করার ভাবনা তাঁর মাথায় আসছে না। মতুয়াদের নাগরিকত্বের দাবি তাঁর কাছে এখন আর মাথা ব্যাথার কারণ নয়। মতুয়ারা এখন তাঁর কাছে শুধু ভোট ব্যাঙ্ক। ব্যবহার করে ছুঁড়ে ফেলে দেওয়ার ভোট ব্যাঙ্ক। আর তাই লোকসভা নির্বাচনের মুখে দাঁড়িয়ে নতুন করে কোনও প্রতিশ্রুতি তিনি দেননি। কেননা দিলেই তা মানুষ ধরে ফেলবে। মিথ্যা প্রতিশ্রুতিতে মানুষ আর বিজেপির দিকে ভেসে যাবে না। বরঞ্চ তাঁরা এবার বিজেপি আর প্রধানমন্ত্রীর মিথ্যাচারের মুখোশটা টেনে ছুঁড়ে ফেলে দেবেন। ২৪’র ভোটের প্রচারে মোদি যতবারই কৃষ্ণনগর, রানাঘাট আর বনহাঁতে আসুন না কেন, এবার আর ভুল করবেন না মতুয়ারা। দাবি জোড়াফুল শিবিরের।