নিজস্ব প্রতিনিধি: কালী ঠাকুর, অধিকাংশ বাঙালিদের বিশ্বাসের একটা দেবতা। পাড়ায় পাড়ায় কোনও ঠাকুর থাকুক বা না থাকুক গ্রামে একটা কালি মন্দির বা শনি দেবতার মন্দির থাকবেই থাকবে। বেশির ভাগ মানুষের বিশ্বাস কালি অন্ধকারের বিনাশ ঘটিয়ে সত্যের জয় করবে। যেমন নদিয়া ও বর্ধমান জেলার নবদ্বীপের সুপ্রাচীন ঐতিহ্যবাহী আগমেশ্বরী মাতার মন্দির। শ্রী চৈতন্য মহাপ্রভুর শহর রাস যাত্রায় নবদীপে ভিড় জমান রাজ্যের বেশিরভাগ মানুষ। আর নবদ্বীপে সুপ্রাচীন কালীপুজো গুলির মধ্যে অন্যতম কালী পুজো হল আগমেশ্বরী পাড়া কালিবাড়ির পুজো। এই পুজো আনুমানিক ৫০০ বছর ধরে পূজিত হয়ে আসছেন, নবদ্বীপের আগমেশ্বরী পাড়া মন্দিরে। তবে এখানে মা কালীকে দক্ষিণা কালী রূপে পূজা করা হয় হন। জানেন কী, এই মন্দিরে সম্পূর্ণ বৈষ্ণবীয় মতে মায়ের পুজো করা হয়, কিন্তু এখানে পঞ্চমুন্ডির আসন রয়েছে। যেহেতু বৈষ্ণব মতে মায়ের পূজা করা হয়, তাই এই পুজোতে কোনও বলি বা কারণ সুধা ব্যবহার করা হয় না।
মাতৃমূর্তি বিশাল আকৃতি হওয়ার প্রতিবছর কালীপুজোর দিন মূল মন্দিরের সম্মুখে মূর্তি স্থাপন করা হয়। কথিত আছে, প্রায় ৫০০ বছর পূর্বে মাতৃ সাধক তথা দক্ষিণাকালী মাতৃমূর্তির রূপকার মাতৃ সাধক আগমবাগীশ সর্বপ্রথম এই পুজো শুরু করেছিলেন। এই মন্দিরের সপ্তদশ শতকের এক উচ্চস্তরের তন্ত্রসাধক ছিলেন কৃষ্ণানন্দ আগমবাগীশ। কথিত আছে তিনি ১৭০ টির মতো বিভিন্ন গ্রন্থ থেকে নির্যাস সংগ্রহ করে “বৃহৎ তন্ত্রসার” গ্রন্থ রচনা করেছিলেন তিনি। এরপর তিনিই মায়ের মূর্তি প্রতিষ্ঠা করে পূজার্চনা করার আবেদন জানান মায়ের কাছে। এরপর তিনি স্বপ্নাদেশ পান যে ঘুম থেকে উঠে সর্বপ্রথম যেই নারীমূর্তি কে তিনি সম্মুখে দেখতে পাবেন সেটি হবে মায়ের আসল আকৃতি বা রুপেই মাকে পুজো করতে হবে। সেই আদেশ মাফিক তিনি ভোররাতে গঙ্গা স্নান করার উদ্দেশ্যে রওনা দিলে পথে একজন কৃষ্ণ কালা এক গোয়ালিনী মহিলাকে দেখতে পান। যিনি এক মনে গাছের গায়ে ঘুঁটে দিচ্ছিলেন, পরণের কাপড় হাঁটুর ওপরে, কুঞ্চিত কেশরাশি কোমর ছাপিয়ে হাঁটু ছুঁই ছুঁই, কৃষ্ণবর্ণা, কপালের ঘাম মুছতে গিয়ে সিঁদুর লেপ্টে তাঁর।
এই চিত্রই মানসপটে এঁকে গঙ্গামাটি দিয়ে মূর্তির রূপ দেন কৃষ্ণানন্দ। এই মূর্তিই পরবর্তীতে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। বর্তমানে যেসকল দক্ষিণাকালী মূর্তি দেখা যায়, তার প্রাচীন রূপ এটি। আরও জানা যায় যে, কৃষ্ণানন্দ একই দিনে মূর্তি গড়ে পুজো করতেন ও পরের দিন তা ভোরে বিসর্জন দিয়ে দিতেন। আগমসিদ্ধ কৃষ্ণানন্দের মূর্তিই “মাতা আগমেশ্বরী” নামে খ্যাত। সেই রীতি মেনে একাদশীর দিন থেকে মাতৃমূর্তি তৈরি হওয়ার কাজ শুরু হয় এবং অমাবস্যাতে মায়ের চক্ষুদান করা হয়, এবং পুজো শেষে নিয়ম মাফিক একাধিক বাহক দ্বারা মাকে কাঁধে বহন করে স্থানীয় পীরতলা খালে বিসর্জন দেওয়া হয়। পুজোর সময় লাখ লাখ ভক্তের সমাবেশ হয় এই মন্দিরে।