নিজস্ব প্রতিনিধি: বিদেশের মাটিতে দাবি জোরালো। দেশের মাটিতে সেটাই খটকা মাত্র। কার্যত সরকারি কোনও সংস্থাই বিদেশের দাবিকে মান্যতা দিতে চাইছেন না। আর তাতেই উদ্বেগ বাড়ছে। যথাযথ গুরুত্ব না দেওয়ার জন্য একদম শেষ মুহুর্তে বড়সড় বিপর্যয় আছড়ে পড়বে না তো! এই প্রশ্নটাই এখন ঘুরছে অনেকের মুখে মুখে। প্রশ্ন ঘুরছে সোশ্যাল মিডিয়াতেও। নজরে সুপার সাইক্লোন ‘সিত্রাং’(Sitrang)। উত্তর আমেরিকার কানাডার একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের আবহাওয়া কেন্দ্রীক গবেষণার সঙ্গে জড়িত গবেষকদের দাবি, চলতি মাসেই আন্দামান সাগরে জন্ম নেবে একটি ঘূর্ণাবর্ত, যা বঙ্গোপাসাগরে পা রেখে নিম্নচাপে পরিণত হবে। সেখানেই সে ধাপে ধাপে শক্তি বাড়িয়ে ঘূর্ণিঝড়ের চেহারা নেবে। তারপরেও সে শক্তি বাড়াবে ধাপে ধাপে। শেষে যখন সে ভূমি স্পর্শ করবে তখন তা সুপার সাইক্লোনের চেহারা নেবে। ভূমিস্পর্শকালে তার গতিবেগ হবে ঘন্টায় ২৫০কিমি। ঝড়ের নাম হবে ‘সিত্রাং’। কিন্তু এই দাবিকেই মান্যতা দিতে চাইছেন না এদেশের সরকারি আবহাওয়া সংস্থাগুলি। যদিও দিল্লির মৌসম ভবনের(Mausam Bhawan) দাবি, ঘূর্ণাবর্তের জন্ম হবে এদিনই অর্থাৎ সোমবারে। পরে তা নিম্নচাপের চেহারা নেবে। তারপর সে এগিয়ে আসবে দক্ষিণ-পূর্ব উপকূলের(South East Coast) দিকে।
বিবাদ ঠিক কোথায়? কানাডার গবেষণার দাবি, প্রথমে ঘূর্ণিঝড় হিসাবে আত্মপ্রকাশ করবে ‘সিত্রাং’। তারপর ধাপে ধাপে সে শক্তি বাড়িয়ে প্রথমে নিম্নচাপ, তারপর সুগভীর নিম্নচাপ এবং তারপরে সুস্পষ্ট অতি গভীর নিম্নচাপের চেহারা নেবে সে। এরপরে সেখানেই থেমে না থেকে ধীরে ধীরে সে এগিয়ে আসবে দেশের মূল ভূখণ্ডের দিকে। এই এগিয়ে আসার পথেই সে শক্তি বাড়িয়ে প্রথমে ঘূর্ণিঝড়, তারপর অতি শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়ের রূপ নেবে। কিন্তু দিল্লির মৌসম ভবনের দাবি, ঘূর্ণাবর্তের জন্ম হবে ঠিকই, তা নিম্নচাপের রূপ নেবে সেটাও ঠিক, তা আরও শক্তিশালী হয়ে অতি গভীর নিম্নচাপের চেহারা নেবে এটাও ঠিক, কিন্তু ঘূর্ণিঝড়ে সে রূপান্তরিত হবে না। কেননা পারিপার্শ্বিক অবস্থা ঘূর্ণিঝড় তৈরির অনুকূল নয়। তাই ভয়ের কিছু নেই। অতি গভীর নিম্নচাপ কালিপুজোর সময়েই দেশের মূল ভূখণ্ডে পা রাখবে। কিন্তু তার কোনও প্রভাব বাংলার পরিমণ্ডলে পড়বে না। দক্ষিণবঙ্গে বড্ডজোর হালকা বিক্ষিপ্ত বৃষ্টি হতে পারে।
মৌসম ভবনের দাবি, এদিন অর্থাৎ সোমবার বিকালের মধ্যেই উত্তর আন্দামান সাগরে(North Andaman Sea) একটি ঘূর্ণাবর্তের জন্ম হবে। মঙ্গলবার সকাল থেকেই তা ক্রমশ উত্তর পশ্চিম দিকে অগ্রসর হবে। ২০ অক্টোবর অর্থাৎ চলতি সপ্তাহের বৃহস্পতিবার এই ঘূর্ণাবর্ত নিম্নচাপে পরিণত হবর। এরপর এই নিম্নচাপ ক্রমশ দক্ষিণ পূর্ব দিকে এগিয়ে মধ্য বঙ্গোপসাগরে(Bay of Bengal) অবস্থান করবে। সেখানে দাঁড়িয়ে থেকেই সে শক্তি সঞ্চয় করে পশ্চিম মধ্য বঙ্গোপসাগরে গভীর নিম্নচাপে পরিণত হবে। প্রাথমিকভাবে এর অভিমুখ অন্ধ্রপ্রদেশ এবং তামিলনাড়ু উপকূল। কিন্তু এই নিম্নচাপ একটি বাঁক নিতে পারে। সে ক্ষেত্রে তা দক্ষিণ ওড়িশা ও উত্তর অন্ধ্রপ্রদেশের দিকে এগিয়ে আসবে। এই এগিয়ে আসার পথে সে শক্তি সঞ্চয় করে অতি গভীর নিম্নচাপে পরিণত হবে এবং ভূমি স্পর্শকালে এর গতিবেগ হবে ঘণ্টায় ৯০কিমির আশেপাশে। কলকাতার বুকে এই গতিতে কালবৈশাখী ঝড় বয়ে যাওয়ার বহু নিদর্শন্ন আছে। তাই ভয়ের কিছু নেই। তবে এই নিম্নচাপের জেরে প্রচুর বৃষ্টি হবে। নিম্নচাপ ওড়িশা-অন্ধ্র বা অন্ধ্র-তামিলনাড়ু অভিমুখে গেলে বাংলার ওপর সরাসরি কোনও প্রভাব পড়বে না। গোটা বিষয়টি পর্যবেক্ষণ রেখেছে মৌসম ভবন। এখনও পর্যন্ত ঘূর্ণাবর্ত জন্ম না নেওয়ায় তার চরিত্র নির্ধারণ করা যাচ্ছে না। তবে পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে প্রবল বা অতি প্রবল ঘূর্নিঝড় তৈরির সম্ভাবনা কম বলেই মনে করছেন আবহাওয়াবিদরা।