নিজস্ব প্রতিবেদক, মেদিনীপুর: নামধারীদের ‘ঘুঘুর ফাঁদ’ বা হৃদয় উজাড় করা ভালবাসা, ওদের ভরসা ‘কবিতা’। তার টানেই কাব্যের শব্দ কখনও অস্ত্র আবার কখনও ফুল হয়ে ওঠে। ওরা ‘মেদিনীপুরের তরুণ কবি’। বয়স নয় ওদের কাছে তারুণ্য মানে মনের জোয়ার।
কেউ চাকুরিজীবি, কেউ ব্যবসায়ী, কেউ গৃহ শিক্ষক আবার কেউ বেকার বা গৃহবধূ। সকলের একটাই প্রেম, ‘কবিতা’। আর এই টানেই মাসের কোনও এক ছুটির দিন দেখে তারা বসে পড়ে মাসিক সাহিত্য আড্ডায়। কবিতা, গল্প, গান, আলোচনা আর চা-জলখাবারে জমে ওঠে আড্ডা। প্রতি আড্ডাতেই পাওনা নতুন সদস্য। দিন দিন ‘বন্ধু’ পাওয়াই এদের কাছে বড় উপহার। অতিমারির কারণে সশরীরে আড্ডা বন্ধ ছিল অনেকদিন। তবে অনলাইন আড্ডা চলেছে জমজমাট। আর মাঝে মধ্যেই আয়োজিত হয়েছে অনুষ্ঠান। কখনও সেই অনুষ্ঠান আড়ম্বরহীন আবার কখনও আড়ম্বর সহকারেই। তবে আড়ম্বর থাক বা না থাক। তথাকথিত সেলিব্রেটি থাক বা না থাক, থাকে কবিতা। আর নতুন থেকে আরও নতুন খোঁজার উন্মাদনা। শুধু আড্ডা বা অনুষ্ঠানই নয়, অতিমারি বা ইয়াসেও শহর, জেলা ও সমাজের জন্যও ঝাঁপিয়েছিল এই কবিতাপ্রেমীরা। আবার শারদোৎসবে ওদের আনন্দ বইয়ের স্টল দিয়েই। ওরা বলে ওঠে, ‘পুজোয় নতুন জামা পরুন, নতুন বই পড়ুন’।
সারা বছর কাজের সঙ্গে কবিতা, লিটল ম্যাগাজিন সামলে ভালবাসার টানেই তরুণ কবিরা আয়োজন করে ফেলে কোনও বিশেষ দিন উদযাপন, লিটারারি মিট, বিশ্ব কবিতা দিবস বা আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে অনুষ্ঠানের। কবিতা, গান, নাচ, আবৃত্তি, আঁকায় জমে ওঠে অনুষ্ঠান। জেলার বইমেলায় প্রতিদিন কবিতা, লিটল ম্যাগাজিন, গান আর আড্ডায় ভরে ওঠে মাঠ। হৈহৈ করে কবিতার উন্মাদনা নিয়েই বেঁচে আছে তরুণেরা। বই প্রকাশ বা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান সব কিছুতেই অভিনবত্বের ছোঁয়া।
অভিনন্দন, রাজেশ্বরী, সিদ্ধার্থ, সৌতিক, অচিন্ত্য, শুভদীপ, সৌমেন, আকাশ, পার্থ, মঞ্জু, জয়িতা বা সুজাতা, অশ্ব, আগমণী, রোমা, অরুণজীব, শায়েরী, মুস্তাফিজুর সকলেই প্রতি মাসে অপেক্ষা করে থাকে একটা আড্ডার জন্য। এক আড্ডাতেই ক্লান্তি দূর! সারা মাসের এনার্জি যে উঠে আসে এই কবিতার ভালবাসা থেকেই। আর এই ‘কবিতা পাগল’দের ঠিকানা? মেদিনীপুরের কফি হাউস। শহরের সরগম মোড়ের ‘জামাইদার চায়ের দোকান’। ওদের সংগঠন আইনের নয়, আবেগের। নাম, ‘মেদিনীপুরের তরুণ কবিরা’ (MEDINIPURER TARUN KOBIRA)।