নিজস্ব প্রতিনিধি: রাজ্যের শিক্ষাক্ষেত্রে বড়সড় দুর্নীতির অভিযোগ সামনে এসেছে এসএসসি(SSC) ও টেট(TET) দুর্নীতির কাণ্ডে। এমনকি ওই ঘটনায় ইডির’ হাতে গ্রেফতার হতে হয়েছে রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়(Partha Chattopadhay)কেও। তাঁর ঘনিষ্ঠজনদের বাড়ি থেকে উদ্ধার হয়েছে কোটি কোটি টাকা। সামনে এসেছে মন্ত্রী ও তাঁর আত্মীয়স্বজন এবং ঘনিষ্ঠদের কোটি কোটি টাকার বেআইনি সম্পত্তি। গোটা বিষয়টি এখনও তদন্ত করে দেখছে সিবিআই(CBI) ও ইডি(ED)। পাশাপাশি গ্রেফতার হয়েছেন রাজ্যের প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের প্রাক্তন সভাপতি ও বিধায়ক মানিক ভট্টাচার্য(Manik Bhattacharya)ও। তাঁর ক্ষেত্রেও পারিবারিক সম্পত্তি ও আয়ের পরিমাণ বড়সড় দুর্নীতির অঙ্গিত তুলে ধরেছে। মানিকের জায়গায় এখন প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের নয়া সভাপতি হয়েছেন গৌতম পাল। তিনি পর্ষদকে বেশ কিছু ক্ষেত্রে দুর্নীতির ঘটনায় তদন্তের নির্দেশ দিয়েছিলেন। সেই সব দুর্নীতির অন্যতম ছিল, রাজ্যের বেসরকারি ডিএলএড কলেজগুলির(D EL ED Collges) বিরুদ্ধে ওঠা প্রশিক্ষণের সার্টিফিকেট বিক্রি করার অভিযোগ। সেই দুর্নীতি কাণ্ডেই এবার রাজ্যের প্রায় ৫০০টি বেসরকারি ডিএলএড কলেজের অনুমোদনই বাতিল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে পর্ষদ। আর তার জেরে কয়েক হাজার পড়ুয়ার ভবিষ্যৎ নিয়েও প্রশ্ন উঠে গিয়েছে।
স্কুলে শিক্ষকতার চাকরি পেতে হলে নিয়ামানুসারে এখন ডিএলএড ডিগ্রি থাকা বাধ্যতামূলক। বিশেষ করে প্রাথমিক স্কুলে শিক্ষকতার চাকরি পেতে হলে নিয়োগের ন্যূনতম যোগ্যতাই দাঁড়িয়ে গিয়েছে ‘ডিপ্লোমা ইন এলিমেন্টারি এডুকেশন’ বা ডিএলএড ডিগ্রি। যদিও বিএড থাকলেও প্রাথমিক থেকে উচ্চমাধ্যমিক পর্যন্ত সব স্তরে শিক্ষক পদের জন্য আবেদন জানানো যায়। কিন্তু বিএলএড ডিগ্রি থাকলে প্রাথমিকে চাকরি পাওয়া সহজ। আর তার জেরেই রাজ্যের জেলায় জেলায় গজিয়ে উঠেছে প্রচুর বেসরকারি বিএড এবং ডিএলএড কলেজ। রাজ্যে এখন মোট স্বীকৃত ডিএলএড কলেজের সংখ্যা ৬৫৬। এর মধ্যে ৬০টি সরকারি, বাকি ৫৯৬টি বেসরকারি। এবার এই বেসরকারি ডিএলএড কলেজের বিরুদ্ধেই অভিযোগ উঠেছে অগুনতি অযোগ্য প্রার্থীকে প্রশিক্ষণের সার্টিফিকেট বিক্রি করার অভিযোগ। অর্থাৎ ওই সব প্রার্থীরা না ওই সব কলেজে ভর্তির যোগ্যতা রয়েছে না তারা কোনওদিন ওইসব কলেজে ভর্তি হয়েছে বা প্রশিক্ষণ নিয়েছে। কিন্তু মোটা টাকার বিনিময়ে তারা এখন ডিএলএড ডিগ্রি নয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। সাধারণত ডিএলএড কোর্স দুই বছরের। উচ্চমাধ্যমিক বা সমতুল পরীক্ষায় ৫০ শতাংশ নম্বর থাকলে এই কোর্সে ভর্তির জন্য আবেদন করা যায়। ভর্তির সর্বোচ্চ বয়স ৩৫ বছর। মেধা তালিকা অনুযায়ী ভর্তি নেওয়া হয় ওই সব কলেজে।
তদন্তে নেমে এই দুর্নীতির হাতে গরম প্রমাণ হাতে পেয়েছেন প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের আধিকারিকেরা। তার জেরেই শেষপর্যন্ত প্রায় ৫০০ বেসরআক্রি ডিএলএড কলেজের অনুমোদন বাতিল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ। আর তার জেরে অনিশ্চয়তার মুখে পড়ে গিয়েছে ওই সব বেসরকারি ডিএলএড কলেজে এখন পঠনপাঠন করা হাজার হাজার ছাত্রছাত্রীর ভবিষ্যৎ। সূত্রে জানা গিয়েছে এই পড়ুয়ায়দের কথা ভেবে ২০২২-’২৪ শিক্ষাবর্ষের জন্য কোর্স চালানোর অনুমতি বজায় রাখতে পারে পারে পর্ষদ। কিন্তু নতুন করে আর কোনও পড়ুয়া ওই সব ডিএলএড কলেজে যাতে ভর্তি হতে না পারে তার জন্য অনুমোদন বাতিলের পথে দ্রুত হাঁটা দিতে চলেছে পর্ষদ। কেননা পর্ষদের নিজস্ব তদন্তে উঠে এসেছে, ওই কলেজগুলিতে নিয়ম ভেঙে অফলাইনে ভর্তি নেওয়ার পাশাপাশি মোটা অর্থের বিনিময়ে ভর্তি নেওয়া হয়েছে। এমনকি টাকা নিয়ে পরীক্ষায় পাশ পর্যন্ত করিয়ে দেওয়া হয়েছে হাজার হাজার ভুয়ো প্রার্থীকে। নিয়ম মতো প্রতি ৩ বছর অন্তর বেসরকারি এই ডিএলএড কলেজগুলিকে পর্ষদ থেকে অনুমোদন নিতে হয়। অনুমতি লাগে ন্যাশনাল কাউন্সিল ফর টিচার এডুকেশনেরও। সেক্ষেত্রে পরিদর্শন বাধ্যতামূলক। কিন্তু বহু কলেজ সে সব ছাড়াই অনুমোদন পেয়েছে বলে প্রমাণও হাতে এসেছে পর্ষদের। প্রায় ৫৩০টি বেসরকারি ডিএলএড কলেজের অনুমোদন বাতিল হতে পারে বলেই জানা গিয়েছে।