নিজস্ব প্রতিনিধি: প্রেম যে ছিল সেটা কেউই অস্বীকার করছে না। কিন্তু সেই সম্পর্ক যে ভেঙেছিল সেটাও অস্বীকার করার উপায় নেই। খালি প্রশ্ন উঠছে মৃত্যুর কারণ নিয়ে, আত্মহত্যা নাকি খুন। নেপথ্যে উত্তর ২৪ পরগনা জেলার ব্যারাকপুরের(Barracpur) এক তরুণীর অস্বাভাবিক মৃত্যু। আর সেই মৃত্যুর পিছনে উঠে এসেছে বিতর্কিত, সমালোচিত, সমকামী(Same Sex) সম্পর্ক। দেশের আদালত যে সম্পর্ককে স্বাভাবিক ভাবেই গ্রহণ করেছে তাকে আজও গ্রহণ করতে পারেনি এ দেশের সমাজ। হয়তো সেই কারণেই এক সম্পর্ক ভেঙে এক তরুণী ভিন্ন পথে হাঁটা দিতেই অন্যজন বেছে নিল নিজেকে শেষ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত। নতুবা একজনের জীবনকে সমাজের সমালোচনার হাত থেকে বাঁচাতে অন্যজনকে শেষ করে দেওয়া হল। সত্যি কী তা তদন্ত স্বাপেক্ষ। তবে প্রশ্ন তুলেছে বছর কুড়ির চর্চিতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের(Charchita Banerjee) অস্বাভাবিক মৃত্যু।
উত্তর ২৪ পরগনা জেলার ব্যারাকপুরের পঞ্চাননতলায় বাড়ি চর্চিতার। তাঁর সঙ্গে ভালবাসার সম্পর্ক তৈরি হয়েছিল ব্যারাকপুর মহকুমার নোয়াপাড়া থানার ইছাপুর(Icchapur) আনন্দমঠ সি ব্লকের বাসিন্দা সমবয়সী অপর এক তরুণীর। ফেসবুকে আলাপের পর তাঁদের মধ্যে বন্ধুত্ব হয়েছিল বলে জানা গিয়েছে। কিন্তু সেই তরুণীর বাড়ি থেকেই শনিবার রাতে উদ্ধার করা হয় চর্চিতার ঝলসানো দেহ। দ্রুত তাঁকে ব্যারাকপুর বি এন বসু হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকেরা সেখানেই তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। প্রাথমিক দাবি, বান্ধবীর বাড়িতেই গায়ে আগুন দিয়ে আত্মঘাতী হয়েছেন চর্চিতা। প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, দরজা ভেঙে ঘরে ঢুকে চর্চিতাকে উদ্ধার করা হয়। যদিও চর্চিতার মায়ের দাবি, তাঁর মেয়েকে বাড়িতে ডেকে খুন করা হয়েছে। ঠিক কী জানিয়েছেন তিনি?
চর্চিতার মায়ের বক্তব্য, ‘আমার মেয়ে একটা মেয়েকে ভালবাসে। আমরা বোঝাতাম, মেয়ে-মেয়েতে ভালবাসা হয় না। আমার মেয়ে ইউটিউব-মোবাইল দেখিয়ে বলত, মা দেখো এ রকম লেসবিয়ান সম্পর্ক অনেক রয়েছে। আমি ওকে নিয়ে বাঁচতে চাই। আমাকে তোমরা মেনে নাও। আমরা তা-ই মেনে নিয়েছিলাম। মেয়েটি আমাদের বাড়িতে দু’বছর ধরে আসত। আমার মেয়ে ওকে অনেক জিনিসও কিনে দিয়েছে। আমি জিজ্ঞাসা করাতে ওই মেয়েটি বলেছিল, কাকিমা আমি আপনার মেয়েকে ভালবাসি! তবে কয়েক দিন ধরে ফোনে আমার মেয়েকে বলছিল, আমি এই জীবন চাই না। তুই আর আমার সঙ্গে কথা বলবি না। ওকে ডেকে নিয়ে গিয়ে খুন করিয়েছে। বিজয়, শুভ যারা ইছাপুরেই থাকে তাঁরা বলছিল, ৪৫ মিনিট ধরে আমার মেয়ের সঙ্গে ওই মা-মেয়ের কথা হয়েছে। এ নিয়ে আমি থানায় যাব।’
অন্যদিকে যে মেয়েটির সঙ্গে চর্চিতা সম্পর্কে জড়িয়েছিল তাঁর দাবি, ‘ফেসবুকে চর্চিতার সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়ে উঠেছিল। ও আমার বাড়ি আসত। আমিও ওর বাড়িতে যেতাম। তবে কিছু দিন হল আমাদের কথাবার্তা বন্ধ ছিল। শনিবার রাতে মায়ের সঙ্গে স্কাউট থেকে বাড়িতে ফিরে এসে দেখি, চর্চিতা দাঁড়িয়ে রয়েছে। আমাকে বলছিল, তুই শুধু কথা বল। তোর সঙ্গে কথা না বলে আমি থাকতে পারব না। তখন আমি কথা বলতে রাজি হয়নি। এর পর আমাকে আর মাকে বলে ও চলে যায়। চর্চিতা পড়াশোনা করত না। তবে বিউটিশিয়নের কোর্স করছিল। আমি কেরিয়ারে মন দিতেই চর্চিতার সঙ্গে কথা বন্ধ করেছিলাম।’ অন্যদিকে মেয়েটির মায়ের দাবি, ‘আমার মেয়ের সঙ্গে চর্চিতার অনেক দিন ধরে বন্ধুত্ব। তবে ওদের মধ্যে কিছু দিন হল কথাবার্তা বন্ধ রয়েছে। চর্চিতা আমার মেয়েকে বলত, আমার সঙ্গে কথা বল, না হলে আমি মরে যাব। ওকে বুঝিয়েছিলাম, আজ কথাবার্তা বন্ধ তো কী হয়েছে! পরে নিশ্চয়ই কথা বলবে। শনিবারও আমাদের বাড়ি এসে একই কথা বলছিল। তবে আমাদের বলে ও ফিরে যায়। আমি ঘরের কাজে ব্যস্ত ছিলাম। হঠাৎ চিৎকার শুনে দেখি, বাড়ি থেকে ধোঁয়া বার হচ্ছে। দরজা ভেঙে ঘরে ঢুকে ওর দেহ বার করা হয়।’
এলাকাবাসীর দাবি, দুইজনের মধ্যে যে ভালবাসার সম্পর্ক ছিল সেটা অনেকেই জানতে পেরেছিল। কিন্তু কেউ তা নিয়ে কোনওরকম মাথা ঘামায়নি। কেননা কিছুটা হলেও মানুষের মানসিকতা বদলেছে। কলকাতা লাগোয় এই এলেকায় মানুষ তাই এই ধরনের সম্পর্ক নিয়ে বেশি মাথা ঘামাতে চায়নি। কিন্তু চর্চিতা পুরুষদের প্রতি আকর্ষিত না হলেও তাঁর বান্ধবী সম্প্রতি এক পুরুষ বন্ধুর প্রতি আকর্ষিত হয়েছে। আর তার জেরেই সে সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে আসতে চাইছিল যা চর্চিতা মেনে নিতে পারেনি। তা থেকেই অঘটন কিছু ঘটিয়ে থাকতে পারে সে। তবে খুনের ঘটনা ঘটেছে বলে এলাকার মানুষজন মনে করছেন না।