নিজস্ব প্রতিনিধি: কথায় বলে কাজের বেলায় কাজী, কাজ ফুরালেই পাজি। সেই আপ্তবাক্য সত্যি হয়ে দাঁড়ালো ইডির(ED) হাতে গ্রেফতার হওয়া অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের(Arpita Mukhopadhay) মামার বাড়ির ক্ষেত্রে। যতদিন ভাগ্নীর হাত ধরে বাড়িতে মা লক্ষ্মীর আগমন ঘটছিল, বাড়ির ছেলেরা সব সরকারি চাকরি পাচ্ছিল ততদিন ভাগ্নী বলতে অজ্ঞান ছিলেন তাঁরা। এখন সেই ভাগ্নীরই মুণ্ডপাত করছেন তাঁরা। কেননা তাঁদের প্রাণে ভয় ঢুকেছে। বাড়ির ছেলেদের সরকারি চাকরি যাওয়ার ভয়, নিজেরা ইডির জিজ্ঞাসাবাদের মুখে পড়ার ভয়, বিষয়সম্পত্তির তালিকা সামনে আসার ভয় এবং তার থেকেও বেশি ভয় গ্রামবাসীর গণরোষের মুখে পড়ার ভয়। কার্যত এই শেষের ভয়ের জেরেই এবার অর্পিতার মামারবাড়ি পুলিশি নিরাপত্তা চাইছেন। যদিও গোটা বিষয়টি নিয়ে তাঁরা সংবাদমাধ্যমের কাছে মুখ খুলতে চাইছেন না। মুখে কুলুপ পুলিশেরও।
হুগলি(Hooghly) জেলার শ্রীরামপুর মহকুমার জাঙ্গিপাড়া(Jangipara) থানার দিলাকাশ পঞ্চায়েতের মথুরাবাটী(Mathurabati) গ্রামে অর্পিতার মামার বাড়ি। একটা সময় তাঁদের অবস্থা বেশ খারাপই ছিল, অন্তত স্থানীয় বাসিন্দাদের তেমনটাই দাবি। কিন্তু অর্পিতার হাত ধরে সেই টালির ছাউনি দেওয়া বাড়ি ভেঙে পাকা হয়েছে। বাড়ির ভেতরে বসেছে টাইলস, মার্বেল। একতলা বাড়িতে দু’টি ঘর, শৌচাগার এবং রান্নাঘর। গ্রামবাসীরা জানিয়েছেন, অর্পিতা নাকি নিজে দাঁড়িয়ে থেকে এই বাড়ি তৈরি করেছেন। আগের বাড়ি অর্পিতার মা মিনতি মুখোপাধ্যায়ের বাবার নামে ছিল। নতুন বাড়ি হওয়ার পরে তা নিয়ে আপত্তি তুলেছেন অর্পিতার অনান্য মামা-মাসিরা। কেননা পুরাতন বাড়িতে থাকতেন অর্পিতার মামা তপন চক্রবর্তী, তাঁর স্ত্রী ও ছেলে। ওই বাড়িতে ভাগ ছিল অর্পিতার মা, তপনবাবু সহ মোট ৮জনের। বাকি ৬জনকে কিছু না জানিয়ে পুরাতন বাড়ি ভেঙে নতুন করে করা হয়েছে। তা নিয়ে এখন সম্পর্কেও চিড় ধরেছিল। তা মেরামত করতে অনান্য মামা-মাসির ছেলেমেয়েদের সরকারি চাকরি নাকি করিয়ে দিয়েছে অর্পিতা। যদিও তারপরেও অর্পিতা তপনবাবুকে আলাদা করে দোতলা বাড়ি করে দিয়েছে, পুরাতন বাড়ির কাছেই। এখন সেখানেই থাকেন তাঁরা। এই দুই বাড়িই এখন ইডির নজরে। সেই সঙ্গে নজরে অর্পিতার মামা ও মাসির ছেলেমেয়েদের চাকরির বিষয়টিও।
তবে এই সব কিছুকে ছাড়িয়ে গিয়েছে গ্রামবাসীদের ক্ষোভ ও তা যে কোনও মুহুর্তে আছড়ে পড়ার ভয়। গ্রামবাসীদের অভিযোগ, অর্পিতা তাঁদের সঙ্গে অহরহ চূড়ান্ত দুর্ব্যবহার করতেন। যখন তখন ছোটখাটো বিষয়ে হুমকি ধমকি দিতেন। অর্পিতা গ্রামে এলে কার্যত গোটা গ্রাম তটস্থ থাকত। কেননা অর্পিতা মামারবাড়িতে বা পরের দিকে নিজের তৈরি করা বাড়িতে এলেই সেখানে থাকত কড়া পুলিশি প্রহরা। তখন সেখানে পান থেকে চুন খসলেই পুলিশি ধমকের মুখে পড়তে হত গ্রামবাসীকে। স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি এই পুলিশি প্রহরা আরও বেড়ে যেত পার্থ চট্টোপাধ্যায়(Partha Chattopadhay) সেখানে এলে। তখন আবার বেশ কিছু রাস্তায় যাতায়াতের ক্ষেত্রেও নিয়ন্ত্রণ করা হত। পার্থ-অর্পিতার গাড়ি যাতে অনায়াসে তাঁদের বাড়ি পর্যন্ত ঢুকতে পারে তার জন্য গ্রামে একটি সরকারি নলকূপ তুলে দেওয়া হয়েছিল। এমনকি এক গ্রামবাসীর বাড়িএ সামনের দিকের অংশ ভাঙার হুমকিও দিয়েছিল অর্পিতা। এমনকি হুমকি দিয়ে গ্রামে বেশ কিছু বাসিন্দার জমি দখল করা হয়েছে বলেও এখন অভিযোগ তুলেছেন গ্রামবাসীরা। আর এই সব ঘটনার জেরেই এখন যে কোনও দিন গ্রামবাসীর গণরোষের শিকার হতে পারেন বলে রীতিমত ভয়ে আছেন অর্পিতার মামার বাড়ির সদস্যরা। সরাসরি দাবি না জানালেও তাঁরা এখন পুলিশি নিরাপত্তা চাইছেন।