নিজস্ব প্রতিনিধি: অভাবের সংসারে ইচ্ছে থাকলেও ছোটবেলায় পড়াশোনা করতে পারেননি। সংসারে অন্ন জোগাতে বেরোতে হয়েছিল কাজের সন্ধানে। বড় হয়ে সেই তিনিই গড়ে তুললেন স্কুল। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার ঘাটাল এলাকার দাসপুরের বাসিন্দা শামসুল আলমের গল্পটা অনেক লড়াইয়ের কাহিনীতে ঠাসা।
আর্থিক সঙ্কটের জেরে ছোটবেলায় স্বর্নশিল্পের কাজে হাত লাগিয়েছিলেন শামসুল আলম। স্বর্ণশিল্পী হিসাবে যাত্রা শুরু করে তিনি বর্তমানে রাজ্যের অন্যতম স্বর্ণ ব্যবসায়ী। দেশজুড়ে তাঁর ব্যবসা। টাকার অভাব আর ছুঁতে পারে না তাঁকে। কিন্তু নিজের শৈশবের সেই স্বপ্ন ভঙ্গের যন্ত্রণাও ভুলতে পারেননি শামসুল। শামসুলের ইচ্ছে আর কেউ যেন টাকার অভাবে শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত না হয়। আর সেকারণেই তিনি প্রতিষ্ঠা করলেন ইংরেজি মাধ্যম স্কুল। নিজের এলাকায় স্কুল গড়ে সকলের নজর কেড়েছেন শামসুল আলম। তাঁর স্কুলে আর্থিকভাবে পিছিয়ে থাকাদের জন্য থাকবে বিশেষ ব্যবস্থা। আর প্রথম বছরে সকলেরই বিনামূল্যে শিক্ষার ব্যবস্থা থাকবে শামসুলের স্কুলে। ঘাটাল(ghatal) মহকুমার খাঞ্জাপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের দুবরাজপুরে তৈরি হয়েছে আন্তর্জাতিক মানের পাঁচ তলা বিশিষ্ট স্কুল। চলতি এপ্রিল মাসের ৭ তারিখ থেকে তাঁর স্কুলের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়। শামসুলের স্কুলের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের সময় উপস্থিত ছিলেন ঘাটালের মহকুমাশাসক সুমন বিশ্বাস। অনুষ্ঠানে এসেছিলেন এসডিপিও অগ্নীশ্বর চৌধুরী-সহ স্থানীয় বিশিষ্ঠ ব্যক্তিরা। মহকুমাশাসক সুমন বিশ্বাস স্কুলের উদ্বোধন করে বলেন, ”প্রশংসনীয় উদ্যোগ। এ রকম প্রত্যন্ত গ্রামে এমন স্কুল ভাবা যায় না। প্রথম বছর পড়ুয়াদের থেকে কোনও টাকা-পয়সা নেবে না বলে শুনলাম। গ্রামের ছেলে-মেয়েরা এই সুযোগ পেলে আগামী দিনে প্রতিযোগিতা মূলক পরীক্ষায় ভালো ফল করতে পারবে।” নিজের উদ্যোগে স্কুল গড়ে কেমন লাগছে শামসুল আলমের? তাঁর কথায়, ”আমার বাবা চটকলের মজদুর ছিলেন। ছোটবেলায় অর্থাভাবে লেখাপড়া করতে পারিনি। খাতা কিনে দেওয়ারও সামর্থ ছিল না তাঁদের। লেখাপড়া ছেড়ে স্বর্ণশিল্পী হতে হল। ধীরে ধীরে ব্যবসা শুরু করলাম। এখন ব্যবসা বেড়েছে। আমার অর্থনৈতিক অবস্থা অনেকটাই ভালো। আমার লেখাপড়ার স্বপ্নপূরণ না হলেও আমার স্কুলের হাত ধরে কচিকাঁচাদের জীবন সবুজে ভরে উঠবে, এটা ভাবতেই ভালো লাগছে।” স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা শামসুল আলম আরও বলেন, ”আমার স্বপ্ন ছিল এমন একটি স্কুল গড়ব, যে স্কুল একদিন রাজ্যের একটি অন্যতম ইংরেজি মাধ্যম স্কুল হিসেবে মাথা তুলে দাঁড়াবে। আমার মত কাউকে যাতে মাঝপথে পড়াশুনা ছাড়তে না হয়, সেই লক্ষ্যেই এই স্কুল।’
এই স্কুলে প্রথম বছর পড়ুয়াদের সম্পূর্ণ বিনামূল্যে পড়ানো হবে। এর পর দ্বিতীয় বছর থেকে ছাত্র-ছাত্রীদের অর্থনৈতিক অবস্থা অনুযায়ী তিনটি বিভাগে ভাগ করা হবে। যাদের পড়ার খরচের ব্যয়ভার বহন করার সামর্থ রয়েছে তাদের থেকে পড়াশোনার খরচ নেওয়া হবে। আর্থিক অবস্থা অনুযায়ী যারা সামান্য টাকা দিতে পারবে তাদেরকে নিয়ে একটি বিভাগ। আর যারা পড়াশোনার খরচ বহন করতে অক্ষম তাদের নিয়ে একটি বিভাগ। নিজের স্কুলের বিষয়ে শামসুল বলেন, ”ব্যবসার জন্য স্কুল তৈরি করিনি। তা হলে কসাইখানা খুলতাম।” স্কুলে প্রথামাফিক পড়াশোনার পাশাপাশি কম্পিউটার প্রশিক্ষণ ও চাকরির পরীক্ষার কোচিংয়ের ব্যবস্থা করা হবে বলে জানান তিনি। একইসঙ্গে দূরের ছাত্র-ছাত্রীর জন্য আগামীতে হস্টেল চালুর পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানান শামসুল।