নিজস্ব প্রতিনিধি: যিনি কথায় কথায় রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে মামলা ঠুকতে অভ্যস্ত তিনিই কী এখন রাজ্য সরকারের সঙ্গে যাবতীয় বিবাদ মিটিয়ে নিতে চাইছেন? নাকি সরকারের কাছাকাছি আসতে চাইছেন? প্রশ্নটা উঠেই গেল। কেননা যিনি চিঠি পাঠিয়েছেন তিনি যে সে কেউ নন। বাংলা তো বটেই সারা ভারতের বিখ্যাত মামলাবাজ পরিবেশবিদ। কথায় কথায় মামলা ঠুকতে যার জুড়ি মেলা ভার। আর তাঁর ঠোকা বেশির ভাগ মামলাই ২০১১ সালের পরবর্তী সময়ে রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে। এহেন মহাশয় হঠাৎ করে সুর বদলে ফেললেন কেন তা নিয়ে বিস্তর প্রশ্ন উঠেছে। অনেকেরই অভিমত, তৃণমূল জাতীয় স্তরের রাজনীতিতে দ্রুত উঠে আসছে এটা দেখেই তিনি এখন তৃণমূল বিরোধীতার সুর নরম করে বাংলার শাসক পক্ষের সঙ্গে বন্ধুত্ব করে ফেলতে চাইছেন। মুখ্যমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠজন হিসাবে চিহ্নিত হতে চাইছেন। তাই শান্তিনিকেতনের বিখ্যাত পৌষমেলার আয়োজনের জন্য রাজ্য সরকারকে দায়িত্ব নিতে বলে মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি পাঠিয়েছেন তিনি। তবে নিন্দুকদের দাবি, মেলা তো শিখণ্ডী মাত্র। আসল লক্ষ্য তো দোস্তি! নজরে সুভাষ দত্ত।
দেশের প্রথম সারির পরিবেশবিদদের মধ্যে অন্যতম হলেন সুভাষ দত্ত। কার্যত বাম জমানার সময় থেকেই রাজ্যের পাশাপাশি দেশের মধ্যেও তাঁর নাম ও কাজ ছড়িয়ে পড়তে শুরু করেছিল। বাম জমানার সময় থেকেই তিনি পরিবেশ সংক্রান্ত নানা বিষয় নিয়ে আদালতে মামলা করছেন। কিন্তু সেই সব মামলার জেরে কখনই এটা মনে হয়নি যে তাঁর সঙ্গে রাজ্য সরকারের যুদ্ধ চলছে। কিন্তু লক্ষ্যণীয় ভাবে ২০১১ সালের পর থেকে তাঁর মামলা করার দৌড় মারাত্মক আকারে বেড়ে যেতে শুরু করে। কার্যত কথায় কথায় পরিবেশের দোহাই দিয়ে তিনি কখনও হাইকোর্টে, কখনও সুপ্রিম কোর্টে আবার কখনও পরিবেশ আদালতে একের পর এক মামলা ঠোকেন। বেশ কিছু ক্ষেত্রে রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে থেকে আলোচনার টেবিলে ডাকা হয়েছিল সমস্যার সমাধানের জন্য। কিন্তু কোনওবারই তিনি সেভাবে সাড়া দেননি। কার্যত গাজোয়ারি, একগুঁয়েমি মনোভাব দেখিয়ে একের পর এক মামলা করে গিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের বিরুদ্ধে। তাঁর সেই সব কার্যাবলী দেখে রাজ্যের অনেকেরই মনে হয়েছে যে, পরিবেশ রক্ষা নয় সুভাষ দত্তের মূল লক্ষ্যই ছিল একের পর এক মামলা করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারকে নাজেহাল করা, তাঁদের ব্যতিব্যস্ত করে তোলা এবং সর্বাগ্রে যেনতেন প্রকারণে হোক রাজ্যের উন্নয়নমুখী সব কাজ আটকে দেওয়া।
সুভাষবাবুর এহেন কার্যকলাপের জেরে রাজ্যের উন্নয়নমুখী বেশ কিছু প্রকল্প ধাক্কা খেয়েছে। তাঁর নিজের ভাবমূর্তিতেও বিস্তর কালি ছিটকেছে। এখন তিনিই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চিঠি দিলেন পৌষ মেলার আয়োজন করার জন্য। চিঠিতে তিনি জানিয়েছেন, ‘বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সমস্ত বিধি মেনে অনুষ্ঠান আয়োজনে অক্ষম। তাই তাঁরা সমস্ত অনুষ্ঠান বন্ধ করে দিতে চাইছেন, যা রবীন্দ্র-সংস্কৃতি বিরোধী। এই অবস্থায় যদি রাজ্য সরকার এগিয়ে এসে পৌষমেলার আয়োজনের দায়িত্ব নেয় তাহলে রবীন্দ্র-ঐতিহ্য ও স্থানীয় মানুষজনের আবেগ রক্ষিত হওয়ার পাশাপাশি মেলার ওপরে নির্ভরশীল স্থানীয় শিল্পীরাও উপকৃত হবেন। এমনকি পৌষমেলার মাঠ পাওয়া না গেলে বোলপুর বা শান্তিনিকেতনের বিকল্প কোনও মাঠেও তা আয়োজন করা যেতে পারে।’ সুভাষবাবুর এহেন প্রস্তাবে আপত্তির কোনও থাকার কথা নয়। কিন্তু যে রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে তিনি একের পর এক মামলা ঠুকে এসেছেন তাঁর এহেন ইউটার্ন রাজ্যের কার্যত সব মহলকেই অবাক করে দিয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক তৃণমূল নেতার দাবি, ‘মেলাফেলা কিছু নয়। রাজ্যসভার সাংসদ হতে চাইছে। এখন তো আর কেউ পাত্তা দেয়না, মামলা মোকদ্দমাও বিশেষ কিছু আর তেমন করছেন না। পিছনে এতদিন ধরে যারা মদর দিচ্ছিল তাঁরা সম্ভবত এবার হাত গুটিয়ে নিচ্ছে। তাই এখন বন্ধুত্ব চাইছেন। দেখছেন তো জাতীয় স্তরের রাজনীতিতে তৃণমূলের গুরুত্ব আর প্রভাব কেমন বাড়ছে। নান রাজ্যের নেতারা তৃণমূলে কেমন কদর পাচ্ছেন। ওনারও কদর পাওয়ার ইচ্ছা হয়েছে। তাই ঘুরপথে বার্তা দিচ্ছেন।’