নিজস্ব প্রতিনিধি: কথায় বলে রাজা ডেকে আনতে বললে পেয়াদা ধরে বেঁধে আনে। সেটাই কী হচ্ছে বঙ্গ বিজেপিতে(Bengal BJP)। রাজনীতিতে হুমকি, ধমকি, চ্যালেঞ্জ ছোঁড়াছুঁড়ি থাকেই। কিন্তু দেশের প্রধানমন্ত্রী যা বলছেন তার দলের নেতারই সেই সম্পর্কে উলটো দাবি করার ঘটনা কী ঘটেছে কখনও? আগে না হলেও এখন ঘটেছে। সেটা ঘটিয়েছেন শুভেন্দু অধিকারী(Suvendu Adhikari)। পূর্ব মেদিনীপুর জেলার সদর শহর তমলুকের(Tamluk) দলের এক সভামঞ্চ থেকে দাঁড়িয়ে রাজ্য পুলিশ(Police) ও প্রশাসনের আইপিএস ও আইএএস আধিকারিকদের কার্যত হুমকি দিয়ে তিনি জানিয়েছেন, কেন্দ্র সরকার নাকি বিল আনছে ‘এক দেশ এক পুলিশ’ নীতির বাস্তবায়ন ঘটানোর জন্য। তাঁর দাবি, ‘ব্যাগ গুছিয়ে রাখুন, জানুয়ারি মাসে দেখা হবে। জানুয়ারি থেকেই বুঝতে পারবেন কেন্দ্রে একটা সরকার আছে। আর একজন প্রধানমন্ত্রী আছেন। দিল্লির নিয়ন্ত্রণেই থাকতে হবে পুলিশকে। সংসদে এক দেশ, এক পুলিশ বিল আনছে সরকার।’ শুভেন্দুর এই দাবি ঘিরে এখন বিতর্ক দেখা দিয়েছে প্রশাসনের অন্দরের পাশাপাশি বঙ্গ বিজেপির অন্দরেও।
আরও পড়ুন চুক্তিবদ্ধ শ্রমিকদের দিতেই হবে নূন্যতম মজুরি, পদক্ষেপ রাজ্যের
কেন বিতর্ক? প্রথম কথা দেশের সংবিধানে রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব দেওয়া হ্যেছে রাজ্যের হাতে। দিল্লি বাদে দেশের সব রাজ্যের পুলিশ বাহিনী সেই কারণেই রাজ্য সরকারের অধীনে থাকে। দিল্লি পুলিশ অবশ্য কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের অধীনে রয়েছে। যদিও দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল ও তাঁর দল আপ বার বার দিল্লির পুলিশকে দিল্লি রাজ্য সরকারের হাতে তুলে দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন। যদিও তাতে কান দেয়নি মোদি সরকার। তবে মোদি সরকার বা বিজেপির কোনও নেতাই এর আগে কোনওদিন দাবি করেননি যে দেশের সব রাজ্যের সব পুলিশকে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের অধীনে নিয়ে আসা হবে। স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ কেউই এই ধরনের দাবি কখনই প্রকাশ্যে করেননি। এখন শুভেন্দুর কথা যদি সত্যি হয় তাহলে সংসদের শীতকালীন অধিবেশনে যে ঝড় উঠতে চলেছে এই নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই। কেননা বিজেপি বিরোধী দলগুলি তা কখনই মুখ বুজে মেনে নেবে না। তার থেকেও বড় কথা এই আইন গায়ের জোরে, সংখ্যার জোরে যদি পাশ করানো হয় সংসদে তাহলেও তা ধাক্কা খেতে বাধ্য সুপ্রিম কোর্টে এই নিয়ে মামলা দায়ের হলে। শেষে না কৃষি ও কৃষক বিলের মতন অবস্থা হয়।
আরও পড়ুন ফেব্রুয়ারি নয়, মে মাসেই হবে পঞ্চায়েত নির্বাচন
দ্বিতীয়ত, শুভেন্দু কী আদৌ সত্যি কথা বলছেন? কেননা প্রধানমন্ত্রী চলতি বছরের নভেম্বর মাসে হরিয়ানায় সুরজকুণ্ডে আয়োজিত দেশের সবকটি রাজ্যের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও পুলিশ আধিকারিকদের চিন্তন শিবিরে কিন্তু সম্পূর্ণ ভিন্ন কথাই বলে এসেছেন। চলতি বছরের ২৮ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি(Narendra Modi) সুরজকুন্ডে দাঁড়িয়ে বলেছিলেন, ‘এক জাতি, এক ইউনিফর্ম। পুলিশের জন্য এক জাতি, এক ইউনিফর্ম একটি ধারণা মাত্র। আমি এটি আপনার ওপর চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছি না। শুধু একটা ভাবনা আপনাদের কাছে তুলে ধরছি মাত্র। এটি ঘটতে পারে, বা নাও ঘটতে পারে। ঘটলে ৫, ৫০ বা ১০০ বছরে ঘটতে পারে। সমস্ত রাজ্যের কেবল এটা নিয়ে ভাবা উচিত। আমি বিশ্বাস করি যে সারা দেশে পুলিশের পরিচয় একই হওয়া উচিত। যেমন একটি পোস্ট বক্স আছে যার একটি আলাদা পরিচয় আছে। পুলিশের ইউনিফর্ম সারা দেশে অভিন্নভাবে শনাক্ত করা হওয়া উচিত। বর্তমানে আমাদের দেশে এক জাতি, এক রেশন কার্ড রয়েছে। ঠিক এইভাবে, সমস্ত রাজ্যের একটি এক জাতি, এক অভিন্ন নীতির কথা ভাবা উচিত।’ এখানে কোথাও তো প্রধানমন্ত্রী এক দেশ এক পুলিশ কথাটি বলেননি। সারা দেশের পুলিশকে কেন্দ্রের অধীনে আনার কথাও বলেননি। দেশের ওপর জোর করে কোনও আইন চাপিয়ে দেওয়ার কথাও বলেননি। রাজ্যের অধিকারে হস্তক্ষেপ করার কথাও বলেননি। তাহলে শুভেন্দু অধিকারী কীভাবে বলছেন সংসদে এক দেশ এক পুলিশ আইন আনা হচ্ছে? প্রশ্ন উঠেছে তাহলে কী শুভেন্দু বিজেপি তথা মোদি সরকারের কোনও গোপন এজেন্ডা ভরা হাটে ফাঁস করে দিলেন? এই প্রশ্নই এখন ক্রমশ বিতর্ক হয়ে ছড়িয়ে পড়ছে। প্রশ্নের মুখে কেন্দ্র সরকার ও বিজেপি। প্রশ্নের মুখে শুভেন্দুও।