নিজস্ব প্রতিনিধি: সিঙ্গুরের(Singur) মাটিতে ন্যানো গাড়ি তৈরির কারখানা(Nano Car Manufacturing Factory) না হওয়ার জন্য ৩ সদস্যের Arbitral Tribunal টাটা মোটরস(Tata Motors) গোষ্ঠীকে ৭৬৫.৭৮ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে। ক্ষতিপূরণের ওই অঙ্ক ছাড়াও ২০১৬ সালের ১ সেপ্টেম্বর থেকে হিসেব করে ১১ শতাংশ সুদ মেটাত হবে। এছাড়াও মামলার খরচ বাবদ আরও ১ কোটি টাকাও দিতে হবে টাটা গোষ্ঠীকে। সব মিলিয়ে প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা দিতে হবে। সেই রায় সামনে আসার পর থেকেই উচ্চসিত মমতা ও তৃণমূল বিরোধীরা। সেই রায়ের স্রোতে গা ভাসিয়েছে এক শ্রেনীর গোদি মিডিয়াও। তাঁরা এমন একটা ভাব করছে যেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়(Mamata Banerjee) বলে আরও কোনও অস্তিত্ব নেই, তৃণমূল কংগ্রেস বলে কোনও কিছুর অস্তিত্ব নেই। তাঁরা ভুলে গিয়েছে দেশে এখনও হাইকোর্ট ও সুপ্রিম কোর্ট(Supreme Court) নামে দুটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। রাজ্য সরকারও তাই Arbitral Tribunal’র দেওয়া রায়কে চ্যালেঞ্জ করে উচ্চ আদালতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
২০১১ সালে রাজ্যের পালাবদলে বড় ভূমিকা ছিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সিঙ্গুর আন্দোলন। তার ১২ বছর পর ফের একবার করে সামনে উঠে এলো সিঙ্গুর ইস্যু। ২০১৬ সালে সিঙ্গুরে টাটাদের গাড়ি কারখানার জন্য ৯৯৭ একর জমি অধিগৃহীত হয়েছিল। কিন্তু প্রায় ৪০০ একর জমির কৃষকেরা সেই জোর করে জমি অধিগ্রহণের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান। সেই আন্দোলনকে পূর্ণ সমর্থন জানান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও তৃণমূল কংগ্রেস। পরবর্তীকালে মমতার টানা ২৬ দিনের অনশন আন্দোলন আজ ইতিহাস। সেই আন্দোলনের জেরে টাটারা বাধ্য হয় সিঙ্গুর ছেড়ে পাততাড়ি গোটাতে। পরে সিঙ্গুর নিয়ে সুপ্রিম কোর্ট জানিয়ে দেয় জোর করে এবং বেআইনি ভাবে জমি অধিগ্রহণ করা বামফ্রন্ট সরকারের বেআইনি পদক্ষেপ ছিল। শুধু তাই নয়, দেশের শীর্ষা আদালত রায় দিয়েছিল অধিগৃহীত হাজার একর জমিই ফিরিয়ে দিতে হবে কৃষকদের কাছে। সেই রায় মেনে অধিগ্রহণ হওয়া জমি ফিরিয়েও দেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের।
শুধু তাই নয়, পুনরায় ওই ক্ষতিগ্রস্থ জমিতে কৃষিকাজ চালু করার জন্য কোটি কোটি টাকা খরচ করে কৃষকদের পর্যাপ্ত সহায়তা প্রদানও করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। ন্যানো কারখানা তৈরির জন্য তৎকালীন বাম সরকারের সঙ্গে চুক্তি হয়েছিল টাটা গোষ্ঠীর। এখন রাজ্যের স্বাধীন দ্বায়িত্ব প্রাপ্ত অর্থ প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য জানিয়েছেন, ‘যতদূর বোঝা যাচ্ছে, সেই চুক্তিকে ভিত্তি করে টাটাদের এই ক্ষতিপূরণ দিতে বলেছে ট্রাইব্যুনাল। কিন্তু আমাদের কথা হল, জমি বেআইনি ভাবে অধিগ্রহণ হয়েছিল বলে সাফ রায় দিয়েছে শীর্ষ আদালত। সেই জমিতে নির্মাণও হয়েছিল। মানে সিপিএম সরকারের বেআইনি অধিগ্রহণের ভুল সিদ্ধান্তের জন্যই আজ এই ক্ষতিপূরণের রায়ের সম্মুখীন হতে হচ্ছে বর্তমান সরকারকে। ঠিক যেমন বাম সরকারের ঋণের বোঝা টানতে হচ্ছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারকে। ঠিক একই পরিস্থিতি এই ক্ষেত্রেও।’
ওয়াকিবহাল মহল বলছে, রাজ্যের পক্ষে রয়েছে ২০১৬ সালের সুপ্রিম কোর্টের রায়। যা বাম আমলে বেআইনি জমি অধিগ্রহণের অভিযোগকে সিলমোহর দিয়েছিল। এই সমস্ত যুক্তিকে হাতিয়ার করেই ট্রাইবুন্যালের রায়কে নবান্ন চ্যালেঞ্জ করবে। প্রথমে হাইকোর্ট ও পরে সুপ্রিম কোর্ট। মামলার প্রকৃত নিষ্পত্তি হতে এখনও অনেক দেরী আছে। তবে এই রায় ও বাম জমানার চুক্তি কার্যত বেআব্রু করে দিয়েছে সিপিআই(এম)-কে। এই চুক্তি কার্যত বলে দিচ্ছে, সিঙ্গুরে বামেরা মানুষের স্বার্থ দেখার কথা বললেও আদতে টাটাদের বাণিজ্যিক স্বার্থই দেখছিল। এখন সেই স্বার্থের পক্ষেই রায় দিয়েছে ট্র্যাইব্যুনাল। তবে সেটাই চূড়ান্ত নয়। এখন হাইকোর্ট ও সুপ্রিম কোর্ট বাকি আছে। গাধার মতো এখন যারা ট্রাইব্যুনালের রায় নিয়ে উদ্বাহু হয়ে নাচছেন তাঁদের আজ না হোক কাল সুপ্রিম কোর্টে গিয়ে ধাক্কা খেতেই হবে।