নিজস্ব প্রতিনিধি: সব ক্রিয়ারই বিপরীত প্রতিক্রিয়া থাকে। তাই রাজ্যপালকেও যে শাসক দলের তরফে আক্রমণ করা হবে, তেমনটাই ধরে নেওয়া হচ্ছিল। সেই হিসাব মিলিয়ে শুক্র সকালে রাজ্যের শাসক দলের মুখপত্রে ধারালো শব্দবন্ধে প্রশ্ন তুলে আক্রমণ শানানো হয়েছে রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়কে। ২৫ তারিখ রাজ্য বিধানসভা ভবন চত্বরে থাকা বাবাসাহেব আম্বেদকারের মূর্তিতে শ্রদ্ধা জানানোর আর্জি নিয়ে আসা রাজ্যপাল যে আদতে রাজ্য সরকার, রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী, বিধানসভার স্পিকার ও রাজ্যের শাসক দলকেই মিডিয়ার মাধ্যমে আক্রমণ শানবেন সেটাই কেউ জানতো না। কিন্তু সেই ঘটনার পরে যে রাজ্য সরকার বা রাজ্যের শাসক দল যে ছেড়ে কথা বলবে না সেটাই ধরে নেওয়া হচ্ছিল। এবার সেই ধারনা সত্যি করে জাগো বাংলায় প্রশ্ন তোলা হল, ‘নতুন করে নীতিশাস্ত্র তৈরি করার আপনি কে?’
শুক্রবার রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসের মুখপত্র ‘জাগো বাংলা-তে রাজ্যপালকে আক্রমণ শানিয়ে সম্পাকিয় স্তম্ভে ‘আপনি কে?’ শীর্ষক নিবন্ধে লেখা হয়েছে, ‘এমন রাজ্যপালের দেখা ভূ-ভারতেও মিলবে না। স্বাধীনতার পরে বাংলায় অনেক রাজ্যপাল এসেছেন, বিতর্কেও জড়িয়েছেন। কিন্তু তাঁরা কখনই সাংবিধানিক গন্ডি লঙ্ঘণ করেননি। ভুলেও যাননি তাঁদের পদটা আসলে আলঙ্কারিক। তাঁরা সাংবিধানিকভাবে শীর্ষে থাকলেও আসলে ক্ষমতা কিন্তু রয়েছে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের হাতেই। তাঁদের সিদ্ধান্তকে তিনি সাংবিধানিক রূপ দেন। কিন্তু রাজ্যের বর্তমান রাজ্যপাল মনে করেন, তিনিই বোধহয় রাজ্যের শেষকথা। আইনজীবী বলে কথায় কথায় সংবিধানের ধারা উল্লেখ করেন। কিন্তু কখনওই বলেন না ১৯৪৯ সালে লেখা সংবিধানের ১৬৩ ধারায় কী বলা হয়েছে। এই রাজ্যপাল পদটি অটুট রাখা নিয়ে বারবার প্রশ্ন উঠছে। এই পদটি রাজনীতিবিদদের রিটায়ারমেন্ট বেনিফিট। সাধারণভাবে নির্বাচিত সরকারের সঙ্গে কেউই সংঘর্ষে যেতে চান না। কিন্তু বিজেপির এই প্রাক্তন মন্ত্রী আসলে বাংলার সরকারকে ব্যতিব্যস্ত করার হোমওয়ার্ক নিয়ে এসেছেন অমিত শাহদের কাছ থেকে। ভুলে যান মানুষের কাছে জবাবদিহি তাঁকে করতে হবে না, করতে হবে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের। যদি তাঁরা ভুলও করেন, জনগনই তাঁদের শিক্ষা দেবেন। নতুন নীতিশাস্ত্র তৈরি করার আপনি কে?’
‘জাগো বাংলা’-তে শুক্রবার রাজ্যপালের প্রতি এই আক্রমণ করেই থামছে না রাজ্যের শাসক দল। সম্ভবত খুব শীঘ্রই রাজ্য বিধানসভায় রাজ্যপালকে অপসারণ নিয়ে স্বতন্ত্র প্রস্তাব আনতে পারেন তাঁরা। একই প্রস্তাব আনা হবে লোকসভাতেও। যদিও সেখানে এই প্রস্তাব আনতে বাধা দেবে বিজেপি ও স্পিকার। সেই হিসাবেই মনে করা হচ্ছে রাজ্যপালের সঙ্গে রাজ্য সরকারের এই বিবাদ এবার আস্তে আস্তে সাংবিধানিক বিবাদে পরিণত হতে চলেছে যার মীমাংসা হয়তো কেন্দ্রের শাসকদলের পরিবর্তন কিংবা শীর্ষ আদালতের কোনও রায়ের মাধ্যমেই মিটতে চলেছে। কিন্তু কবে সেই বিবাদ মিটবে সেই ইঙ্গিত এখনই মেলার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে।