নিজস্ব প্রতিনিধি: কলকাতার ক্ষেত্রে যা প্রয়োগ করা হয়নি সেটাই কিন্তু প্রয়োগ করা হল রাজ্যের ১০৮টি পুরসভার ক্ষেত্রে। এক ব্যক্তি এক পদ, এই নীতি কলকাতা পুরসভার প্রার্থী নির্ধারণের ক্ষেত্রে প্রয়োগ করেনি তৃণমূল। কিন্তু এবারে রাজ্যের ১০৮টি পুরসভার প্রার্থী নির্ধারণের ক্ষেত্রে তা বেশ কঠোর ভাবেই প্রয়োগ করল তৃণমূল। আর সেই কারনেই এই ১০৮টি পুরসভায় দলের তরফে কোনও ওয়ার্ডেই কোনও বিধায়ককে প্রার্থী করেনি রাজ্যের শাসক দল। শুধু এটাই নয়, একই ব্যক্তির একাধিক সদস্যকেও এবারে দলের তরফে টিকিট দেওয়া হচ্ছে না। পরিবর্তে তুলে আনা হচ্ছে নতুন মুখদের, তরুণ প্রজন্মকে। শুক্রবার এক সাংবাদিক বৈঠকে রাজ্যের ১০৮টি পুরসভার জন্য দলীয় প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে এই তথ্য তুলে ধরেন রাজ্যের শাসক দলের মহাসচিব তথা রাজ্যের শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়।
কলকাতা পুরনিগমের নির্বাচনের প্রাক্কালেই তৃণমূলের অন্দরে এক ব্যক্তি এক পদ নীতি অনুসৃত হওয়ার কথা শোনা গিয়েছিল। এমনকি এটাও শোনা গিয়েছিল যে প্রশান্ত কিশোরের সংস্থা আইপ্যাক থেকে একই পরিবারের একাধিক সদস্যকে প্রার্থী না করার কথাও নাকি তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্বকে জানানো হয়েছিল। এমনকি সেখানে একথাও বলা হয়েছিল কোনও মন্ত্রী, সাংসদ বা বিধায়ককে যেন কলকাতা পুরসভার নির্বাচনে প্রার্থী না করা হয়। যদিও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এইসব প্রস্তাব বাতিল করে দেন। কিন্তু এখন এই ১০৮টি পুরসভার প্রার্থী পদের ক্ষেত্রে দেখা গেল সেই সব সুপারিশ মেনে নেওয়া হয়েছে। এই বিষয়ে এদিন পার্থ চট্টোপাধ্যায় সাংবাদিক বৈঠকে জানান, ‘সুব্রত বক্সি, চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য, ফিরহাদ হাকিম সহ দলের শীর্ষ নেতৃত্ব খতিয়ে দেখেই প্রার্থী তালিকা তৈরি করেছে। দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও দীর্ঘ সময় ধরে এই তালিকা দেখেছেন। পাশাপাশি, প্রশান্ত কিশোরের সংস্থা আইপ্যাকের সঙ্গেও তালিকা নিয়ে কথা হয়েছে। সব শেষে তালিকা পাটানো হয়েছিল তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে। তিনিই চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছেন।’
পাশাপাশি তিনি আরও জানিয়েছেন, ‘সবাইকে টিকিট দেওয়া সম্ভব নয়। ক্লাসে একজনই প্রথম হয়, সবাই হয় না। তবে সবাইকে নিয়ে চলতে হবে। যাঁরা টিকিট পাননি তাঁদের মন তো খারাপ হবেই। তবে এমন কিছু যেন না করা হয়, যাতে দলের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়। কোনও প্ররোচনায় পা দেবেন না। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাবমূর্তি অক্ষুণ্ণ রেখে তাঁর হাত আরও শক্ত করতে হবে। নতুনদের সুযোগ দেওয়া হয়েছে এবারের পুরসভা নির্বাচনে। নবীন-প্রবীনের সম্বন্বয়ে তালিকা তৈরি করা হয়েছে। কোনও বিধায়ক নেই প্রার্থী তালিকায়। একই পরিবারের একাধিক ব্যক্তিকেও সুযোগ দেওয়া হয়নি। যারা এবারে টিকিট পেলেন না, তাঁরা সকলেই দলে রয়েছেন। দলের জন্য কাজ করবেন। পরবর্তীতে আবারও সুযোগ আসবে। এবার কোনও বিধায়ককেও টিকিট দেওয়া হয়নি।’
তৃণমূলের এক ব্যক্তি এক পদ নীতি গ্রহণের জন্য এবারে অনেক বিধায়ক মন্ত্রীই আর পুরনির্বাচনে প্রার্থী হতে পারছেন না। তাঁদের মধ্যে যেমন থাকছেন রাজ্যের দমকল মন্ত্রী সুজিত বসু, রাজ্যের খাদ্য মন্ত্রী রথীন ঘোষ তেমনি রয়েছেন চাঁচলের বিধায়ক নীহার ঘোষ, চুঁচুড়ার বিধায়ক অসিত মজুমদার, কাটোয়ার বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়, বর্ধমানের বিধায়ক খোকন দাস প্রমুখরা।