নিজস্ব প্রতিনিধি: বিনা যুদ্ধেই বাংলার দুই পুরসভায় ক্ষমতা দখল করে নিল রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস। একটি পুরসভা দক্ষিণ ২৪ পরগনায়, অন্যটি বীরভূমে। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সংসদীয় নির্বাচনী কেন্দ্র ডায়মণ্ডহারবারের মধ্যে থাকা বজবজ পুরসভা যেমন এদিন তৃণমূলের দখলে এসেছে ঠিক তেমনি অনুব্রত মণ্ডলের গড় হিসাবে পরিচিত বীরভূম জেলার সাঁইথিয়া পুরসভাও এদিন তৃণমূলের দখলে এসেছে। এই ঘটনাই কার্যত দেখিয়ে দিল বাংলায় বিরোধীরা কতটা ছন্নছাড়া হয়ে পড়েছে ও তাঁরা আমজনতা থেকে ঠিক কতটা জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।
দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার কলকাতা ঘেঁষে থাকা বজবজ পুরসভায় রয়েছে ২০টি ওয়ার্ড। বোর্ড দখলের জন্য প্রয়োজন ছিল ১১জন কাউন্সিলরের সমর্থন। আবার সাঁইথিয়া পুরসভায় রয়েছে ১৬টি ওয়ার্ড। সেখানে বোর্ড গড়তে দরকার ৯জন কাউন্সিলরের সমর্থন। এই দুই পুরসভাতেই আগামী ২৭ ফেব্রুয়ারি ভোটগ্রহণ করা হবে। ওইদিন রাজ্যের আরও ১০৬টি পুরসভায় ভোটগ্রহণ করা হবে। এই ১০৮টি পুরসভায় মনোনয়ন জমা দেওয়ার জন্য বুধবারই ছিল শেষ দিন। আর তখনই দেখা যায় বজবজ পুরসভায় ১২টি ওয়ার্ডে তৃণমূল ভিন্ন আর কোনও রাজনৈতিক দল প্রার্থী দিতে পারেনি। যার অর্থ ওই ১২টি ওয়ার্ডে তৃণমূলের প্রার্থীরাই জয়। সেই হিসাবে বিনা যুদ্ধে ওই পুরসভা তৃণমূলের দখলে চলে এল। তবে ২৭ তারিখ ওই পুরসভায় বাকি ৮টি ওয়ার্ডে ভোটগ্রহণ করা হবে। দেখার বিষয় এটাই যে ওই ৮টি ওয়ার্ডে কারা জেতে। যদি সেখানেও সব ওয়ার্ডে তৃণমূল জয়ী হয় তাহলে বজবজ পুরসভা কার্যত বিরোধীহীন পুরসভা হিসাবে উঠে আসবে। আবার সাঁইথিয়ার ক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে, ১৩টি ওয়ার্ডে তৃণমূল ভিন্ন আর কেউ প্রার্থী দেয়নি। তাই ওই ১৩টি ওয়ার্ডে তৃণমূলের প্রার্থীদের জয়ী হিসাবে ঘোষণা করা হয়েছে। সেখানে বাকি থাকা মাত্র ৩টি ওয়ার্ডে বামেদের প্রার্থীরা রয়েছেন। তাই আগামী ২৭ ফেব্রুয়ারি ওই ৩টি ওয়ার্ডেই শুধুমাত্র ভোটগ্রহণ করা হবে। তাই নজর থাকবে এই পুরসভার দিকেও যে সেখানেও তৃণমূল বিরোধীহীন পুরবোর্ড গড়ে কিনা তা দেখার জন্য।
বজবজ পুরসভা একসময় বামেদের দুর্গ ছিল। আবার সাঁইথিয়া ছিল কংগ্রেসের ঘাঁটি। সেই বাম কংগ্রেস একুশের বিধানসভা নির্বাচনে জোট গড়েও নিজেদের বিলুপ্তিকরণ ঠেকাতে পারেনি। বাংলার বিধানসভা স্বাধীনতার পরে এই প্রথম বাম ও কংগ্রেস শূন্য। স্বাভাবিক ভাবেই এক সময়কার এই বামদুর্গ ও কংগ্রেস ঘাঁটিতে লালপার্টি ও কাটা হাত কীরকমের লড়াই তৃণমূলের সামনে ছুঁড়ে দেব সেই দিকে অনেকেই তাকিয়ে ছিলেন। কিন্তু এদিনের ঘটনা দেখিয়ে দিল, দুই পুরসভাতেই কার্যত ভ্যানিশ হয়ে গিয়েছে বাংলায় দীর্ঘদিন ধরে রাজত্ব করা এই দুই জাতীয় দল। শেষ আশা ছিল বিজেপিকে ঘিরে, যদি তাঁরা একটা ভদ্রস্থ লড়াইয়ের ছবি দুই পুরসভায় তুলে ধরতে পারে। কিন্তু দেখা গেল, সেই লড়াই লড়তেও ব্যর্থ নরেন্দ্র মোদি, অমিত শাহ আর জে পি নাড্ডার দল। দুই পুরসভার ঘটনা কার্যত চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল বিজেপি এই দুই পুরসভাতেই কতটা জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে যে গুটিকয় আসনেও তাঁরা প্রার্থী দিতে পারল না।