নিজস্ব প্রতিনিধি: দেশের রেলমন্ত্রী থাকাকালীন সময়ে তারকেশ্বর(Tarakeshwar) থেকে বিষ্ণুপুর(Bishnupur) পর্যন্ত রেলপ্রকল্পের ঘোষণা করেছিলেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়(Mamata Banerjee)। সেই প্রকল্পের কাজ কার্যত অর্ধেক হয়ে পড়ে রয়েছে। নেপথ্যে ভবাদিঘীর আন্দোলন। যদিও গোঘাট(Goghat) পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণ সমাপ্ত হয়ে যাওয়ায় কোভিডের আগে থেকেই হাওড়া থেকে শেওড়াফুলি, তারকেশ্বর, আরামবাগ হয়ে গোঘাট পর্যন্ত ট্রেন চলাচল শুরু হয়ে গিয়েছে। কিন্তু ভবাদিঘী ছাড়াও বিষ্ণুপুর থেকে কামারপুকুর(Kamarpukur) পর্যন্ত অংশেও কাজ আটকে ছিল জমিজটের কারণে। ভবাদিঘী সমস্যার কবে সমাধান হবে সেই বিষয় নিয়ে বেশি মাথা না ঘামিয়ে এবার বিষ্ণুপুর থেকে কামারপুকুর পর্যন্ত অংশে যাতে প্রকল্পের কাজ এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যায় সেই বিষয়ে নজর দিল রেল। উল্লেখ্য, গোঘাট ও কামারপুকুরের মধ্যবর্তী অংশেই রয়েছে ভবাদিঘীর অবস্থান। আর এই অংশের কাজই থমকে রয়েছে।
বিষ্ণুপুর ও কামারপুকুরের মধ্যবর্তী অংশে বেশ কিছু জায়গায় জমি অধিগ্রহণ নিয়ে কৃষকদের মধ্যে অসন্তোষ ছিল। মূলত সেই অসন্তোষ দানা বেঁধেছিল জমির দাম নিয়ে। কামারপুকুর থেকে বিষ্ণুপুরের দিকে যেতে গেলে পড়বে জয়রামবাটি। সেই জয়রামবাটির কাছে গোঘাট-২ ব্লকের অমরপুর এলাকায় জমির দাম নিয়ে আপত্তি ছিল কৃষকদের মধ্যে। যার জেরে জয়রামবাটি থেকে কামারপুকুর অবশি রেলের লাইন পাতা যাচ্ছিল না। শনিবার এই বিক্ষুব্ধ কৃষকদের নিয়ে বৈঠক হয় আরামবাগ মহকুমাশাসকের কার্যালয়ে। সেখানে রাজ্য সরকারের তরফে উপস্থিত ছিলেন গোঘাটের প্রাক্তন তৃণমূল বিধায়ক মানস মজুমদার, স্থানীয় বিডিও দেবাশিস মণ্ডল, পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি অনিমা কাটারি ও কামারপুকুর গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান তপন মণ্ডল। ভার্চুয়াল ভাবে উপস্থিত ছিলেন রেলের আধিকারিক ও জেলাশাসক। সেখানেই ঠিক হয় রেলের জন্য অধিগৃহীত জমির দাম বাবদ কৃষকদের কাঠা প্রতি ৭৫ হাজার টাকা দেওয়া হবে।
এই বিষয়ে এদিন মানস মজুমদার বলেন, ‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রেলমন্ত্রী থাকাকালীন বিষ্ণুপুর থেকে তারকেশ্বর পর্যন্ত যে রেললাইনের সূচনা করেছিলেন, তা জয়রামবাটি-কামারপুকুরে এসে থমকে যায় পশ্চিম অমরপুর বলে একটি গ্রামে৷ ২০১২ সালে রেলের তরফ থেকে জমি অধিগ্রহণের জন্য গোঘাটের পশ্চিম অমরপুরের চাষিদের নোটিশ দেওয়া হয়। কাটা প্রতি ১২ হাজার টাকা দেওয়া হবে বলেও চাষিদের জানিয়ে দেওয়া হয়। তারপরই চাষিরা ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলন শুরু করেন। আর তাতেই রেল লাইনের কাজ আটকে যায়। এদিন প্রশাসনিক আধিকারিকরা চাষিদের সঙ্গে বৈঠক করেন৷ সেখানে জেলা শাসক চাষিদের দাবি মেনে নেন৷ তিনি জানিয়েছেন জল বা নিকাশি সংক্রান্ত সমস্যা রেলের তরফে দেখা হবে আর রাজ্য সরকারও সেখানে নজর রাখবে। আশা করি এবার কামারপুকুর থেকে জয়রামবাটি পর্যন্ত রেল লাইন সম্প্রসারণের কাজ শুরু হবে৷’
কিন্তু এরপরেও প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে ভবাদিঘীর বিষয়টি কীভাবে নিষ্পত্তি হবে। সেখানে সমস্যার সমাধান না হলে তারকেশ্বর থেকে বিষ্ণুপুর পর্যন্ত মূল প্রকল্পের কাজও তো শেষ হবে না। এই প্রকল্পের নির্মাণ সম্পূর্ণ হলে পুরুলিয়া ও বাঁকুড়া জেলার মানুষেরা খুব কম সময়ে কলকাতায় শুধু আসতে পারবেন তাই নয়, হাওড়া থেকে তারকেশ্বর, আরামবাগ, বিষ্ণুপুর ও আদ্রা হয়ে আসানসোল এবং পুরুলিয়া যাওয়ার বিকল্প পথ খুলে যাবে। পাওয়া যাবে নতুন ট্রেন রুট। মিলবে নতুন ট্রেনও। কিন্তু এইসবই পাওয়া যাবে ভবাদিঘীর সমস্যার সমাধান হলে।