এই মুহূর্তে

WEB Ad Valentine 3

WEB Ad_Valentine

বিজেপির ইন্ধনে পাঁচামিতে আন্দোলনের হুমকি দিল মোড়লরা

নিজস্ব প্রতিনিধি: বীরভূম জেলার সিউড়ি সদর মহকুমার মহম্মদবাজার ব্লকের দেউচা-পাঁচামি এলাকায় প্রস্তাবিত কয়লা খনি প্রকল্পের জন্য পুনর্বাসন প্যাকেজ আগেই ঘোষণা করেছে রাজ্য সরকার। রাজ্যের তরফে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজ্য বিধানসভায় দাঁড়িয়ে সেই প্যাকেজ ঘোষণা করেছেন। জেলা প্রশাসনের তরফেও সেই প্যাকেজ বাংলা ও হিন্দি ভাষার পাশাপাশি অলচিকি লিপিতে ছাপিয়ে দেউচা-পাঁচামি এলাকায় লিফলেটা আকারে ছড়ানোর কাজও শুরু হয়ে গিয়েছে। সেখানকার মানুষজন যাতে রাজ্য সরকারের এই ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসনের প্যাকেজ সম্পর্কে জানতে পারে তার জন্যই জেলা প্রশাসন এই পদক্ষেপ নিচ্ছে। কিন্তু গোটা বিষয়টি আটকে দিতে এবার কোমর বেঁধে নেমে পড়েছে রাজ্য বিজেপি নেতৃত্ব। তাঁরা এখন দেউচা-পাঁচামি এলাকার আদিবাসীদের ভুল বুঝিয়ে এই প্রকল্পের কাজ আটকে দিতে চাইছে। বৃহস্পতিবার তাঁদেরই ইন্ধনে সেখানকার গ্রাম মোড়লরা বড়সড় সভা করে এই প্রকল্পের বিরোধীতায় সরব হলেন।

বৃহস্পতিবার, দেউচা-পাঁচামি এলাকার হরিণশিঙার মাঠে মাঝি হারাম সংগঠনের তরফে এদিন এক জমায়েতের ডাক দেওয়া হয়। সেই জমায়েতের আগে নিজেদের মধ্যে একটি বৈঠকও করেন স্থানীয় মোড়লরা। তারপর তাঁরাই জমায়েতের সভা থেকে জানিয়ে দেন, ওই এলাকায় তাঁরা রাজ্য সরকারকে কয়লা খনি গড়তে দেবেন না। ওই জমায়েত থেকে মুখ্যমন্ত্রীর নাম না নিয়েই মোড়লরা জানান, ‘আজকে আমরা আশপাশের গ্রামগুলির আদিবাসীরা জড়ো হয়েছি। আমরা কয়লা খনির বিরুদ্ধে গণ আন্দোলনের প্রচেষ্টা নিয়ে এগোচ্ছি। সরকার এখানকার মানুষের সঙ্গে কোনও আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়নি। আমরা কী চাইছি তা জানতে চায়নি। আমরা উচ্ছেদের আশঙ্কা করেছি। আমরা জমি-জায়গা ছাড়তে রাজি নই। আমরা কয়লা খনি চাই না। ওঁর প্যাকেজ ওঁর কাছেই থাক।’ দেওয়ানগঞ্জ, হরিণশিঙা এবং নিশ্চিন্তপুর মৌজার খান পাঁচেক গ্রাম নিয়ে এই প্রকল্প শুরু হওয়ার কথা। এদিন ওই সব গ্রামেরই প্রায় ২৫০ জন আদিবাসী নেতা মাঝি হারামের ডাকে বৈঠকে বসে এই প্রকল্পের বিরোধীতার সিদ্ধান্ত নেন।

এদিনের সভায় যোগ দেওয়া ওই সব গ্রামের বাসিন্দারা কার্যত মোড়লদের সিদ্ধান্ত জানার পরে সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, ‘সরকার আমাদের সঙ্গে কোনওরকম আলোচনা করেনি। তার আগেই সরকার সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়েছে। আমরা জমি দিতে রাজি নয়। কয়লাপ্রকল্প আমরা চাই না। আমরা আমাদের জমি চাই। এখন বাড়িঘর চলে গেলে আমরা কোথায় যাব!’ তবে আদিবাসী গাঁওতার নেতা সুনীল সোরেন জানিয়েছেন, ‘বিজেপি এদের ভুল বোঝাচ্ছে। তাঁরাই আদিবাসীদের মধ্যে ভয় ভীতি ছড়াচ্ছে। প্রশাসন গ্রামে এসে সরাসরি কথা বলুক। তাহলে সমস্যা মিটতে পারে। কারণ গ্রামবাসীরা সংশয়ে রয়েছে। যে প্যাকেজ দেওয়া হয়েছে তা আমাদের বিশেষ কিছু পছন্দ হয়নি। যেমন উদাহরণ হিসেবে বলা যেতে পারে, টিউবয়েলের জন্য ৫হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়া অত্যন্ত কম। স্টেটল্যান্ডে বাড়ি রয়েছে যাঁদের, তাঁদের আশঙ্কা বেশি।’ সুনীলের এই কথাতেই পরিষ্কার আদিবাসীদের এহেন অবস্থান ও সিদ্ধান্তের জন্য এখন দেউচা-পাঁচামির কয়লাখনি প্রকল্প নিয়ে রাজ্য সরকারকে এবার কিছুটা হলেও চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হতে চলেছে।

একই সঙ্গে আদিবাসীদের পিছনে যে বিজেপির সমর্থন আছে তার প্রমাণ হিসাবে রাজ্য বিজেপির নেতা জয়প্রকাশ মজুমদার এদিন জানিয়েছেন, ‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জমি আন্দোলনের মধ্যে দিয়েই ক্ষমতায় এসেছিলেন। সিঙ্গুরে তখন তিনি বলেছিলেন, জমি ছাড়া যাবে না। সেখানে আজ যখন দেউচা পাঁচামি প্রকল্পের কথা উঠছে তখন আদিবাসীদের বোঝাতে ব্যর্থ সরকার। সেদিক থেকে প্রশাসনের আরও বেশি ভাবনাচিন্তা করা উচিত।’ তবে বীরভূম জেলা প্রশাসনের আশ্বাস আলোচনার মাধ্যমেই সব সমস্যার সমাধান হবে। জেলা প্রশাসনের দাবি, দেউচা পাঁচামি প্রকল্প চালু হলে মূলত খনি এলাকায় কয়লা উত্তোলনের কাজ শুরু হবে। ফলে গোটা এলাকার ভৌগোলিক ও সামাজিক পরিবেশটাই বদলে যাবে। ঝাড়খণ্ডের প্রায় গা-ঘেঁষে থাকা এই বিরাট খনি এলাকায় সরকার যে প্রকল্পের কথা ঘোষণা করেছে তাতে করে এই এলাকা আগামী দিনে আসানসোল-রানিগঞ্জের মতো এক বিরাট শিল্পতালুকে পরিণত হতে চলেছে। বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম কয়লা খনি সেখানেই গড়ে উঠবে।

সরকারি প্যাকেজে স্পষ্ট বলা হয়েছে, ১৭ জন খাদান মালিক বাড়ির দাম ও ক্ষতিপূরণ পাবেন। ত্রাণ ও পুনর্বাসন প্যাকেজের অধীনে বাড়ি দেওয়া হবে সংশ্লিষ্ট এলাকার বাসিন্দাদের। ওই এলাকায় থাকা বাসিন্দা, যাঁদের বাড়ি সহ জমি রয়েছে, তাঁরা পাবেন ১০ থেকে ১৩ লক্ষ টাকা। এছাড়া অন্যান্য সুবিধা দিতে আরও পাঁচ লক্ষ টাকা দেওয়া হবে। এছাড়া বাড়ি বা জমি হারানো অথবা বর্গদাররা পরিবার পিছু জুনিয়র পুলিশ কনস্টেবল পদমর্যাদার চাকরি পাবেন। সব মিলিয়ে এই ত্রাণ পুনর্বাসন প্যাকেজের মোট আর্থিক মূল্য ১০ হাজার কোটি টাকা। জেলা প্রশাসনের দাবি, পুনর্বাসনের এই প্যাকেজ এলাকাবাসীকে ভাল ভাবে বোঝালেই তাঁরা রাজি হয়ে যাবেন। তাছাড়া ওই এলাকায় তিন ধরনের ল্যান্ড (জমি) রয়েছে। ফরেস্ট লান্ড, ভেস্ট ল্যান্ড ও প্রাইভেট ল্যান্ড। প্রাথমিকভাবে, ভেস্ট ল্যান্ডের ওপরেই কাজ শুরু করা হবে। তার পরে মানুষদের সঙ্গে আলোচনা করে সেই কাজ এগিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে। তবে এদিন এলাকার আদিবাসী মানুষেরা জানিয়েছেন,  তাঁরা কেউ গ্রাম ছাড়বেন না। প্রকল্প করতে হলে সরকারি ভেস্ট জমি ও ফাঁকা জমিতে করুক। সেই সঙ্গে প্যাকেজের সরকারিভাবে শ্বেতপত্র বের করা হোক। তারপর জেলা প্রশাসনের আধিকারিকেরা সেই নিয়ে আদিবাসীদের সঙ্গে আলোচনায় বসুক।

Published by:

Ei Muhurte

Share Link:

More Releted News:

‘পরিসংখ্যানের লড়াই হোক, শ্বেতপত্র প্রকাশ করুন’, মোদিকে চ্যালেঞ্জ অভিষেকের

সন্দেশখালিকাণ্ডে রেখা পাত্রের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দায়ের

মোদিকে দেখে অনুপ্রাণিত, ভোটের ময়দানে ওড়িশার চাওয়ালা

‘সন্দেশখালির বেলুন আলপিন ফুটেছে, চক্রান্ত এখন জনসমক্ষে’, বিজেপিকে নিশানা অভিষেকের

প্রচারের শেষলগ্নে চণ্ডীপাঠের মন্ত্র বিকৃত করার অভিযোগে বিদ্ধ অসীম

বৃষ্টির জেরে  বীরভূমে বাতিল  জনসভা, ভার্চুয়ালি প্রচার অভিষেকের

Advertisement
এক ঝলকে
Advertisement

জেলা ভিত্তিক সংবাদ

দার্জিলিং

কালিম্পং

জলপাইগুড়ি

আলিপুরদুয়ার

কোচবিহার

উত্তর দিনাজপুর

দক্ষিণ দিনাজপুর

মালদা

মুর্শিদাবাদ

নদিয়া

পূর্ব বর্ধমান

বীরভূম

পশ্চিম বর্ধমান

বাঁকুড়া

পুরুলিয়া

ঝাড়গ্রাম

পশ্চিম মেদিনীপুর

হুগলি

উত্তর চব্বিশ পরগনা

দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা

হাওড়া

পূর্ব মেদিনীপুর