নিজস্ব প্রতিনিধি: রাজনীতি সবার জন্য নয়। সকলের পক্ষে রাজনীতিতে মানিয়ে চলাটাও সম্ভব নয়। এই আপ্তবাক্য কতখানি সত্যি তা প্রতি পদে পদে নিজের একের পর এক বিতর্কিত ও নিন্দানীয় পদক্ষেপের মাধ্যমে প্রমাণ করছেন হুগলি জেলার(Hooghly District) বলাগড়ের বিধায়ক(Balagarh MLA) মনোরঞ্জন ব্যাপারী(Monoranjan Bapari)। চূড়ান্ত দলবিরোধী অবস্থানের জন্য এমনিতেই তিনি এখন তৃণমূলের(TMC) অন্দরে কার্যত একঘরে হয়ে পড়েছেন। এবার রাজ্যের সংখ্যালঘু সমাজের এক মহিলার উদ্দেশ্য চূড়ান্ত অশ্লীল, নিন্দানীয় ও অপমানজনক শব্দ প্রয়োগের জন্য কার্যত কাঠগড়ায় উঠলেন তিনি। কেননা যে মহিলাকে উদ্দেশ্য করে তিনি এই কুরুচিকর আক্রমণ শানিয়েছিলেন তিনি এদিন অর্থাৎ বৃহস্পতিবার সকালে বলাগড় থানায় ব্যাপারীর বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। পরিস্থিতি যা তাতে মনোরঞ্জনের গ্রেফতার হওয়ার সম্ভাবনাও তৈরি হয়েছে।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়(Mamata Banerjee) নিজে মনোরঞ্জনকে বলাগড়ে প্রার্থী করেন একুশের নির্বাচনে। তখন অনেকেই বলেছিলেন প্রার্থী নির্বাচন ভুল হয়েছে। খোদ বলাগড়ের বাসিন্দাদের একাংশ প্রকাশ্যেই বলে উঠেছিলেন, ‘রিক্সাওয়ালাকে কে ভোট দেবে!’। সেই প্রচারের বিরুদ্ধে মনোরঞ্জন নিজেই রিক্সা চালিয়ে ভোটের প্রচারে নামেন। জিতেও যান। তবে সেই জয়ের নেপথ্যে ছিলেন মমতা। কেননা বাংলা তথা দেশের সবাই জানেন, যে কোনও নির্বাচনে বাংলার মাটিতে তৃণমূলের বাক্সে পড়া প্রতিটি ভোটই পড়ে মমতার নামে। সেই সব কিছু জেনেও বিধায়ক হওয়ার পর থেকেই মনোরঞ্জন যা খুশি করে চলেছেন। যখন খুশি দলের নেতাদের অপমান করছেন, তাঁদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করছেন, তাঁদের নামে সোশ্যাল মিডিয়াতে যা নয় তাই খুশি বলে চলেছেন। দল তাঁকে একাধিক বার সতর্ক করেছে, কিন্তু সেই সব সতর্কবার্তা যে তিনি বিন্দুমাত্র ধার্ত্যব্যের মধ্যে আনছেন না সেটা রুনার ঘটনায় পরিষ্কার হয়ে গিয়েছে।
বলাগড়ের যুব তৃণমূল নেত্রী তথা জেলা পরিষদ সদস্য হলেন রুনা খাতুন(Runa Khatun)। বিনা কারণে তাঁকে মনোরঞ্জন অত্যন্ত কুরুচিকর শব্দে ফেসবুকে আক্রমণ করেন। সেই পোস্ট ভাইরাল হতে বেশি সময় লাগেনি। সেই পোস্টের জেরেই রাজ্যের সর্বত্র নিন্দা শুরু হয় মনোরঞ্জনকে নিয়ে। যারা সরব হয়েছে মনোরঞ্জনের বিরুদ্ধে তাঁদের একটা অংশ তৃণমূলেরই। দাবি উঠেছে তাঁকে দল থেকে বহিষ্কার করা হোক। পরিস্থিতি যে হাতের বাইরে চলে যাচ্ছে সেটা আঁচ করে মনোরঞ্জন সেই বিতর্কিত পোস্টটি ফেসবুক থেকে মুছে দেন। কিন্তু ততক্ষণের যা হওয়ার হয়ে গিয়েছে। সেই পোস্টের জন্য এদিন সকালে ফেসবুকেই একটি পোস্ট করেন ব্যাপারী। তাতে তিনি লেখেন,‘আমার মাথা গরম হয়ে গিয়েছিল তাই আমি ধর্ষকের যা স্ত্রী লিঙ্গ হয় তেমন একটা খিস্তি দিয়ে ফেলি ফেসবুকে। সেই পোস্ট লিখবার মধ্যে বুঝতে পারি -একটা মস্ত বড় ভুল হয়ে গেছে। সাথে সাথে সেটা মুছে দিই। আমার অনেক প্রিয়জন আপনজন শুভাকাঙ্ক্ষী আছে তাঁরা আমার কাছে জানতে চায় এমনটা কেন লিখেছি। তাদের জানাচ্ছি এটা আমার একটা মস্ত বড় ভুল হয়েছে। এমনটা লেখা সত্যিই আমার উচিৎ হয়নি। আমি বিশেষ করে মার্জনা চাই মা বোন দিদিদের কাছে । সতর্ক থাকব বিরত থাকবো ভবিষ্যতে এমন শব্দ ব্যবহারের ক্ষেত্রে।’
যদিও সেই মুছে ফেলা পোস্টের স্ক্রিনশটকে হাতিয়ার করেই এদিন রুনা বলাগড় থানায় মনোরঞ্জনের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করেছেন। তার আগে ব্যাপারীকে উদ্দেশ্য করে তিনিও একটি পোস্ট করেন ফেসবুকে। সেখানে তিনি লেখেন, ‘গো অ্যাহেড। বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের কাছে যান। যদি টাকাপয়সা লাগে আমি সাহায্য করব। আমি এক জন শিক্ষিকা। আমার রুচিবোধ আছে। আপনি কাদা ছুড়তে পারেন। কিন্তু আমি সন্দেশ দিলাম।’ পরে থানা থেকে বেড়িয়ে রুনা জানান, ‘আমাকে ব্যক্তিগত ভাবে আক্রমণ করতে গিয়ে বিধায়ক এত নীচে নেমে যাবেন, তা তিনি ভাবতেও পারেননি। আমাকে কিছুই বলতে বাকি রাখেননি। অথচ, আমার বিরুদ্ধে আজ পর্যন্ত একটি প্রমাণও দিতে পারেননি। এখন আমি এবং আমার পরিবার অত্যন্ত আতঙ্কিত, নিরাপত্তার অভাব বোধ করছি। নিজেই লোক পাঠিয়ে নিজের অফিস ভাঙছেন, তার পর আমার নামে দোষ দিচ্ছেন। তাই পুলিশের দ্বারস্থ হলাম, মনোরঞ্জন ব্যাপারী এবং তাঁর শাগরেদদের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দায়ের করতে বাধ্য হলাম।’ সূত্রে জানা গিয়েছে, মনোরঞ্জন গোটা বিষয়টি নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলতে চেয়েছিলেন। কিন্তু বিপরীত প্রান্ত থেকে সেভাবে সাড়া পাননি। তাই কোনও কথাও নাকি হয়নি। তবে আপাতত মনোরঞ্জনকে তাঁর বিধানসভা কেন্দ্র বলাগড়ে না যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছে তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্ব। বিধায়ক নিজেই সংবাদমাধ্যমকে তা জানিয়েছেন।