নিজস্ব প্রতিনিধি: একটা সময় ছিল যখন অবাঙালিদের হাতেই ফুচকা ব্যবসা জনপ্রিয় হয়েছিল পাড়ার মোড়ে মোড়ে। আর বাঙালিরা সেই ফুচকার স্বাগ চেটেপুটে উপভোগ করতেন। পরবর্তী সময়ে বাঙালিরাও এই ব্যবসায় যুক্ত হয়েছেন কোনও কোনও এলাকায়। তা বলে মহিলারা পাড়ার মোড়ে ফুচকা বিক্রি করছেন সেটা কখনও দেখেছেন? দেখবেন যদি আপনি শিল্পনগরী দুর্গাপুর যান। শিল্পনগরীর বেশ কয়েকজন বাঙালি মহিলা ফুচকা বিক্রি করেই ব্যপক সাফল্য পেয়েছেন। ফলে তাঁরা ইতিমধ্যেই ‘ফুচকা বৌদি’ নামে পরিচিতি পেয়েছেন। যদিও তাঁদের দাবি, শখে নয়, সংসারের অভাব অনটনের জন্যই তাঁরা ফুচকা বিক্রি করছেন।
বর্তমানে নয় নয় করে পাঁচজন মহিলা ফুচকা বিক্রেতার দেখা মিলবে। যারা প্রত্য়েকেই বাঙালি। দুর্গাপুর শহরের মঞ্জু দে, পূর্ণিমা পাল, কবিতা বিশ্বাসের মতো বাঙালি মহিলারা আজ ফুচকা বিক্রি করেই স্বাবলম্বী। একসময় অভাবের সঙ্গে লড়াই করেছেন, এরপর কী করবেন সেটা ভাবতে গিয়েই ফুচকা বিক্রির কথা মাথায় আসে। তারপর কোনও ফুচকা বিক্রেতার থেকে ট্রেনিং নিয়ে আর ইউটিউব দেখে কিছুটা শিখে নেমে পড়েন ব্যবসায়। সংসারের অনটন কাটাতে লোকলজ্জাকে দূরে ঠেলে নিজেদের এলাকায় ভ্যান করে ফুচকার স্টল বসিয়ে অচিরেই ‘ফুচকা বৌদি’ হয়ে উঠেছেন।
দুর্গাপুর পুরসভার এক নম্বর ওয়ার্ড তথা রঘুনাথপুরের বাসিন্দা মঞ্জু দে প্রায় ১০ বছর ধরেই ফুচকা বিক্রি করছেন। তাঁর স্বামী সবজি বিক্রি করতেন। একমাত্র মেয়ে অসুস্থ ছিল। তাই অভাবেব সংসারে মেয়েকে সুস্থ করার মরিয়া চেষ্টায় ফুচকা বিক্রি শুরু করেন মঞ্জুদেবী। আজ তাঁর ফুচকা দুর্গাপুরবাসীদের কাছে লোভনীয় খাবার হয়ে উঠেছে। আজ তাঁর পরিবার একটু সুখের মুখ দেখেছে। মেয়েও যেমন সুস্থ তেমন স্বামীও স্টেশনারি দোকান খুলেছেন। ওই এলাকার বাসিন্দা পূর্ণিমা পাল ফুচকা-চাটের ব্যবসা করেন মঞ্জুদেবীকে দেখেই। যদিও একমাত্র মেয়েকে ভালভাবে মানুষ করতে ফুচকা বিক্রিকেই পেশা করেছেন তিনি। আজ পূর্ণিমা বৌদির ফুচকাও যথেষ্ট জনপ্রিয়।
অপরদিকে কবিতা বিশ্বাসের কাহিনী আরও মর্মস্পর্শী। তাঁর স্বামী একসময় ফুচকা বিক্রি করতেন। কিন্তু তিনি সংসার চালানোর টাকা তো দিতেননি না উল্টে মারধোর করতেন। একদিন দুই সন্তান-সহ তাঁকে বাড়ি থেকেই বের করে দেন। ফলে বাধ্য হয়েই তিনি স্বামীর পেশাই বেছে নেন। আজ ৯ বছর ধরে দুর্গাপুরের রাস্তায় ফুচকা বিক্রি করছেন।