নিজস্ব প্রতিনিধি: কেউ কেউ ‘সেটিং’ দেখছেন। কেউ বা দেখছেন ‘সৌজন্যতা’। কিন্তু এটাও সত্যি, দুই দলের মধ্যেকার বিরোধ ও দূরত্ব দুই কমছে। তাতে রাজ্যের শাসক পক্ষে অস্বস্তি না বাড়লেও অস্বস্তি কিন্তু বাড়ছে রাজ্যের বিরোধী দলের মধ্যে। কেন না চারদিক থেকে প্রশ্ন ধেয়ে আসছে সেই দলের নেতাদের দিকে। কিন্তু সেই সব প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার মতো পরিস্থিতি তাঁদের সামনে খোলা নেই। কেননা সেই দলের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেন দিল্লিতে বসে থাকা দলের মাথারা। সেখান থেকে যখন যেমন নির্দেশ আসে তখন তেমন কর্মসূচি সামনে আসে। এখন যেমন সৌজন্যের আবহ ধরে রাখার কড়া বার্তা এসেছে দিল্লি থেকে। শুধু যে বার্তা এসেছে তাই নয়, কার্যত বঙ্গ বিজেপি(Bengal BJP) রাশ এবার নিজেদের হাতেই তুলে নিয়েছেন বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের মাথারা।
আরও পড়ুন ১৭ ডিসেম্বর রাজ্যে আসছেন অমিত শাহ, মমতার সঙ্গে বৈঠক
ঠিক কী হয়েছে? সম্প্রতি রাজ্য বিধানসভায়(West Bengal State Assembly) বিরোধী দলনেতার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের(Mamata Banerjee) ঘরে যাওয়া নিয়ে রাজ্য রাজনীতিতে যথেষ্ট ‘চর্চা’ শুরু হয়। শুভেন্দু অধিকারীর(Suvendu Adhikari) পাশাপাশি তৃণমূলের তরফেও বিষয়টিকে ‘সৌজন্য’ বলে দাবি করা হলেও খালি চোখে অনেক কিছু পরিবর্তন ধরা পড়ছে দুই শিবিরের মধ্যেই। বিশেষ করে শুভেন্দু সহ বিজেপির নেতারা তৃণমূলের(TMC) বিরুদ্ধে, মমতার বিরুদ্ধে, অভিষেকের বিরুদ্ধে নিজেদের মৌখিক লড়াইকে য্বে উচ্চগ্রামে নিয়ে গিয়েছিলেন তাতে ছেদ পড়েছে। তু তু ম্যায় ম্যায় চলছে ঠিকই, তবে তার সুর এখন অনেকটাই নমনীয়। এই অবস্থায় দলের নীচু তলার কর্মীদের কাছে ভুল বার্তা যাচ্ছে এই তথ্য তুলে ধরে বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে চিঠি দিয়েছিলেন বঙ্গ বিজেপির প্রাক্তন সহ-সভাপতি তথা দলের বর্তমান রাজ্য কমিটির সদস্য রাজকমল পাঠক। তিনি চিঠি দিয়েছেন বিজেপির সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) বি এল সন্তোষের কাছে। সেই চিঠিতে তিনি দাবি করেছেন, সৌজন্যে’র কারণে ভুল বার্তা যাচ্ছে নিচু তলার কর্মীদের কাছে। দলের শীর্ষ নেতৃত্ব এই নিয়ে অবস্থান স্পষ্ট করুন। যে নিচু তলার কর্মীরা ভোট পরবর্তী সন্ত্রাসের শিকার, তাঁরা এই বিষয়টিকে ভাল ভাবে নিচ্ছেন না। তাই অবিলম্বে দলের শীর্ষ নেতৃত্বের উচিত বিষয়টি নিয়ে সংবাদমাধ্যমে কড়া প্রতিক্রিয়া জানানো। যাতে কর্মী-সমর্থকদের কাছে দলের অবস্থান স্পষ্ট হয়।
আরও পড়ুন নবান্নে গেলেন অভিষেক, মমতার রণকৌশলের নতুন ঘুঁটি সাজাচ্ছেন সেনাপতি?
কিন্তু নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করা তো দূরের কথা উল্টে বঙ্গ বিজেপির রাশ নিজেদের হাতে নিয়ে নিল্কেন বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। বঙ্গ বিজেপি নেতৃত্বকে সাফ জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, এখন থেকে রাজ্য, জেলা বা মণ্ডল পর্যায়ে কোনও সাংগঠনিক পরিবর্তন করার এক্তিয়ার থাকছে না বঙ্গ বিজেপির। গত ১৭ অক্টোবর বঙ্গ বিজেপির কোর-কমিটি ঘোষণা করা হয়েছিল দিল্লি থেকে। তখনই আঁচ মিলেছিল বঙ্গ বিজেপি নেতৃত্বের ডানা ছাঁতার প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গিয়েছে। এখন সময় যত গড়াচ্ছে ততই ডানা ছাঁটার পরিমাণও বাড়ছে। বঙ্গ বিজেপি সূত্রে জানা গিয়েছে, দলের সর্বভারতীয় সভাপতি জগৎ প্রকাশ নাড্ডার নির্দেশ, এখন থেকে দিল্লিকে না জানিয়ে কোনও সাংগঠনিক রদবদল করা যাবে না। একান্তই তা করতে হলে রাজ্য নেতাদের ব্যাখ্যা দিতে হবে। নতুন কাউকে পদে বসানো বা কাউকে সরানোর ক্ষেত্রে সুনীল বনসল, মঙ্গল পান্ডেদের সাংগঠনিক রিপোর্টই অগ্রাধিকার পাবে। আর এখানেই অনেকেই মনে করছেন বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব তথ আরএসএস বাংলায় তৃণমূলের সঙ্গে সৌজন্যতার আবহই ধরে রাখতে চায়। তাই বঙ্গ বিজেপির ডানা ছাঁটতে বিন্দুমাত্র পিছু পা হচ্ছেন না তাঁরা। আগামী দিনে তাই মমতার ওপর মোদির(Narendra Modi) আস্থা বাড়লে তাতে অবাক হওয়ার মতো কিছু থাকবে না।