নিজস্ব প্রতিনিধি: নদীমাতৃক বাংলার(Bengal) একাধিক নদী এখন বিলুপ্তির পথে। কোথাও নদীর উৎস গিয়েছে শুকিয়ে, কোথাও তা উৎসস্থলে মূল নদী থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছে, কোথাও বা চর পড়ে নদীর স্রোত হারিয়ে গিয়েছে আবার কোথাও মানুষের আগ্রাসনে নদী হারিয়ে গিয়েছে। সেই সব নদী এখন কোথাও বদ্ধ জলাশয়, কোথাও মজা খাল আবার কোথাও পুকুরে পরিণত হয়েছে। ওই সব নদীর মধ্যেই রয়েছে সরস্বতী নদীও(Saraswati River) যা হুগলির ত্রিবেণী(Tribeni) থেকে শুরু হয়ে হাওড়ায় সাঁকরাইল(Sankrail) থানার কাছে গঙ্গায় গিয়ে মিশেছে। এক সময় এই নদী ছিল নৌ-বাণিজ্যের অন্যতম হাতিয়ার। সেই সময় নৌকা করে হুগলি ও বর্ধমানের বিভিন্ন জায়গায় যাওয়া যেত। দশকের পর দশক সংস্কার না হওয়ায় এই নদী মজে গিয়েছে। কোথাও কোথাও সরু নালার মতো হয়ে গিয়েছে। তাকেই ফের ফের স্রোতস্বিনী করে তুলতে উদ্যোগী হয়েছে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের(Mamata Banerjee) নেতৃত্বাধীন রাজ্য সরকার। আর এই কাজের জন্য বরাদ্দ হয়েছে ২০০ কোটি টাকা। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে এভাবে কী একটি নদীকে জীবনদান করা সম্ভব? যে টাকা বরাদ্দ হয়েছে তা দিয়ে আদৌ কাজ হবে তো!
আরও পড়ুন বাংলায় আরও ৮ লক্ষ মহিলা লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের আওতায়
সাঁকরাইল ব্লকের এক ধার দিয়ে বয়ে চলেছে গঙ্গা। লোকালয়ের মধ্যে দিয়ে যে অংশটা প্রবাহিত, তার অনেকাংশই আবর্জনার স্তূপে ভরে যাচ্ছে বলে অভিযোগ। শুধু তাই নয়, বহু জায়গায় নদীর একাংশ দখল করে কংক্রিটের নির্মাণ তোলা হয়েছে বলেও স্থানীয়দের অভিযোগ। তার জেরে গতি রুদ্ধ হয়েছে সরস্বতীর। কয়েক বছর আগে নদী সংস্কার করা হলেও তার হাল ফেরেনি। দূষণ থেকে সরস্বতী নদীকে বাঁচাতে গত বছরের অক্টোবরে সাঁকরাইল ব্লক প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠক করেছিল জেলা প্রশাসন। তারপর ঠিক হয়েছিল, নদীতে কেউ নোংরা ফেললেই ফেব্রুয়ারি মাস থেকে জরিমানা করা হবে। গুরুত্বপূর্ণ পাঁচটি এলাকায় লাগানো হবে নজরদারি ক্যামেরা। নিয়োগ করা হবে স্বেচ্ছাসেবক। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। তার জেরেই কয়েক মাস আগে ন্যাশনাল গ্রিন ট্রাইব্যুনাল এই নদীর বেহাল অবস্থার জন্য রাজ্যকে সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা জরিমানা করে। তারপরেই নড়েচড়ে বসে সরকার। জেলাস্তরে বৈঠকের পর সরস্বতী নদী সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয় এবং এরজন্য ২০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়।
আরও পড়ুন ‘আগে রাম পরে বাম’ ব্যুমেরাং হয়েছে, মানছেন রাম-বামের নেতারা
সমস্যা ঠিক কোথায়? সরস্বতী যে খুব প্রাচীন নদী তাই নয়, একসময় এই নদী দিয়ে রীতিমত নৌবাণিজ্য চলত। কিন্তু গঙ্গার গতিপথ পরিবর্তিত হওয়ায় এই নদীটি গঙ্গার মূল উৎস থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। যার জেরে নদীটি স্রোত হারায়। জায়গায় জায়গায় বুজে যায়, চরা পড়ে যায়। কোথাও কোথাও তা বদ্ধ জলাশয়ে পরিণত হয়। এরপর আসে মানুষের আগ্রসন। হাওড়া(Howrah) জেলার সাঁকরাইল ও ডোমজুড় এমন দু’টি ব্লক, যেখানে প্রচুর কারখানা রয়েছে। রয়েছে চাষের জমি। অভিযোগ, সরস্বতী নদীর বিভিন্ন জায়গা দখল হয়ে গিয়েছে। গড়ে উঠেছে ঘর-বাড়ি। ফলে এই নদীতে জলধারা প্রবাহিত না হওয়ায় সমস্যায় পড়েছে পরিবেশ। যেহেতু এলাকাটি শিল্পাঞ্চল হিসেবে পরিচিত, তাই শিল্পের জন্য প্রচুর জল প্রয়োজন হয়। কিন্তু সরস্বতী নদী শুকিয়ে যাওয়ায় কারখানাগুলি ভূগর্ভ থেকে জল তুলছে। এতে ভূগর্ভের জলস্তর কমছে। শুধু তাই নয়, কারখানাগুলি তাদের যে বর্জ্য ও আবর্জনা ফেলে, তা বিভিন্ন নালা হয়ে এসে পড়ছে সরস্বতী নদীতে। বছরের পর বছর ধরে এই ঘটনা ঘটে চলেছে। একসময় সরস্বতী নদী সংলগ্ন এলাকা ছিল শস্যশ্যামলা। এখন দূষণের কারণে এইসব এলাকায় আর চাষ হয় না। ফলে সব মিলিয়ে নষ্ট হচ্ছে পরিবেশের ভারসাম্য। এর পাশাপাশি নদীতে পলি জমে নদীখাত শুকিয়ে গিয়েছে। ফলে জলের প্রবাহ বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছে। এছাড়াও কয়েকটি জায়গায় নদী আড়েবহরে ঠিক থাকলেও অবৈধ নির্মাণের কারণে জল যাচ্ছে না।