নিজস্ব প্রতিনিধি: লক্ষ্য এবার বিদ্যুৎ সাশ্রয়। সেই লক্ষ্যপূরণে এগিয়ে এসেছে কলকাতা পুরনিগম বা KMC। শহরের বুকে তাই তাঁরা বসাতে চলেছেন Solar Tree। পাড়ার রাস্তার পাশাপাশি সেই Solar Tree বসবে শহরের সব পার্কের বুকেও। গাছের মতো দেখতে এই বাতিস্তম্ভ যন্ত্রের মাধ্যমে সূর্যের আলো যখন যে দিকে থাকবে, সে দিক থেকেই প্যানেল তাপ সংগ্রহ করে সৌরবিদ্যুৎ(Solar Power) তৈরি করতে পারবে। আর সেই সৌরবিদ্যুতের সাহায্যেই রাতের বেলা সেই বাতিস্তম্ভে জ্বলবে আলো। এতে একদিকে যেমন শহরের বুকে সৌন্দর্য(Beautification) বাড়বে, তেমনই পরিবেশবান্ধব এই আলোর ব্যবহারে সাশ্রয় হবে বিদ্যুৎ-ও। প্রথম ধাপে কলকাতা(Kolkata) শহরের ২০টি পার্ক এবং পাড়ার রাস্তায় মোট ৫০০টি এই Solar Tree বসানোর পরিকল্পনা নিয়েছে কলকাতা পুরনিগম কর্তৃপক্ষ। এর জন্য পুরনিগমের তরফে খুব শীঘ্রই টেন্ডার ডাকা হবে বলেও জানা গিয়েছে।
আরও পড়ুন নেপথ্য যোশী মঠ বিপর্যয়, জলাজমি বাঁচাতে Master Plan মমতার
Solar Tree দেখতে অনেকটা ব্যাঙের ছাতার মতো। স্টিল এবং ফাইবারে তৈরি এই বাতিস্তম্ভের নীচে বসানো থাকবে একটি যন্ত্র। সেই যন্ত্রের সাহায্যেই যখন যেদিকে সূর্যের আলো থাকবে বাতিস্তম্ভে থাকা সোলার প্যানেল সেদিকে ঘুরে গিয়ে তাপ সংগ্রহ করে সৌরবিদ্যুৎ তৈরি করবে। ইতিমধ্যেই পরীক্ষামূলক ভাবে শহরের বেশ কয়েকটি পার্কে কয়েক বছর আগেই সৌরবিদ্যুতের ব্যবহার শুরু হয়েছে। তার জন্য সোলার প্যানেলও বসানো হয়েছিল। এবার গোটা শহরজুড়েই বিদ্যুতের বিল কমানোর লক্ষ্য নিয়ে ও পরিবেশ রক্ষার স্বার্থে বিকল্প শক্তি ব্যবহারে জোর দিতে এই Solar Tree বসানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে পুরনিগম কর্তৃপক্ষ। কলকাতা লাগোয়া নিউ টাউনে বিদ্যুতের খরচ বাঁচাতে(Save Electric Power) সৌরবিদ্যুতের মাধ্যমে জ্বলবে এমন ১২০০টি স্টাড লাইট বসিয়েছে নিউটাউন কলকাতা উন্নয়ন পর্ষদ। হিডকো, এনকেডিএ ভবনেও সৌরবিদ্যুৎ ব্যবহার শুরু হয়েছে। যার জেরে আগের তুলনায় বিদ্যুৎ বিল ১৬ শতাংশ কমেছে বলে দাবি নিউটাউন কলকাতা উন্নয়ন পর্ষদের কর্তাদের।
আরও পড়ুন বাংলার বিজেপি নেতাদের লালসার শিকার বিজেপি কর্মীর স্ত্রী
জানা গিয়েছে কলকাতা শহরে যে Solar Tree গুলি বসানো হবে সেগুলির উচ্চতা হবে ৪ ফুট। এগুলি এমন ভাবেই ডিজাইন করা হচ্ছে যে দিনের বেলায় সেগুলি ছায়া দেবে, আর রাতে দেবে আলো। সেই সঙ্গে সাশ্রয় করবে বিদ্যুতেরও। পাশাপাশি শীতের সময়ে কলকাতা শহরের বুকে যে বায়ুদূষণ হয় তাও কমাবে। কেননা এই বায়ুদূষণের নেপথ্যে কাজ করে ধূলিকণা, যা এই বাতিস্তম্ভ নষ্ট করে দেবে। বাতিস্তম্ভে থাকা স্প্রিঙ্কলার সেই কাজ করবে। প্রাথমিক ভাবে মনে করা হচ্ছে, সারাদিন সূর্যের তাপে সৌরশক্তি সঞ্চয় করা গেলে প্রায় ৩২ ঘণ্টা পর্যন্ত এই বাতিস্তম্ভে একনাগাড়ে আলো জ্বলবে। তাই বর্ষাকালে আকাশে জমাট মেঘ থাকলেও সেই বাতিস্তম্ভগুলি রাতের বেলায় আলো জ্বলাতে কোনও অসুবিধায় পড়বে না। কলকাতা পুরনিগম কর্তৃপক্ষের এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছেন শহরের পরিবেশবিদরা। তাঁদের দাবি, কলকাতার মতো শহরেও বিকল্প শক্তির ব্যবহার বাড়ানো ভীষণ জরুরি। এ জন্যে তাঁদের তরফে যা যা সহায়তা প্রয়োজন, তা তাঁরা করবেন। দেশের বেশ কিছু শহর যেমন Puna, Bengaluru, Noida, Gurgaon, Hydrabad-এ এই ধরনের Solar Tree ভীষণ জনপ্রিয়। এর দ্বারা সৌরশক্তিকে যেমন কাজে লাগানো যাবে, তেমনই বিদ্যুতের সাশ্রয়ও হবে। বর্তমান পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে রাজ্যের অনান্য শহরেও এই ধরনের উদ্যোগ জরুরি বলেও তাঁরা মনে করছেন। বিশেষ করে ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চল, হাওড়া শহর, খড়গপুর শহর ও শিল্পাঞ্চল, হুগলি শিল্পাঞ্চল এবং আসানসোল-দূর্গাপুর শিল্পাঞ্চল। কেননা এই এলাকাগুলি রাজ্যের সব থেকে দূষণপ্রবণ এলাকা হিসাবেই চিহ্নিত। সেখানে দূষণ কমাতে(Pollution Control) ও বিদ্যুতের সাশ্রয় করতে যত দ্রুত সম্ভব ও যত বেশি সংখ্যক Solar Tree বসাতে হবে।