নিজস্ব প্রতিনিধি: লাখ লাখ টাকা নয়, হাজার হাজার টাকাও নয়, গুচ্ছ গুচ্ছ নথিও নয়, দিতে হবে মাত্র ৩ হাজার টাকা। তাহলেই হাতে হাতে মিলে যাচ্ছে আধার কার্ড(Aadhar Card)। জাল নয়, একদম আসল। এক আধ জায়গায় নয়, মালদা(Malda), মুর্শিদাবাদ(Murshidabad), নদিয়া(Nadia) ও উত্তর ২৪ পরগনা(North 24 Pargana) জেলায় চলছে এই আধার কার্ড করিয়ে দেওয়ার চক্র। নিচ্ছেন কারা? মূলত অপার বাংলা থেকে আসা মানুষজনেরা যাদের সরকারি ভাবে অনুপ্রবেশকারী(Bangladeshi Infiltrator) বলে চিহ্নিত করা হয়। আর সব থেকে চমকে দেওয়ার মতো তথ্য এটাই যে সেই চক্রে সামিল এক শ্রেনীর ব্যাঙ্ককর্মী(Bank Employees), বিএসএফের(BSF) কিছু জওয়ান ও আধিকারিক এবং সীমান্তবর্তী এলাকার কিছু মাতব্বর। এই চক্র নজরে এসেছে রাজ্যেরই গোয়েন্দাদের। আর তার জেরে এই চক্র ভাঙতে এখন উঠে পড়ে লেগেছেন পুলিশের আধিকারিকেরা। যদিও এই চক্র নিয়ে এখনও পর্যন্ত কেউ কোনও লিখিত অভিযোগ দায়ের করেননি।
আরও পড়ুন বাংলার দলীয় সাংসদের আসন বদলের পথে বিজেপি
জানা গিয়েছে, মালদা, মুর্শিদাবাদ, নদিয়া ও উত্তর ২৪ পরগনা জেলায় ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের ৩০ কিমি’র মধ্যেই প্রায় ৩০০টি আধার কেন্দ্র রয়েছে। এই সব কেন্দ্র থেকে আধার কার্ড তৈরি করে দেওয়া হয়। তার জন্য আবেদনকারীকে জরুরি ভিত্তিতে কয়েকটি নথি জমা দিতে হয়। তবে বিনা নথিতেও আধার কার্ড মেলে। তার জন্য ৬ নম্বর ফর্মে আবেদন করতে হয়। সেই ফর্মে স্থানীয় পঞ্চায়েত প্রধান বা জনপ্রতিনিধি সিলমোহর দেন। গোয়েন্দারা জানতে পেরেছেন এই ফর্মকে কেন্দ্র করেই এই আধার চক্র চলছে। জনপ্রতিনিধি বা পঞ্চায়েত প্রধানদের সই নকল করে মাত্র ৩ হাজার টাকার বিনিময়ে ওপার বাংলা থেকে আসা মানুষদের আধার কার্ড করিয়ে দেওয়া হচ্ছে। তাঁরাই হয়ে যাচ্ছেন দেশের নাগরিক। এই ঘটনার সঙ্গে ব্যাঙ্ক কর্মীদের যোগসাজশও মিলেছে গোয়েন্দাদের, যা তাঁদেরও রীতিমত ভাবাচ্ছে। ব্যাঙ্ক কর্মীরা কীভাবে এই চক্রে জড়িত?
আরও পড়ুন এবার WBCS-ও নম্বর দুর্নীতি, নজরে ৫ আধিকারিক
জানা গিয়েছে আগে ব্যাঙ্ক কর্মীরা অফিসে বসেই আধারের কাজ করতেন। তখন প্রতিবার মেশিন চালুর সময়ে GPS ব্যবস্থায় নিজের অবস্থান জানানো বাধ্যতামূলক ছিল। কিন্তু এখন একবার ওয়েবসাইটে Log In করার পরে দিনভর তা দিয়ে কাজ করা যায়। তার জেরে ব্যাঙ্কের যে সব কর্মীরা এই আধার কার্ড দেওয়ার কাজ করেন তাঁদের একাংশ প্রথমে ব্যাঙ্কের মধ্যে থাকা ল্যাপটপের মাধ্যবে নির্দিষ্ট ওয়েবসাইটে গিয়ে Log In করতে হচ্ছে। তারপর সেই ল্যাপটপ নিয়েই তাঁরা বেড়িয়ে যাচ্ছেন ও তা দিয়ে তাঁরা সারাদিন কাজ করছেন। তাঁরা যান কোথায়? যান তাঁরা এই আধার কেন্দ্রগুলিতে। সেখানে হাজির হন স্থানীয় জনপ্রতিনিধি বা পঞ্চায়েতের সই জোগাড় করে আনা ওপার বাংলার মানুষেরা। এরপর হাতে হাতে নগদ ৩ হাজার টাকার বিনিময়ে তাদের আধার কার্ড করে দেওয়া হয়। এই টাকার একটা অংশ পান এলাকার মাতব্বররা যারা এই ওপার বাংলার মানুষদের স্থানীয় জনপ্রতিনিধি বা পঞ্চায়েত প্রধানদের আসল বা নকল সই জোগাড় করে দেন। আধার কেন্দ্র থেকে মেলে ৬ নম্বর ফর্ম। তাঁরাও টাকার একটা অংশ পান। বাকি টাকা ঢোকে ব্যাঙ্ক কর্মী ও BSF-এর কিছু জওয়ান ও আধিকারিকদের পকেটে যারা এই ওপার বাংলার মানুষদের এপারে আসতে সাহায্য করেন। গোয়েন্দারা জানতে পেরেছেন এই মানুষেরা পায়ে হেঁটে হিলি, গেদে, পেট্রাপোল সীমান্ত দিয়ে এদেশে আসেন। তারপর এখানে আধার কার্ডবাগিয়ে এদেশেরই নাগরিক হয়ে থাকতে শুরু করেন। কেউ বাড়ি ভাড়া নিয়ে কেউ বা বাড়ি বা ফ্ল্যাট কিনে।