নিজস্ব প্রতিনিধি: বিজেপি(BJP) নামে দলটা যা ভাঁওতাবাজির সর্বোচ্চ উদাহরণ তার একটা প্রমাণ দিয়েছেন খোদ দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি(Narendra Modi)। দেশের ১৩৪ কোটি জনতার মধ্যে একজনও এখনও তাঁদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ১৫ লক্ষ টাকা করে পাননি। একই সঙ্গে এবার প্রায় একইরকমের ভাওঁতাবাজি করে দেখালেন বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জে পি নাড্ডা(J P Nadda)। সেই নিদর্শন এবার দেখতে পাচ্ছেন পূর্ব বর্ধমান(Purba Burdhwan) জেলার কাটোয়া(Katwa) থানার জগদানন্দপুরের(Jagdanandapur) মুস্থলী গ্রামের বাসিন্দারা। কেননা একুশের ভোটের আগে এই গ্রামে এসেই এক কৃষকের বাড়িতে পেট ভরে ভোজ সাঁটিয়েছিলেন নাড্ডা। সেই সময় তিনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন ওই কৃষকের অসুস্থ নাতনির চিকিৎসার দায়িত্ব তিনি নেবেন। কিন্তু তারপর ২ বছর পার হয়ে গেলেও এককণাও সাহায্য পায়নি ওই কৃষকের পরিবার। নাড্ডা বা বিজেপির কাছ থেকে কোনও সাহায্য পাওয়ার আশা ত্যাগ করে তাঁরা এখন স্বাস্থ্যসাথী(Sasthasathi) প্রকল্পের মাধ্যমে নাতনির চিকিৎসা করাতে চান। প্রয়োজনে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের(Mamata Banerjee) কাছেও সাহায্য চাইতে চান।
আরও পড়ুন ‘চাকরি খাব না, চাকরি দেব’, ফের বাম-বিজেপিকে খোঁচা মমতার
২০২১ সালের ৯ জানুয়ারি কাটোয়ার জগদানন্দপুর অঞ্চলের মুস্থলী গ্রামে এসেছিলেন বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জগৎপ্রকাশ নাড্ডা। সেখানে সভা করার পাশাপাশি গ্রামের পাঁচটি কৃষক বাড়ি থেকে মুষ্টিভিক্ষা সংগ্রহ করেন নাড্ডা। তারপর গ্রামের বাসিন্দা মানবী মণ্ডলের(Manabi Mondol) বাড়িতে দুপুরের মধ্যাহ্নভোজেন সারেন। মানবী নাড্ডা সহ বিজেপির শীর্ষনেতাদের নিজের হাতে রান্না করে খাইয়েছিলেন। সেদিন নাড্ডা ওই বাড়িতে মিনিকিট চালের ভাত, সব্জি ডাল, আলু ও বেগুন ভাজা, সর্ষেফুলের বড়া, আলু ফুলকপির তরকারি, শুক্তো, চাটনি, দই, পাঁপড়, নলেন গুড়ের রসগোল্লা ও শেষ পাতে পুলিপিঠে চেটেপুটে খেয়েছিলেন। খাওয়াদাওয়ার পর জেপি নাড্ডাকে মানবী তাঁর মেয়ে সোমা মণ্ডলের অসুস্থতার কথা জানিয়েছিলেন। শুধু তাই নয়, ছোট্ট মেয়েটির চিকিৎসা করানোর জন্য নাড্ডার সাহায্য চেয়ে অনুরোধও করেছিলেন মানবী ও তাঁর পরিবারের সদাস্যরা। নাড্ডা সব শুনে সেদিন আশ্বাস দিয়েছিলেন। কিন্তু তারপর একটি বারের জন্যও খোঁজ রাখেননি নাড্ডা। কথা দিয়েও কথা রাখেননি বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জে পি নাড্ডা।
আরও পড়ুন সুমিত সাউ বিজেপি কর্মী, স্বীকার করলেন উমেশ সাউ
বিজেপি ও নাড্ডার দিক থেকে কোনও সাহায্য না পেয়ে মানবী মণ্ডলের পরিবার টাকা ধার করে বেঙ্গালুরু থেকে মেয়েটির চিকিৎসা করিয়ে এনেছেন। যদিও সেই চিকিৎসা পুরোপুরি শেষ হয়ে যাননি। সামান্য এক বিঘা জমিতে চাষাবাদ করে মানবীর পরিবারের দিন চলে। সেই আয়েই সংসার চলে। ছোট্ট দু’ কামরার ঘরে আজও বড় অভাবেই দিন কাটছে তাঁদের। স্থানীয় বিজেপি নেতারাও এখন আর তাঁদের খোঁজ নেন না। সাহায্য করা তো বহু দূরের কথা। মানবী জানিয়েছেন, ‘আমাদের বাড়িতে বড় নেতা খাবেন বলেছিলেন। আমরাও খাইয়েছি। আমার নাতনি স্নায়ু রোগে ভুগছিল। আমার নাতনির চিকিৎসার জন্য নাড্ডাকে বলেছিলাম। কিন্তু উনি আমাদের কোনও আর্থিক সাহায্যে করেনি। সুদে টাকা ধার করে নাতনিকে বেঙ্গালুরু থেকে চিকিৎসা করিয়ে এনেছি। তারপর মুনিষ খেটে সেই টাকা শোধ করেছি। তাছাড়া আমরা বিজেপি দলের সমর্থক ছিলাম না। এখনও আমরা কোনও রাজনৈতিক দল করি না। মাঠে জমি চাষ করেই আমাদের পেট চলে। নাতনির চিকিৎসার জন্য অর্থ সাহায্য চেয়েছিলাম। কিন্তু নাড্ডা আমাদের টাকা দেননি।’ এখন মন্ডল পরিবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মুখাপেক্ষী হয়েছেন যদিন স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পের মাধ্যমে বাচ্চা মেয়েটির চিকিৎসা কলকাতায় করানো সম্ভব হয়। এখনেই ফারাক মমতার সঙ্গে আর সবার। বাকিরা শুধুই প্রতিশ্রুতি আর ভাঁওতা দেয়। মমতা যা বলেন তা করে দেখান। নিজের দেওয়া কথা তিনি রাখতে জানেন, তা রাখেনও। মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়ে নাড্ডার মতো ভাঁওতাবাজি করে পিট দেখিয়ে পালিয়ে যান না।