নিজস্ব প্রতিনিধি: চার বন্ধু মিলে সন্ধ্যাবেলায় বাড়ি থেকে বার হয়েছিল যাত্রা দেখতে যাবে বলে। ১টা বাইকে করেই সেই ঝুঁকির যাত্রায় সঙ্গী হয়নি একটিও হেলমেট। বাড়ির লোক থেকে পাড়ার বাসিন্দারা কেউ কেউ আপত্তি তুলেছিলেন ১টি বাইকে করে ৪জন যাওয়ার কারণে। কিন্তু সেই আপত্তি কানে তোলেনি ওই ৪জন। তুললে হয়তো চারজনেরই জীবন বেঁচে যেত। সোম সকালে রাজ্য সড়কের ধারে তাঁদের নিথর দেহ উদ্ধারের পরে ওই ৪জনের পরিবারে তো বটেই গোটা বেলগ্রাম জুড়ে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। রাজ্য সরকারের তরফে দুর্ঘটনা কমাতে বার বার প্রচার করা হচ্ছে ‘সেফ ড্রাইভ সেভ লাইফ’। কিন্তু তারপরেও যে একশ্রেনীর মানুষ সে সবের পাত্তা না করে নিজের খুশি মতো ঝুঁকির জীবন চালিয়ে যাচ্ছেন সেটা আরও একবার দেখিয়ে দিলে মুর্শিদাবাদ(Murshidabad) জেলার এই ঘটনা।
জানা গিয়েছে, মুর্শিদাবাদ জেলার কান্দি(Kandi) মহকুমার বড়ওয়ান(Barwan) থানা এলাকার বেলগ্রামের বাসিন্দা ৪ যুবক দীপ বাগদি, বিদ্যুৎ বাগদি, কল্যাণ দাস এবং রনিত মাঝি রবিবার সন্ধ্যাবেলায় বাইক নিয়ে বার হয়েছিল তালোঞা গ্রামের পথে যাত্রা দেখতে যাবে বলে। তখনই ওই ৪ যুবকের পরিবারের সদস্যরা ও গ্রামেরও কয়েকজন আপত্তি করেছিলেন ১টি বাইকে করে ৪জন যাওয়ার জন্য। যদিও সেই আপত্তি কানে তোলেনি তাঁরা। কিন্তু রাতে আর বাড়ি ফেরেনি ওই ৪ যুবক। এমনকি ৪জনের মোবাইলে বার বার ফোন করা হলেও তা রিং হয়ে যাচ্ছিল। ফোন কেউই তুলছিল না। আর তাতেই বাড়ছিল উদ্বেগ। কার্যত রাতভর চরম উৎকণ্ঠার মধ্যে কাটান ওই ৪ যুবকের পরিবারের সদস্যরা। ভোর হতেই তাঁরা ৪জনের খোঁজ শুরু করেন। তা করতে করতেন আসে থানা থেকে পুলিশের ফোন। বলা হয় বড়ওয়ান থানা এলাকার হরিমাটি গ্রামে কান্দি সাঁইথিয়া রাজ্য সড়কের পাশ থেকে উদ্ধার হয়েছে ৪জনের দেহ। প্রাথমিক ভাবে মনে করা হচ্ছে রাতে কোনও ভারী গাড়ির ধাক্কায় বাইক থেকে ছিটকে রাজ্য সড়কের পাশে ফাঁকা জমিতে গিয়ে পড়ে ওই ৪জন। আর তাতেই ঘটেছে মৃত্যুর(Death) ঘটনা।
এদিন সকালে ৪ যুবকের দেহ উদ্ধার করে পুলিশ প্রথমে কান্দি মহকুমা হাসপাতালে পাঠায় দেহগুলির ময়নাতদন্তের জন্য। ঘটনার জেরে মৃতদের প্রতিবেশী দেবনাথ চক্রবর্তী বলেন, ‘যাত্রা দেখতে ওরা তালোঞা গ্রামে গিয়েছিল বলে শুনলাম৷ যাত্রা দেখে সবাই বাড়ি ফিরবে এটাই স্বাভাবিক৷ কিন্তু ঘরে না ফেরায় চিন্তায় পড়ে যায় পরিবারের লোকেরা৷ খোঁজাখুঁজি করতে থাকেন তাঁরা৷ এরপর থানা থেকে ফোন আসে৷ বলা হয় হরিমাটি পেরিয়ে এসে দুর্ঘটনায়(Accident) মারা গিয়েছে সবাই৷’ তবে ঘটনার নেপথ্যে অন্য রহস্য রয়েছে বলে এদিন দাবি করেছেন ওই ৪ যুবকের পরিবার থেকে স্থানীয় বাসিন্দাদের কেউ কেউ। তাঁদের দাবি, ওই ৪জনকে পিটিয়ে খুন করে রাস্তার ধারে দেহ ফেলে যাওয়া হয়েছে যাত তা দুর্ঘটনা বলে মনে হয়। তাই তাঁরা এই ঘটনার উচ্চপর্যায়ের তদন্তের দাবি তুলেছেন। তবে এই ঘটনায় এখনও পর্যন্ত রাজনৈতিক কোনও যোগসূত্র উঠে আসেনি। পুলিশের দাবি, ময়নাতদন্তের রিপোর্টেই বোঝা যাবে মৃত্যুর সঠিক কারণ। তবে গ্রামবাসীদের দাবি, দুর্ঘটনা হলে চারটি মৃতদেহ বিভিন্ন জায়গায় কালভার্টের নিচে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকত না। রাতের টহলদারি পুলিশ নিশ্চয়ও বিষয়টি টের পেত। পুরো বিষয়টি রহস্যজনক।