নিজস্ব প্রতিনিধি, ঢাকা: ছোটবেলার বন্ধু ফরহাদের সাহায্যেই গত রবিবার গলা টিপে শ্বাসরোধ করে স্ত্রী তথা অভিনেত্রী রাইমা ইসলাম শিমুকে খুন করেছিলেন শাখাওয়াত আলীম নোবেল। শুধু তাই নয়, রাইমার নিথর দেহ বস্তায় পুরে সেলাই করেছিল ফরহাদ। আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে এ কথা জানিয়েছেন রাইমার ‘ঘাতক’ স্বামী ও তার বন্ধু।
শুক্রবার অভিনেত্রী রাইমা ইসলাম শিমুর চাঞ্চল্যকর হত্যাকাণ্ড নিয়ে সাংবাদিক সম্মেলন করেন ঢাকা জেলা পুলিশের তদন্তকারী আধিকারিকরা। সাংবাদিক সম্মেলনে শিমুর হত্যাকাণ্ডের বিস্তারিত বিবরণ তুলে ধরেন ঢাকা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ দক্ষিণ) হুমায়ন কবীর। তিনি জানান, নোবেলের সঙ্গে ফরহাদের ৪০ বছরের বন্ধুত্ব। হত্যাকাণ্ডের দিন নোবেলের কাছ থেকে টাকা ধার করতে সকাল দশটা নাগাদ কলাবাগানের বাড়িতে আসে ফরহাদ। চা খেতে-খেতেই তিনি শিমুর সঙ্গে নোবেলের ঝগড়া শুনতে পায়। চিৎকার শুনে ড্রয়িংরুম থেকে বেডরুমে ছুটে যায় ফরহাদ। গিয়ে দেখে মেঝেতে পড়ে রয়েছে শিমু। ফরহাদকে সাহায্য করার অনুরোধ জানিয়ে স্ত্রীর গলা টিপে ধরে নোবেল। সাহায্য করে ফরহাদ-ও। শ্বাসরোধ হয়েই মৃত্যু হয় শিমুর।
তার পরে ঠাণ্ডা মাথায় দুই বন্ধু মিলে শিমুর দেহ একটি বস্তায় পুরে সেলাই করে। লাশ সরাতে বাড়ির দারোয়ানকে দোকান থেকে প্রাতঃরাশ কিনে আনার কথা বলে নোবেল। দারোয়ান দোকানে যেতেই শিমুর বস্তাবন্দি লাশটি গাড়ির পিছনে ডিকিতে রাখা হয়। তার পরে লাশ ফেলার জন্য গাড়ি নিয়ে রাজধানীর মিরপুরসহ বিভিন্ন জায়গায় চক্কর কাটতে থাকে নোবেল ও ফরহাদ। কিন্তু তেমন নিরাপদ জায়গা না মেলায় সন্ধ্যায় লাশ নিয়ে বাড়ি ফিরে আসে দুজনে। ওইদিন রাতেই আবার শিমুর বস্তাবন্দি লাশ নিয়ে বেরিয়ে যায় দুই বন্ধু। প্রথমে বছিলা সেতু দিয়ে কেরানীগঞ্জের হযরতপুরে যায়। সেখানে আলিয়াপুর ব্রিজের অদূরে একটি রাস্তার পাশে বস্তাবন্দি অবস্থায় শিমুর লাশটি ফেলে পালিয়ে যায়।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জানান, ১৭ জানুয়ারি সকালে কেরানীগঞ্জ মডেল থানার পুলিশ শিমুর লাশ উদ্ধার করে। ঢাকা জেলা পিবিআইয়ের সহায়তায় লাশ শনাক্ত করা হয়। যে গাড়িতে চাপিয়ে শিমুর লাশ নিয়ে যাওয়া হয়েছিল, সেই গাড়ি থেকে একটি সুতার বান্ডিল উদ্ধার করে পুলিশ। সেই সুতোর সঙ্গে শিমুর লাশ রাখা বস্তা সেলাইয়ের সুতোর মিল খুঁজে পাওয়া যায়। ওই দিন রাতেই নোবেল ও ফরহাদকে গ্রেফতার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে নোবেল ও তার বন্ধু ফরহাদ স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে সব অপরাধ কবুল করে নেয়।