নিজস্ব প্রতিনিধি, ঢাকা: স্বপ্নের পদ্মা সেতু (Padma Bridge) নিয়ে রাজনৈতিক ফায়দা লুটতে কোমর কষে ঝাঁপিয়েছে বাংলাদেশ সরকার (Bangladesh Government) ও শাসকদল আওয়ামী লীগ (Awami League)। আর সেই সঙ্গে মোসাহেবিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে দেশের অধিকাংশ সংবাদমাধ্যম। গত কয়েকদিন ধরে সংবাদমাধ্যমের প্রচার দেখে মনে হচ্ছে, বাংলাদেশ (Bangladesh) যা করেছে বিশ্বের অন্য কোনও দেশ কখনই তা করতে পারেনি। প্রচারের ঢক্কানিনাদে ঢাকা পড়েছে সেতু নির্মাণ নিয়ে দুর্নীতি, পদ্মা সেতু নির্মাণের সময়ে ছেলেধরা গুজবে প্রাণ হারানো পরিবারদের পাশে না দাঁড়ানোর মতো সরকারের অমানবিকতা ও নির্লজ্জতা।
তাহলে খুলেই বলা যাক। পদ্মা সেতু নির্মাণের সময়েই একটি মহল থেকে অপপ্রচার শুরু হয়েছিল খরস্রোতা নদীকে শান্ত করতে লাগবে শিশুর মাথা। দাবানলের মতোই গোটা দেশে ছড়িয়ে পড়েছিল সেই গুজব। আতঙ্কিত হয়ে পড়েছিলেন গোটা দেশের মানুষ। ছেলেধরা আতঙ্ক এতটাই মনের গভীরে গেঁথে গিয়েছিল যে ২০১৯ সালে দেশজুড়ে গণপিটুনির শিকার হন ২১ জন। ওই গণপিটুনিতে মর্মান্তিকভাবে প্রাণ হারান পাঁচজন। তাঁর মধ্যে অন্যতম তাসলিমা বেগম রেণু (Taslima Renu Begum)।
২০১৯ সালের ২০ জুলাই ছোট কন্যাসন্তানকে স্কুলে ভর্তি করানোর জন্য তথ্য নিতে গিয়ে বাড্ডায় (Badda) গণপিটুনির শিকার হয়ে মারা যান তিনি। গোটা দেশের মানুষকে নাড়া দিয়েছিল ওই নৃশংস ঘটনা। প্রশাসনের পক্ষ থেকে ব্যবস্থা নেওয়ার ও ক্ষতিপূরণ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তিন বছর কেটে গেলেও রেণুর পরিবারকে এক কানাকড়ি দেয়নি সরকার। পদ্মা সেতুর (Padma Bridge) প্রচারে কোটি-কোটি টাকা জলের মতো খরচ হয়েছে। বিদেশি সাংবাদিকদের ডেকে এনে নিজেদের কৃতিত্ব জাহির করা হয়েছে। কিন্তু হতভাগ্য রেণুর ছোট মেয়ের ভবিষ্যতের জন্য এক লক্ষ টাকা দেওয়ার মতো মানবিকতা দেখাতে পারেনি প্রচারলোভী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা (Prime Minister Sk. Hasina)। বরং এক ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান ১০ লক্ষ টাকা আর্থিক সাহায্য দিয়েছিল। সেই টাকা থেকে আসা সামান্য সুদেই কাটছে রেণুর ছোট্ট মেয়ের জীবন।
এদিন দেশবাসীর মতো টিভির পদ্মায় চোখ রেখেছিলেন রেণুর বড়দির পরিবার। মাসির কথা মনে পড়তে চোখ ছলছল রেণুর বোনের ছেলে সৈয়দ নাসির উদ্দিন টিটুর (Syed Nasiruddin Ti)। যে কন্যা সন্তানের স্কুলে ভর্তির জন্য খোঁজখবর নিতে গিয়ে প্রাণ দিতে হয়েছিল তাসলিমা রেণুকে সেই তুবা (Tuba) বড্ড চুপচাপ। প্রথমে তাকে সান্ত্বনা দিয়ে বলা হতো, তার মা আমেরিকায় আছে। সেও যাবে এক সময়। তবে এখন সেও বুঝতে শিখেছে মা আর কখনই ফিরবে না। যে সেতু আজ গোটা দেশের গর্ব, সেই সেতুই কেড়েছে তার মা-কে।