নিজস্ব প্রতিনিধি, ঢাকা: আমের রাজা ফজলি’র মালিকানা নিয়ে লড়াইয়ে জড়িয়েছে রাজশাহী ও চাঁপাই নবাবগঞ্জ। আর সেই লড়াইয়ের ফলে আটকে গিয়েছিল বিখ্যাত আমের জিআই সনদ। শেষ পর্যন্ত সেই বিরোধের মীমাংসা করতে ফজলি আমের ডিএনএ পরীক্ষা করা হয়েছে। আগামিকাল মঙ্গলবারই ওই পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হবে, আর তার পরেই পরিস্কার হয়ে যাবে ফজলির মালিকানা কার। যদিও ওই ফল প্রকাশের আগেই সামাজিক মাধ্যমে রীতিমতো তরজায় জড়িয়েছে দুই জেলার বাসিন্দারা।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১৭ সালের প্রথম দিকে রাজশাহীর বাঘার ফজলি আমের জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি চেয়ে আবেদন জানায় রাজশাহী ফল গবেষণা কেন্দ্র। আবেদন খতিয়ে দেখে গত বছরের ৬ অক্টোবর বাঘার ফজলি আমকে রাজশাহীর নিজস্ব পণ্য হিসেব স্বীকৃতি দিয়ে জার্নাল প্রকাশ করে পেটেন্ট, ডিজাইন ও ট্রেডমার্কস অধিদফতর। আর তার পরেই বিরোধের সূত্রপাত। ফজলি আম’কে নিজেদের অঞ্চলের দাবি করে আপত্তি জানায় চাঁপাইনবাবগঞ্জ কৃষি অ্যাসোসিয়েশন। দুই জেলার পক্ষ থেকে নিজেদের দাবির স্বপক্ষে নানা নথি জমা দেওয়া হয়।
পুরো নথি অনুযায়ী, ১৯১২ থেকে ১৯২২ পর্যন্ত করা ‘সার্ভে অ্যান্ড সেটেলমেন্ট অপারেশনস ইন দি ডিস্ট্রিক্ট অফ রাজশাহী’র রিপোর্টের ১৬ নম্বর পাতায় স্পষ্টভাবে ‘দি বাঘা ম্যাঙ্গো’ বা বাঘার আম লেখা আছে। যা কলকাতায় বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে বলেও উল্লেখ রয়েছে। হেরিটেজ রাজশাহীর সভাপতি প্রাক্তন পুলিশ আধিকারিক মাহবুব সিদ্দিকীর ‘আম’ বইটির অষ্টম অধ্যায়ে আমের জাত বিভাগে ৯৭ পাতায় উল্লেখ রয়েছে বাঘার ফজলির পরিচিতি অন্তত দুশো বছরের। প্রায় ৫০০ বছর আগে রাজশাহীর বাঘায় নির্মিত ঐতিহাসিক মসজিদের অংশে টেরাকোটার কারুকাজেও আমের ছবি দেখা যায়। গবেষকদের মতে, কারুকাজ করা এই আম ফজলি আমেরই প্রতিচ্ছবি।
রাজশাহীর ফল গবেষণা কেন্দ্রের সিনিয়র বিজ্ঞানী হাসান ওয়ালিউল্লাহর মতে, ফজলি রাজশাহীরই পণ্য এটা প্রমাণিত। ভৌগলিক সীমানা নির্ধারণ ছাড়াও ফজলি আমের ডিএনএ সিকোয়েন্স জমা দেওয়া হয়েছে। জমা দেওয়ায় হয়েছে বাঘার ফজলির ইতিহাস ও সংস্কৃতিও। কাজেই ফজলি রাজশাহীরই আম।’ চাঁপাই নবাবগঞ্জ কৃষি অ্যাসোসিয়েশন অবশ্য দাবি করেছে, ফজলি আমের জিআই সনদ পাওয়ার যাবতীয় অধিকার তাদের।