এই মুহূর্তে

WEB Ad Valentine 3

WEB Ad_Valentine

বাংলার ডাকাত কালী: জনশ্রুতি এবং ইতিহাস (পর্ব সাত)

নিজস্ব প্রতিনিধি: প্রাচীন কাল থেকেই অবিভক্ত বাংলাদেশে ডাকাতির সঙ্গে কালীপুজো ও তন্ত্রসাধনার এক সুনিবিড় যোগাযোগ রয়েছে। সেই আদিকাল থেকেই ডাকাতদল ডাকাতি করতে যাওয়ার আগে কালীপুজো করতেন। তাঁদের পুজোর ধরণ ছিল যেমন আলাদা, তেমনই রীতিনীতি ছিল তাৎপর্যপূর্ণ। যা আজও কিছুটা ইতিহাসের পাতায় এবং অধিকাংশই জনশ্রুতিতে রয়ে গিয়েছে। আমরা সেরকমই কয়েকটি ডাকাত কালী মন্দিরের অজানা ইতিহাস এবং পুজোর রীতি ধারাবাহিকভাবে জানাবো।

বাঁকুড়ি সোনামুখীর ‘মাই-তো-কালী’

বাঁকুড়ার সোনামুখী শহরের ইতিহাস বেশ প্রাচীন। এই শহরে কালীপুজোরও রমরমা। তবে সোনামুখীর ৪০০ বছরের বেশি পুরোনো ‘মাই-তো-কালী’ পুজো নিয়ে নানান জনশ্রুতি ও উপাখ্যান আজও লোকমুখে ফেরে। জানা যায় এই অঞ্চলে বর্গীদের আক্রমণ হতো মাঝে মধ্য়েই। সেবার ১৭৪২ সালে মারাঠা সেনাপতি ভাস্করপণ্ডিত বর্গীদের একটি দল নিয়ে বিষ্ণুপুর থেকে সোনামুখী পৌঁছে যান। তাঁরা অবাধে লুটপাট ও হত্যা করতে থাকেন। বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্র-সহ মুখে ‘হর হর বোম বোম’ বোল তুলে তাঁরা পৌঁছে গিয়েছিল বর্তমান সোনামুখীর রানিরবাজার এলাকায় মা কালীর মন্দিরের সামনে। সেই সময় এই এলাকা ছিল গভীর জঙ্গলে পরিপূর্ণ এবং কার্যত জনমানবশূন্য।

জনশ্রুতি সেদিন সন্ধ্যের মুখে ওই মন্দিরে তখন এক বৃদ্ধ গিয়েছিলেন মায়ের মন্দিরে বাতি জ্বালাতে। তিনি ঘটের কাছে প্রদীপ জ্বালিয়ে বলিস্থানে হাড়িকাঠের সামনে প্রণাম করছিলেন তিনি। সেই সময় এক বর্গী দস্যু সর্দার একটি খাঁড়া উঠিয়ে প্রণামরত বৃদ্ধকে বলি দিতে উদ্যত হয়। জানা যায় তাঁর খাঁড়া আর নীচে নামেনি। এবং ওই প্রদীপের আলোয় চোখ ধাঁধিয়ে অন্ধ হয়ে যান ওই সর্দার। পরে ওই বৃদ্ধের চেষ্টাতেই সর্দার দৃষ্টি শক্তি ফিরে পান। মা কালীর অলৌকিক রূপ দেখে ভয়ে বর্গীদল জানিয়ে দেয় তাঁরা আর লুটপাট করবে না। এর পরেই বাজনা বাজাতে বাজাতে ‘মাঈ-ত কালী হ্যায়, মাঈ-ত কালী হ্যায়’ বলতে বলতে সোনামুখী ছেড়ে চলে যায় বর্গিদল। সেই থেকেই এই কালী মন্দিরের নাম হয়ে যায় ‘মাই-তো-কালী’।

বলির সময় কেঁপে ওঠে মানিকোড়ার কালী

মালদার হবিবপুর থানা এলাকার মানিকোড়ার কালী। আজও কান পাতলে স্থানীয় জনশ্রুতি এবং এই কালীর মাহাত্ম্যের বহু হাড়হিম করা গল্প শোনা যায়। এক সময় ডাকাতদের হাতে পূজিতা হতেন ‘মানিকোড়া কালী’। সময় বদলেছে পুজোর উদ্যোক্তারাও বদলেছে। কিন্তু প্রাচীন রীতি আজও বর্তমান। আজও বলির সময় দেবী মূর্তিকে লোহার শিকল দিয়ে বেঁধে রাখার প্রচলন রয়েছে। এই রীতির পিছনে বহু গল্প রয়েছে। জনশ্রুতি ৩০০ বছরের বেশি সময় আগে এই অঞ্চলে প্লাবিত পুনর্ভবা নদী পেরিয়ে রাতের অন্ধকারে এক দল ডাকাত জঙ্গলে ঘেরা মানিকোড়ায় এই দেবীর পুজো দিতে আসতো। রাতের অন্ধকারে পুজো দিয়ে ভোরের আলো ফোটার আগেই তাঁরা নিজেদের ডেরায় ফিরে যেত।

পরবর্তী সময় ডাকাতদের রমরমা কমে যায়। ফলে জঙ্গলে ঘেরা এই মন্দির কার্যত পরিত্যাক্ত হয়ে পড়ে। এরপর স্থানীয় এক জমিদার ভৈরবেন্দ্র নারায়ণ রায় জঙ্গলে ঘেরা এই পরিত্যক্ত পুজোর বেদি খুঁজে পান। তাঁরই উদ্যোগে ফের শুরু হয় পুজো। আজ অবশ্য পুজো পরিচালনা করেন স্থানীয় মানুষরাই। কথিত আছে এখানে অমাবস্য়ার গভীর রাতে ডাকাত দল মশাল জ্বালিয়ে পুজো করতেন মা কালীর। সেই সময় দেওয়া হল ছাগ বলি। সেসময় দেবীমূর্তি কেঁপে ওঠে। পাঁঠা বলির সময় মায়ের মূর্তি সামনের দিকে ঝুঁকে পড়তে চায়। তাই মূর্তি যাতে পড়ে না যায় তার জন্য মায়ের মূর্তি লোহার শেকল দিয়ে বেঁধে রাখতো ডাকাত দল। বর্তমানে মায়ের চক্ষু দান ও পাঁঠা বলির সময় দেবীর মুখ কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখা হয়। আরেকটি গল্প প্রচলিত এই মানিকোড়ার কালী নিয়ে। স্থানীয়দের মুখে মুখে ফেরে এই গল্প। কোনও এক সময় গ্রামে শাখা ফেরি করতে এসেছিলেন শাঁখারি। গ্রামের পথে এক বালিকা তার কাছে শাঁখা পরতে চায়। শাঁখারি তার হাতে শাঁখা পরিয়ে দেন। কিন্তু দাম চাইতেই ওই বালিকা বলে ওঠেন, তার কাছে পয়সা নেই, শাঁখার দাম তার বাবা দেবেন।

সেই বালিকা বলে, তার বাবা কালী মন্দিরের সেবায়েত। শাঁখারি কালী মন্দিরে গিয়ে সেবায়েত-এর কাছে শাঁখার দাম চাইতেই অবাক হয়ে যান ওই সেবায়েত। তিনি বলেন, তাঁর কোন মেয়ে নেই। কে শাখা পরেছে? হঠাৎ তাঁর নজর যায় পাশের পুকুরের দিকে। দেখতে পান জলের উপরে একটি মেয়ে দুই হাত উঁচু করে রয়েছে। দু’টি হাতে রয়েছে একজোড়া নতুন শাঁখা। মুহূর্তে সেবায়েত বুঝে যান, ওই মেয়ে আর কেউ নন, স্বয়ং মা কালী। মুহুর্তের মধ্যেই শাখার দাম মিটিয়ে দেন তিনি। বর্তমানে প্রতি শনিবার ও মঙ্গলবার ছাড়াও আষাঢ়, কার্তিক, অগ্রহায়ণ মাসে দেবীর বিশেষ পুজো হয়।

Published by:

Ei Muhurte

Share Link:

More Releted News:

গন ভাইফোঁটার পরিকল্পনা নিয়েছে বসিরহাটের ‘নবোদয় সংঘ’

বনগাঁ থানার এবারের কালীপুজোর থিম ‘ কৈলাস পর্বতে মহাদেব’

বাঁকুড়ার সাঁতরা বাড়ির “বড় বৌমা” পূজিত হলেন মা কালীর রূপে

নৈহাটির বড়মার পুজোয় ভক্তদের ভিড়

তারাপীঠে সারারাত খোলা থাকছে গর্ভ গৃহের দরজা

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রয়েছেন উপবাস, নিজের হাতে রান্না করলেন ভোগ

Advertisement
এক ঝলকে
Advertisement

জেলা ভিত্তিক সংবাদ

দার্জিলিং

কালিম্পং

জলপাইগুড়ি

আলিপুরদুয়ার

কোচবিহার

উত্তর দিনাজপুর

দক্ষিণ দিনাজপুর

মালদা

মুর্শিদাবাদ

নদিয়া

পূর্ব বর্ধমান

বীরভূম

পশ্চিম বর্ধমান

বাঁকুড়া

পুরুলিয়া

ঝাড়গ্রাম

পশ্চিম মেদিনীপুর

হুগলি

উত্তর চব্বিশ পরগনা

দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা

হাওড়া

পূর্ব মেদিনীপুর