নিজস্ব প্রতিনিধি: কথায় আছে ‘কালী কলকাত্তাওয়ালি’। সম্ভবত কলকাতার কালীঘাটের কালীমন্দির থেকেই দেশ-বিদেশে ছড়িয়েছে এই প্রবাদটি। তবে কলকাতায় একমাত্র কালীঘাট নয়, আছে আরও বেশ কয়েকটি প্রাচীন ও ঐতিহাসিক কালী মন্দির। যারমধ্যে একটি ট্যাংরার চায়না টাউনে চাইনিজ কালী মন্দির (Chinese Kali Temple)। এই মন্দিরে পুজোর সমস্ত দায়িত্ব ও পরিচালনা করেন চিনারাই। এই মন্দিরে মায়ের নিত্যপুজো করেন এক চিনা পুরোহিত। যদিও তিনি শুধুমাত্র মা কালীর পুজো করবেন বলে নিজের বৌদ্ধধর্ম পরিত্যাগ করে হিন্দুধর্মে দিক্ষিত হয়েছেন। পাশাপাশি এখানে মা কালীর নিত্য সেবা করেন এই অঞ্চলের খ্রীষ্টান ও বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীর চিনারা। এই মন্দিরে কষ্টিপাথরের একটি কালীমূর্তির পাশে একটি শিবমূর্তিও রয়েছে।
পূর্ব কলকাতার এই চিনা পাড়ার আলাদাই ঐতিহ্য রয়েছে। অনেকটা তিব্বতি স্টাইলের অলিগলিতে পুরনো কলকাতা মেজাজ ধরা পড়ে প্রতিটি বাঁকেই। একই সঙ্গে এখানে পূর্ব এশিয়ার ছাপও রয়েছে। তবে এই চায়না টাউনের মূল আকর্যণ অবশ্যই চাইনিজ খাবার। ফলে সন্ধ্যা নামতেই প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ ছুটে আসেন এখানকার নামী-দামী রেস্তরাঁ থেকে শুরু করে পানশালায়। এছাড়াও ফাস্টফুডের স্টলগুলিতেও ভিড় করেন অনেকে। কিন্তু সবকিছুকে ছাপিয়ে যায় অবশ্যেই চাইনিজ কালী মন্দির। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই যেখানে প্রসাদে মেলে মিষ্টি ও ফল। সেখানে এই মন্দিরে প্রসাদে পাবেন চাইনিজ খাবার। মূলত নুডলস, চাউমিন, চপসয় বা স্টিকি রাইস। কালীপুজো বা দীপাবলিতে ট্যাংরার চাইনিজ কালী মন্দির সেজে ওঠে চিনা স্টাইলে।
জানা যায় আজ থেকে প্রায় ৬৫-৬৬ বছর আগে এই মন্দির প্রতিষ্ঠা হয়েছিল। কথিত আছে, বহু বছর আগে এক বৌদ্ধ চিনা দম্পতির সন্তান অসুস্থ রয়ে পড়ে। কোনও চিকিৎসকই তাঁকে বাঁচানোর পথ খুঁজে পাচ্ছিলেন না। কোনও আশা না পেয়ে ওই বৃদ্ধ দম্পতি এই এলাকার একটি গাছের নীচে থাকা দুটি পাথরের সামনে হত্যে দিয়ে পড়েছিলেন। এরপরই অলৌকিকভাবে তাঁর সন্তান সুস্থ হয়ে ওঠেন। তাঁরা বুঝতে পারেন শক্তির প্রতীক মা কালীর কৃপায় তাঁদের সন্তান সুস্থ হয়েছে। এরপরই চিনা পাড়ায় কালী মন্দির গড়ে ওঠে ওই গাছের নীচে। আজও এখানে আসেন চিনা বৌদ্ধ ও খ্রীষ্ট ধর্মাবলম্বীরা। কালীপুজোর দিন সন্ধ্য়ারতিতে অংশ নেন তাঁরা। মন্দিরের সামনে জ্বেলে দেন বিশেষ লম্বা মোমবাতি ও চিনা ধুপ। আর বিশেষ চিনা কায়দায় তাঁরা আরতি করেন মা কালীর।