নিজস্ব প্রতিনিধি: সারা বঙ্গদেশেই কালীপুজো হয়ে আসছে সেই প্রাচীন কাল থেকে। একসময় ডাকাতদের হাতে কালীপুজোর সূচনা হলেও জমিদাররাও ডাকাতদের হাত থেকে বাঁচতে কালীপুজো করতেন। সবচেয়ে বড় আশ্চর্যের বিষয় হল বাংলায় বিভিন্ন এলাকার প্রাচীন কালীপুজোর রীতিনীতিও ভিন্ন ভিন্ন। আর মা কালীর নামও সেই রীতি অনুয়াযী আলাদা আলাদা।
বড়ই অদ্ভুত সব রীতি ও নাম। যেমন দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার অন্যতম ও ঐতিহ্যবাহী হল কুশমণ্ডি ব্লকের আমিনপুর গ্রামের ‘মাটিয়া কালী’। এখানে মাটির থানেই পুজো হয়, আবার মাটিতেই মিলিয়ে যায় মা কালী। ৫০০ বছরের বেশি পুরোনো এই পুজো আজও পুরোনো রীতি-রেওয়াজ মেনেই খোলা আকাশের নীচে হয়। তাই একে ‘মাটিয়া কালী’ বলেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
কেন খোলা আকাশের নীচে হয় পুজো, সেই নিয়ে একটি গল্প প্রচলিত রয়েছে। প্রায় ৫০০ বছর আগে আমিনপুর গ্রামের জমিদার যোগেন্দ্র নারায়ণ রায় চৌধুরীর হাত ধরেই শুরু হয়েছিল এই পুজো। কথিত আছে, ওই জমিদারকে দেবী স্বপ্নাদেশে জানিয়েছিলেন, তিনি মাটিতেই সুখে-শান্তিতে রয়েছেন। তাঁর মাথার উপর যেন কোনও ছাদ না হয়। সেই থেকে খোলা আকাশের নীচে মাটির একটি বেদিতে হয় পুজো। সারা বছর ওই মাটির বেদিতেই পুজো হয়। আর কালীপুজোর দিন হয় মূর্তিপুজো। জনশ্রুতি এই এলাকার জমিদার যোগেন্দ্র নারায়ণ রায় চৌধুরীর পূর্বপুরুষরা একসময় ইংরেজদের সঙ্গে যুদ্ধ করেছিলেন।
কথিত আছে যুদ্ধে যাওয়ার আগে তাঁরা রটন্তী কালীপুজো করে গিয়েছিলেন। এবং সেই যুদ্ধে জয়লাভও করেন। সেই থেকেই ওই গ্রামে রটন্তী কালী পুজো হয়ে আসছিল। পরবর্তীকালে দেবীর স্বপ্নাদেশ পেয়ে পুজো হয় খোলা আকাশের নীচে মাটির বেদিতে। বর্তমানে গোটা আমিনপুর গ্রামের প্রধান অভিভাবকই হলেন মাটিয়া কালী। দীপান্বিতা অমাবস্যায় মাটিয়া কালীর পুজোয় পাঁঠাবলি দেওয়ার চলও রয়েছে।