নিজস্ব প্রতিনিধি: কাঞ্চননগরের মা কঙ্কালেশ্বরী। জানা যায় এখানে কালীমূর্তিটি প্রায় দু’হাজার বছরেরও বেশি প্রাচীন। এই মূর্তির বৈশিষ্টও বেশ অবাক করা। একটি বড় ব্যাসল্ট পাথরের ওপর খদিত মূর্তি। মূর্তিটি মানব কঙ্কালের গড়নে, তবে মূর্তির গায়ে মানব শরীরের ন্যায় শিরা, উপশিরা ও স্নায়ুতন্ত্র নিখুঁদভাবে খোদিত। ঐতিহাসিকদের মতে এই ধরণের মূর্তি আর্য্যপূর্ব যুগের। আবার ঐতিহাসিকদের একাংশ মনে করেন মূর্তিটি পাল যুগে নির্মিত হয়েছিল। অর্থাৎ প্রায় দু’হাজার বছরেরও বেশি সময়কার। প্রাচীন পুঁথি থেকে জানা যায়, মূর্তিটি ১৭০০ শতকে দামোদর নদের তীরে পাওয়া গিয়েছিল। মূর্তির গড়ন দেখে লোকমুখে এটি কঙ্কালেশ্বরী কালী নামেই পরিচিত হয়ে যায়।
পূর্ব বর্ধমানের কাঞ্চননগরে এই মন্দিরের পরতে পরতে জড়িয়ে রয়েছে নানা ইতিহাস, লোকগাথা। তবে মূল মন্দিরটি কে বা কারা নির্মান করিয়েছিলেন সেটা সম্পর্কে খুব বেশি তথ্য পাওয়া যায় না। মন্দিরটি নবরত্ন স্থাপত্যশৈলীতে নির্মিত।
অনেকের মতে মন্দিরটি নির্মান হয়েছিল ১৯১৩ বা ১৯১৬ সালে। আবার অনেকের মতে এটি আরও পুরোনো, নির্মানকাল আনুমানিক ১৪৮৬ থেকে ১৫৩৩ সাল। তবে ঐতিহাসিকদের একটা বড় অংশের মতে ১৯১৩ সালের ভয়াবহ বন্যা হয়েছিল দামোদর নদে। জল নামতেই নদীগর্ভে পাওয়া যায় মূর্তিটি। স্থাপন কর হয় ওই নবরত্ন মন্দিরে।
আরেকটি মতে পাওয়া যায় কমলানন্দ প্ররিব্রাজক নামে এক সাধক মূর্তি স্বপ্নাদেশে পান। এবং সেটি উদ্ধার করে এনে এই মন্দিরে প্রতিষ্ঠা করেন। আবার এক জনশ্রুতি অনুযায়ী দামোদরের বাম তীরে বারোদুয়ারি গ্রামে মাটি থেকে উঠে এসেছিল পাথরখণ্ড। স্থানীয়রা সেটির উপর কাপড় কাচার কাজ করতেন। কিন্তু এক সময় ওই পাথর পরিস্কার হয়ে তাতে অপরূপ দেবীমূর্তি প্রকট হয়। পরে গ্রামবাসীদের কাছে এই কথা জানতে পারেন বর্ধমানের মহারাজ বিজয়চাঁদ। তিনিই এই মূর্তি উদ্ধার করে একশো চুয়ান্ন শতক জমি দান করে কঙ্কালেশ্বরী মন্দির প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।
মূল মূর্তিটি তিন ফুট চওড়া এবং পাঁচ ফুট উচু। অখণ্ড একটি পাথরেই খোদাই করা মূর্তি। দেবীর আটটি হাত, চারটি হাতে রয়েছে অস্ত্র অসি, খর্পর, ত্রিশূল ও খড়গ। উপরের বাঁ দিকের হাতে জয় পতাকা। ডান দিকের হাতটি চিবুকে দিয়ে বিষন্নতায় ভরা মুখমণ্ডল। নীচের দুটি হাতে বাদ্যঘণ্টা ও কাটা মুণ্ড। বিগ্রহের মাথার পিছনে দুটি হাতির মাথা। কণ্ঠে রুদ্রাক্ষ ও মুণ্ডমালা। দেবী ত্রিনয়না এবং মাথায় মুকুট। দেবীর পুরো শরীর কঙ্কালসার। দেহে ফুটে উঠেছে শিরা-উপশিরা ও স্নায়ুতন্ত্র। এই মন্দিরে প্রতিদিন চামুণ্ডা মতে নিত্যপুজো হয়। আর দীপান্বিতা অমাবস্যার দিন হয় বিশেষ পুজো।