এই মুহূর্তে




ওলা-উবেরের ‘দাদাগিরি’র দিন শেষ! ড্রাইভার ও যাত্রীদের জন্য ট্যাক্সি সার্ভিস আনছে সরকার

নিজস্ব প্রতিনিধি: কল্পনা করুন তো, একজন ট্যাক্সি চালক দিনের শেষে হিসেব কষছেন, আর দেখছেন উপার্জনের একটা মোটা অংশ কমিশন বাবদ নিয়ে যাচ্ছে অ্যাপ-সংস্থাগুলি। অন্যদিকে যাত্রীরা? হঠাৎ করে চড়া দাম, নোংরা গাড়ি অথবা বুকিং বাতিল হওয়ার মতো হাজারো ঝামেলার শিকার। এই সমস্যার দিন এবার শেষ! সরকার নিয়ে এসেছে এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ—নাম তার ‘ভারত ট্যাক্সি’। এটি দেশের প্রথম সমবায়ভিত্তিক (কো-অপারেটিভ) ট্যাক্সি সার্ভিস, যা চালকদের হাতে তুলে দেবে তাঁদের আয়ের শতভাগ, আর যাত্রীদের দেবে সস্তা ও নির্ভরযোগ্য যাত্রার প্রতিশ্রুতি। চলুন জেনে নেওয়া যাক এই নতুন ব্যবস্থা সম্পর্কে বিস্তারিত।

ভারত ট্যাক্সি কী?

ভারত ট্যাক্সি কোনও বেসরকারি সংস্থার অ্যাপ্লিকেশন নয়, বরং এটি একটি সমবায় প্রতিষ্ঠান, যার নাম ‘সহকার ট্যাক্সি কো-অপারেটিভ লিমিটেড’। এটি একটি নতুন ধরনের ব্যবসায়িক মডেল, যেখানে লাভ চলে যাবে সরাসরি চালকদের পকেটে।

  • যাত্রা শুরু: জুন ২০২৫-এ ৩০০ কোটি টাকার প্রাথমিক মূলধন নিয়ে এর পথচলা শুরু হয়েছে।
  • কারা তৈরি করেছে: সরকারের সমবায় মন্ত্রক (Ministry of Cooperation) এবং ইলেকট্রনিক্স ও আইটি মন্ত্রকের অধীনস্থ ন্যাশনাল ই-গভর্ন্যান্স ডিভিশন (NeGD) যৌথভাবে এই প্ল্যাটফর্মটি তৈরি করেছে।
  • কেন্দ্রীয় সমবায় ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ চলতি বছরের মার্চে লোকসভায় এই পরিষেবার কথা ঘোষণা করেছিলেন। তাঁর দাবি, ‘এই সার্ভিস ড্রাইভারদের সম্মান ফিরিয়ে আনবে। কোনও ধনকুবেরের পকেট ভরবে না, সব লাভ ড্রাইভারদের।’

কেন এই উদ্যোগ জরুরি?

ওলাউবেরের মতো বেসরকারি রাইড-শেয়ারিং অ্যাপগুলিতে চালকদের উপার্জনের প্রায় ২৫% পর্যন্ত কমিশন হিসেবে দিতে হয়। এর ফলে তাঁদের প্রকৃত আয় অনেক কমে যায়। অন্যদিকে, যাত্রীদেরও অভিযোগ ছিল—ভাড়ার ওঠানামা (সার্জ প্রাইসিং), গাড়ির মান এবং ঘন ঘন বুকিং বাতিলের মতো বিষয়ে।

ভারত ট্যাক্সি এই সমস্যাগুলোর সমাধান আনছে। এই প্ল্যাটফর্মে চালকদের বলা হবে ‘সারথিঅর্থাৎ তারা যথার্থ সম্মান পাবেন। এটি শুধু যাতায়াতের ব্যবস্থা নয়, বরং এটি বিশ্বাস এবং স্বচ্ছতার ওপর তৈরি হওয়া একটি সেতু।

কীভাবে কাজ করবে?

ভারত ট্যাক্সি মডেলটি সহজ এবং স্বচ্ছতার ওপর ভিত্তি করে তৈরি।

  • চালকদের জন্য: ড্রাইভাররা মেম্বারশিপ ফি দিয়ে (তা দৈনিক, সাপ্তাহিক বা মাসিক হতে পারে) প্ল্যাটফর্মে যোগ দেবেন। একবার যুক্ত হলে, প্রতি রাইডের উপর কোনও কমিশন দিতে হবে না—১০০% আয় সরাসরি চালকের পকেটে যাবে। এই অর্থনৈতিক স্বাধীনতা তাঁদের আত্মবিশ্বাস এবং জীবনযাত্রার মান বাড়াতে সাহায্য করবে।
  • যাত্রীদের জন্য: যাত্রীরা অ্যাপের মাধ্যমে বুকিং করতে পারবেন। ভাড়া হবে স্বচ্ছ ও সস্তা, কারণ এতে কমিশনের চাপ থাকবে না। হুট করে দাম বাড়ানো (সার্জ প্রাইসিং) বা বাতিল করার মতো কোনও ঝামেলা থাকবে না।
  • সরকারি তত্ত্বাবধান: পুরো ব্যবস্থাটি সরকারের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হবে, যা এই সার্ভিসের প্রতি মানুষের আস্থা বাড়াবে। আমুল-এর এম.ডি. জৈন মেহতা এই গভর্নিং কাউন্সিলের চেয়ারম্যান এবং NCDC-র ডেপুটি এম.ডি. রোহিত গুপ্ত কো-চেয়ারম্যান হিসেবে রয়েছেন।

লঞ্চের টাইমলাইন

আগামী মাসে অর্থা‍ৎ নভেম্বরে দিল্লিতে পাইলট প্রজেক্ট শুরু হবে। প্রথম পর্যায়ে ৬৫০টি গাড়ি ও তাঁদের মালিক-ড্রাইভাররা অংশ নেবেন। প্রায় ,০০০ ড্রাইভার, যাঁদের মধ্যে মহিলারাও থাকবেন, ইতিমধ্যেই প্রস্তুত। পাইলট প্রজেক্ট সফল হলে ডিসেম্বর থেকে অন্যান্য বড় শহরেও এটি চালু হবে। লক্ষ্য, মার্চ ২০২৬-এর মধ্যে সব মেট্রো শহরে পৌঁছে যাওয়া এবং ২০৩০-এর মধ্যে এক লক্ষেরও বেশি ড্রাইভারকে সংযুক্ত করা। এই মডেল সফল হলে লক্ষ লক্ষ চালক-যাত্রীর জীবন বদলে যাবে, বেসরকারি সংস্থার খামখেয়ালি বা একাধিপত্যের দিন শেষ হবে।

 

Published by:

Ei Muhurte

Share Link:

More Releted News:

লালকেল্লা বিস্ফোরণকাণ্ডে বিরাট সাফল্য NIA-র, শ্রীনগর থেকে গ্রেফতার আত্মঘাতী জঙ্গি উমরের সহযোগী

কর্নাটকের চিড়িয়াখানায় ৪ দিনে ৩১ টি কৃষ্ণসার হরিণের মৃত্যু, কর্তৃপক্ষের ভূমিকায় প্রশ্ন

‘দিল্লি বিস্ফোরণে জড়িতদের পাতাল থেকে খুঁজে এনে কঠোর শাস্তি দেব’, হুঙ্কার অমিতের

সৌদি আরবে ভয়াবহ বাস দুর্ঘটনায় হায়দরাবাদের একই পরিবারের ১৮ সদস্যের মর্মান্তিক মৃত্যু

ইউনূসের আবদার মানছে দিল্লি, ফেরত পাঠানো হচ্ছে না হাসিনাকে

আরজেডি বিধায়ক দলের নেতা হিসাবে ফের নির্বাচিত তেজস্বী

Advertisement
এক ঝলকে
Advertisement

জেলা ভিত্তিক সংবাদ