24ºc, Haze
Thursday, 23rd March, 2023 3:26 am
নিজস্ব প্রতিনিধি: বড় দুর্গার কারিগর, অথচ এবছর তেমন কাজ নেই হাতে। শহরের আনাচে-কানাচে যে ক’টা থিমের পুজো হচ্ছে, তার বায়নাও পেয়েছে আর্ট কলেজের ছাত্ররা। তাই হাতে গোনা কয়েকটি কাজ নিয়ে সন্তুষ্ট থাকতে হচ্ছে শ্যাম হাজরা, তরুণ মণ্ডলদের।
এত বড়, সত্যি! ২০১৫ সালে দুর্গাপুজোর আগে এই পোস্টারেই ছেয়ে গিয়েছিল সারা কলকাতা। তারপর চতুর্থী থেকেই বড় দুর্গার দর্শন শুরু হয়ে গিয়েছিল দেশপ্রিয় পার্কে। বিশ্বের সবচেয়ে বড় দুর্গা, ৮০ ফুটের ফাইবারগ্লাসের প্রতিমা দেখতে উপচে পড়েছিল ভিড়। শেষমেষ পদপিষ্ট হয়ে প্রাণও হারাতে হয়েছিল বেশ কয়েকজনকে। তারপর তৎকালীন কলকাতার পুলিশ কমিশনার সুরজিৎ কর পুরকায়স্থর নির্দেশে বন্ধ হয়ে যায় বড় দুর্গা দর্শন। ওই প্রতিমা এখনও সংরক্ষণ করা আছে ইকো পার্কে। সাধারণ মানুষের জন্য রয়েছে দর্শনের সুযোগ। তবে যাঁরা তৈরি করেছিলেন ওই মূর্তি, তাঁরা কেমন আছেন?
বড় দুর্গা তৈরি করার জন্য শিল্পী মিণ্টু পালের নাম ওঠে গিনেস বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডে। কিন্তু তাঁর একার পক্ষে মোটেই অতবড় দুর্গা তৈরি করা সম্ভব নয়। বরং তাঁর ভাবনা বাস্তবায়িত করেছেন শ্যাম, তরুণরাই। তাঁরা জানালেন, চতুর্থীর মধ্যে প্রতিমা সম্পন্ন করে দেওয়া হলেও মজুরির পুরো টাকা অবশ্য এখনও মেলেনি। কেন মেলেনি, তার কারণও স্পষ্ট নয়। তবে প্রায় ৬ বছর আগের সেই স্মৃতি আর মনে রাখতে চান না তাঁরাও। বরং বর্তমান বাজার নিয়েই শিল্পীরা বেশি চিন্তিত। চলতি বছরে হাতে গোনা কয়েকটা বায়না পেয়েছেন তাঁরা। সেই কাজই করছেন হাসতে-খেলতে। শিল্পী শ্যাম হাজরা বললেন, ‘আর মাত্র মাসখানেক বাকি পুজোর। অন্যান্য বছরে এই সময় সমস্ত বায়না চলে আসত। সেই কাজ সারতে নাওয়া-খাওয়া পর্যন্ত ভুলে যেতে হত। কিন্তু গতবছরের মতো এবারও এখনও পর্যন্ত মাত্র হাতে গোনা কয়েকটা কাজের বায়না মিলেছে।’
ছোট বেলা থেকেই মাটি, কাঠামো, সোলার কাজে হাতে খড়ি। বাবা-কাকাদের দেখেই কাজ শেখা। আর্থিক অভাবের জেরে অবশ্য পড়াশোনা বেশিদূর এগোয়নি। আর তার ফল ভুগতে হচ্ছে আজও। তরুণ মণ্ডল বলেন, ‘আমাদের ডিগ্রি নেই, তাই পুজো উদ্যোক্তারা শুধুমাত্র আর্ট কলেজের ছাত্রছাত্রীদেরই থিমের কাজের বায়না দেয়। তাঁরা যদিও আমাদের কাছেই আসে। কাজটা আমরাই করি, অথচ তার সঠিক পারিশ্রমিক পাই না।’ এবছরও শহরের অনেক জায়গাতেই ছোট করে হলেও হচ্ছে থিমের পুজো। কিন্তু সেই কাজও জোটেনি। ফলে পুজোর সময় সন্তানদের নতুন জামা-কাপড় কিনে দেওয়াই এখন তাঁদের কাছে বড় চ্যালেঞ্জ। তবে তাঁদের মতো যাতে সন্তানদের ভুগতে না হয়, তার জন্য পড়াশোনা চালিয়ে যাওযার পণ নিয়ে নিয়েছেন। কিন্তু উচ্চশিক্ষিত হয়ে তাঁদের সন্তানরা কি আর এই কাজ করবেন? উত্তরে শিল্পীরা জানালেন, অবশ্যই করবে। কারণ ডিগ্রি থাকলেই বড় বায়না পাওয়া যায়। আর যদি কেউই না করে, তাহলে তো এই শিল্পই বিলুপ্ত হয়ে যাবে আগামীতে!