নিজস্ব প্রতিনিধি: প্রার্থীর কী বড়ই অভাব পড়িয়াছিল? নাহলে ২০১৪ সালে যে লোকটা ৩ লক্ষেরও বেশি ভোটে পিছিয়ে ছিল তাঁকেই কিনা আবারও ২৪’র ভোটে(Loksabha Election 2024) সেই আসনেই প্রার্থী করা হল! হ্যাঁ ঠিকই পড়ছেন। সব জল্পনা কল্পনার অবসান ঘটিয়ে, অবশেষে ডায়মন্ডহারবার লোকসভা(Daimond Harbour Constituency) কেন্দ্রে প্রার্থী দিল বিজেপি(BJP)। এই কেন্দ্রটি বাংলা তথা দেশের রাজনীতিতেও নজরকাড়া হয়ে গিয়েছে এই কারণে যেহেতু, এখানকার সাংসদ হলেন বাংলার শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসের(TMC) সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়(Abhishek Banerjee)। তিনি এই কেন্দ্রে এবারও প্রার্থী হচ্ছেন। এতদিন তাঁর বিরুদ্ধে প্রার্থীই খুঁজে পাচ্ছিল না বিজেপি। শেষে তাঁরা প্রার্থী হিসাবে দাঁড় করালো অভিজিৎ দাস(Abhijit Das) ওরফে ববিকে যে কিনা ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে এই ডায়মন্ডহারবার কেন্দ্র থেকেই বিজেপির প্রার্থী হয়ে দাঁড়িয়ে অভিষেকের কাছে ৩ লক্ষেরও বেশি ভোটে হেরেছিলেন। সেই অভিজিৎ এবারও বিজেপির হয়েই দাঁড়াচ্ছেন অভিষেকের বিরুদ্ধে।
গোটা দেশকে অবাক করে দিয়ে এই প্রথম লোকসভা নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘোষণার আগেই প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করে দিয়েছিল কোনও জাতীয় স্তরের রাজনৈতিক দল। দেশের ৫৪৩টি লোকসভা কেন্দ্রের মধ্যে ১৯৫টি কেন্দ্রের জন্য প্রার্থীদের তালিকার নাম গত ২ মার্চ সামনে আনে বিজেপি। সেই তালিকায় বাংলার ২০টি লোকসভা কেন্দ্রের প্রার্থীদের নাম থাকলেও সেখানে অবশ্য ডায়মন্ডহারবারের নাম ছিল না। পরবর্তীকালে দফায় দফায় বাংলার নানা আসনের জন্য প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেছে বিজেপি। কিন্তু ডায়মন্ডহারবারের মতো কেন্দ্রে প্রার্থীদের নাম কিছুতেই সামনে আনছিল না পদ্মশিবির। একই সঙ্গে রাজ্য রাজনীতিতে জল্পনা ছড়িয়েছিল যে, খোদ নরেন্দ্র মোদি নাকি বারাণসীর পাশাপাশি ডায়মন্ডহারবার থেকে প্রার্থী হবেন। বিজেপির নেতারা তো এই নিয়ে রীতিমত প্রকাশ্যে ঝড় তুলেছিলেন। কিন্তু শেষে দেখা গেল কিনা পর্বতের মূষিক প্রসব। আর কেউ সেখানে প্রার্থী হলেন না বিজেপির হয়ে। হলেন সেই অভিজিৎ দাস। যিনি ১০ বছর আগেই ৩ লক্ষ ভোটের ব্যবধানে অভিষেকের কাছে হেরে বসে আছেন।
২০০৯ সাল থেকেই ডায়মন্ডহারবার কেন্দ্রটি তৃণমূলের দখলে রয়েছে। সেবার এই আসন বামেদের কাছ থেকে ছনিয়ে এনেছিলেন প্রদেশ কংগ্রেসের প্রাক্তন সভাপতি সোমেন মিত্র। ২০১৪ সাল থেকে এই আসনে লড়াই করছেন অভিষেক। সেই বছরেই অভিজিৎ বিজেপির হয়ে ডায়মন্ডহারবারে প্রার্থী হয়েছিলেন। ওই নির্বাচনে অভিষেক পেয়েছিলেন ৫ লক্ষ ৮ হাজার ৪৮১টি ভোট। তিনি জিতেছিলেন ৭১ হাজার ২৯৮টি ভোতের ব্যবধানে। হারিয়েছিলেন বাম প্রার্থী আবুল হাসনাতকে যিনি পেয়েছিলেন ৪ লক্ষ ৩৭ হাজার ১৮৭টি ভোট। বিজেপি প্রার্থী অভিজিৎ পেয়েছিলেন ২ লক্ষ ৮৫৮টি ভোট। অর্থাৎ অভিষেকের থেকে ৩ লক্ষেরও বেশি ভোট কম পেয়েছিলেন অভিজিৎ। ২০১৯ সালে বিজেপি আর অভিজিৎকে প্রার্থী করেনি। পরিবর্তে প্রার্থী করে কংগ্রেস থেকে আসা নীলাঞ্জন রায়কে। তাতে অবশ্য অভিষেকের জয়ের পথে কোনও সমস্যা তৈরি হয়নি।
উনিশের ভোটে ডায়মন্ডহারবার কেন্দ্র থেকে অভিষেক জয়ী হন ৩ লক্ষ ২০ হাজার ৫৯৪ ভোটের ব্যবধানে। তিনি পেয়েছিলেন ৭ লক্ষ ৯১ হাজার ১২৭টি ভোট। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী নীলাঞ্জন পান ৪ লক্ষ ৭০ হাজার ৫৩৩টি ভোট। অর্থাৎ ওই বছর ওই কেন্দ্রে বিজেপির ভোট বেড়েছিল প্রায় ২ লক্ষ ৭০ হাজার। ওই নির্বাচনে তৃতীয় স্থানে ছিলেন বাম প্রার্থী ফুয়াদ হালিম যেনি মাত্র ৯৩ হাজারের সামান্য বেশি ভোট পেয়েছিলেন। আর এবার তো অভিষেক ডাকই দিয়েছেন ৪ লক্ষ ভোটের ব্যবধানে জেতার। তাই বোধহয় কোনও বড় পদ্মনেতা এখান থেকে প্রার্থী হতে চাইছিলেন না। শেষে ১৪’র ভোটে ৩ লক্ষেরও বেশি ভোটে হারা তৃতীয় স্থানে থাকা অভিজিৎকেই বেছে নিল পদ্মশিবির এবারের প্রার্থী হিসাবে।