নিজস্ব প্রতিনিধি: পর্দার পিছন থেকে কলাকাঠি নেড়ে দায়ের করা হচ্ছে একের পর এক জনস্বার্থ মামলা। কোনওটার পিছনে রয়েছে বাম নেতৃত্বের মাথা, কোনওটায় বা বিজেপির মাথা। এই কৌশল এবার বেশ ভালই বুঝতে পারছেন কলকাতা হাইকোর্টের(Calcutta High Court) বিচারপতিরাও। তাই জনস্বার্থের নাম করে দায়ের হওয়া রাজনৈতিক মামলাগুলিতে সুবিচার করতে তাঁরা বিন্দুমাত্র কার্পণ্য বোধ করছেন না। মঙ্গলবার সকালে সেই কারণেই কলকাতা হাইকোর্টে খারিজ হয়ে গেল নদিয়া জেলার কল্যাণী এইমসে(Kalyani AIIMS) নিয়োগ সংক্রান্ত দুর্নীতিতে সিবিআই(CBI) তদন্ত চেয়ে দায়ের করা মামলার আর্জি। এদিন কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি প্রকাশ শ্রীবাস্তবের ডিভিশন বেঞ্চ এই মামলার রায় দিতে গিয়ে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, সিবিআই তদন্তের এখনই কোনও প্রয়োজন নেই। যার অর্থ সিআইডি’র ওপরেই আস্থা রেখে এই ঘটনার তদন্ত চালু রাখার রাস্তা খুলে দিলে কলকাতা হাইকোর্ট। স্বাভাবিক ভাবেই এই রায়ে এখন সব থেকে বেশি অস্বস্তিতে পড়েছে গেরুয়া শিবির।
অভিযোগ উঠেছিল, কল্যাণীর এইমসে নিয়োগের ক্ষেত্রে দুর্নীতি হয়েছে। সেই দুর্নীতি আবার হয়েছে বিজেপিরই বিধায়ক ও এক কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর মাধ্যমে। সেখানে শুধু যে ‘বেআইনি ভাবে চাকরি বণ্টন’ হয়েছে তাই নয়, সেখানে ‘বিজেপি ঘনিষ্ঠদের চাকরি পাইয়ে দেওয়া’র অভিযোগও উঠেছে। সেই ঘটনারই তদন্ত শুরু করেছিল বিজেপি। বিজেপির যে দুইজন বিধায়ক ও কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর বিরুদ্ধে এই দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছিল তাঁরা হলেন বাঁকুড়ার বিজেপি(BJP) বিধায়ক নীলাদ্রি শেখর দানা(Niladri Shekhar Dana) এবং ওই জেলারই বিজেপি সাংসদ তথা কেন্দ্রীয় শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী সুভাষ সরকার(Subhash Sarakar)। অভিযোগ উঠেছিল নীলাদ্রি-কন্যা মৈত্রী দানা চাকরি পেয়েছেন ‘নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অংশ না নিয়েই’। ডেটা এন্ট্রি অপারেটর পদে মাসিক ৩০ হাজার টাকা বেতনের যে চাকরিটি মৈত্রীকে ‘পাইয়ে দেওয়া হয়েছে’, তাতে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সুভাষেরও ‘হাত’ থাকতে পারে। এ ছাড়াও রাজ্যের কয়েক জন বিজেপি নেতার ঘনিষ্ঠকে চাকরি দেওয়া হয়েছে কল্যাণী এইমসে।
এই নিয়েই রাজ্য সরকার সিআইডি(CID) তদন্তের নির্দেশ দেয়। কিন্তু কলকাতা হাইকোর্টে সেই তদন্তে স্থগিতাদেশ চাওয়ার পাশাপাশি কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিবিআই-কে দিয়ে তদন্ত করানোর আর্জি জানিয়ে জনস্বার্থ মামলা দায়ের করা হয়। সেই মামলারই রায় এদিন দিয়েছে আদালত। সেখানে পরিষ্কার বলে দেওয়া হয়েছে, এখনই এই ঘটনায় সিবিআই তদন্তের কোনও প্রয়োজন নেই। যার অর্থ ঘটনার তদন্তভার থাকছে সিআইডি’র হাতেই। এদিন আদালত কার্যত কল্যাণী এইমসে নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় সিবিআই তদন্তের আবেদন খারিজ করে দিয়েছে। আর এর জেরে এখন তীব্র অস্বস্তিতে পড়ে গেল গেরুয়া শিবির। কেননা তদন্তে যদি নীলাদ্রি শেখর দানা ও সুভাষ সরকার দোষী সাব্যস্ত হন তাহলে তাঁদের গ্রেফতারির সম্ভাবনা বেড়ে যাবে।