নিজস্ব প্রতিনিধি: ১১ মার্চ থেকে দেশজুড়ে লাগু হয়ে গিয়েছে Citizenship Amendment Act বা CAA। এটি কেন্দ্রীয় আইন। কেন্দ্র থেকেই দেশজুড়ে তা লাগু করা হয়েছে। সেই আইনের প্রত্যক্ষ বিরোধিতায় মুখ খুলেছেন দেশের ৩ রাজ্যের ৩ মুখ্যমন্ত্রী। এরা হলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়(Mamata Banerjee), তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী এম কে স্ট্যালিন এবং কেরলের মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন। যদিও কেন্দ্রের আইনের সরকারি স্তরে বিরোধিতা করা যায় না। তাই ৩ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী এই আইনের প্রয়োগ ঠেকাতে এখনও কিছুই করেননি। তবে রাজনৈতিক ভাবে তাঁরা সোচ্চার হয়েছেন। বিশেষ করে মমতা। কংগ্রেস এই আইন লাগু নিয়ে সোচ্চার না হলেও সুপ্রিম কোর্টে মামলা ঠুকেছে। দেশজুড়ে পরিস্থিতি বলছে পাকিস্তান, আফগানিস্তান ও বাংলাদেশ থেকে আসা সংখ্যালঘুদের পাশাপাশি হিন্দু ও শিখেরাও এই আইন নিয়ে বেশ উদ্বিগ্ন। সব থেকে বড় কথা এই আইনের মাধ্যমে মুসলিনরা এদেশের নাগরিকত্বের জন্য আবেদনই জানাতে পারবে না। আর সেটাই বিজেপিকে প্রাথমিক ভাবে নির্বাচনী দৌড়ে এগিয়ে দিয়েছে ঠিক তেমনি ধীরলয়ে কঠিন কঠোর পরিস্থিতির দিকেও ঠেলে দিয়েছে। আর তার জেরে দেশে বিজেপি(BJP) বিরোধীরা এর লাভ নিজেদের ঘরে তুলতে পারুন বা না পারুন, বাংলার(Bengal) বুকে তা ঘরে তুলতে চলেছে তৃণমূল(TMC)। অভিমত ওয়াকিবহাল মহলের।
বিজেপির প্রাথমিক লাভ কোথায়? CAA লাগু হওয়ায় গোবলয়ে এখন খুশির হাওয়া। কেননা অন্ধ ভক্তরা ভাবছেন, এবার মুসলিমদের দেশ থেকে বিতাড়নে সুবিধা হবে। তাঁদের ডিটেনশান ক্যাম্পে পাঠিয়ে দিয়ে তাঁদের নাগতিকত্ব কেড়ে নেওয়া যাবে। কেড়ে নেওয়া যাবে তাঁদের ভোটাধিকার, রেশনের অধিকার, সম্পত্তির অধিকার, মৌলিক অধিকার, যাবতীয় সরকারি পরিষেবা পাওয়ার অধিকার। যদিও বাস্তব এটাই যে CAA নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়ার আইন নয়। দেশ থেকে বিতাড়নের আইন নয়। কারও কোনও অধিকার কেড়ে নেওয়ার আইন নয়। এই আইন শুধুমাত্র নাগরিকত্ব পাওয়ার জন্য প্রনীত আইন। তবে এটা ঠিক যে মুহুর্তে এই আইনের মাধ্যমে কেউ নাগরিকত্বের জন্য আবেদন জানাবেন সেই মুহুর্ত থেকেই তিনি দেশের বুকে বেআইনি অনুপ্রবেশকারী হিসাবে চিহ্নিত হবেন। তা সে তাঁর কাছে ভোটার কার্ড, রেশন কার্ড, আধার কার্ড, প্যান কার্ড যাই থাকুক না কেন। তাই প্রাথমিক ভাবে দেশজুড়ে CAA’র বিরুদ্ধে ঝড় ওঠার সম্ভাবনা কম। কিন্তু যদি এই আইনকে কাজে লাগিয়ে সংখ্যালঘু সমাজের বিশেষ করে মুসলিমদের অধিকার কেড়ে নেওয়ার খেলা শুরু করে বিজেপি তাহলে ঝড় উঠতে বাধ্য। সেক্ষেত্রে সংখ্যালঘু ভোট ব্যাঙ্ক ২৪’র ভোটে বিজেপির বিরুদ্ধে এককাট্টা হয়ে বিজেপি বিরোধী নির্দিষ্ট কোনও একটি রাজনোইতিক দলের স্বপক্ষে যাবে। যেখানে যে দল বিজেপিকে হারাবার ক্ষমতা রাখে তাঁরা সেখানে সেখানে লাভবান হবে।
তৃণমূলের লাভ কোথায়? একুশের ভোটে প্রমাণিত, বাংলার মাটিতে বিজেপিকে হারাবার ক্ষমতা রাখে একমাত্র তৃণমূল কংগ্রেস। বাম হোক কী আইএসএফ কী কংগ্রেস, এরা নানান সময়ে নানান অবস্থান নিয়ে ও অন্ধ তৃণমূল বিরোধিতা করে কার্যত নিজেদের বিজেপি বান্ধব করে তুলেছে। আর তাই শুধু ধর্মের ভিত্তিতে ভোট চেয়ে এরা নিজেদের ঘরে কোনও ফসলই তুলতে পারবে না। বরঞ্চ বাংলাতে সংখ্যালঘু ভোট একুশের থেকেও বড় এককাট্টা হয়ে তৃণমূলের ঘরেই ঢুকতে চলেছে। ওয়াকিবহাল মহলের দাবি, CAA লাগু হওয়াতে বিজেপি ভাবছে তাঁরা লাভবান হবে। অন্তত বনগাঁ ও রানাঘাট লোকসভা কেন্দ্র দুটি তাঁরা জিতবে। কিন্তু ঘটনা হচ্ছে, বাংলার বুকে তপশিলি মানুষের জনসংখ্যা ২৩.৫ শতাংশ। এর মধ্যে আবার মাত্র ১৭ শতাংশ হচ্ছে মতুয়া। বাকিদের মধ্যে ১৮ শতাংশ রাজবংশী, ১৪ শতাংশ বাগদি। বিজেপি মতুয়া ভোট পেতে গিয়ে রাজবংশীদের দূরে ঠেলেও দিয়েছে। মানুষের সহজাত প্রবৃত্তি হচ্ছে যে তাঁকে ভয় ধরাচ্ছে তার হাত সে ধরতে চায় না। বরঞ্চ যে অভয় দেয় সে তাঁর হাত ধরে। এখানে বাংলার বুকে মমতা সেই অভয় দান করেই চলেছেন। CAA ঠেকানো বা আটকানো তাঁর পক্ষে সম্ভব নয়। কেন্দ্র সরকার চাইলে ডিটেনশান ক্যাম্পও করতে হবে রাজ্য সরকারকে। কিন্তু মমতা যে রাজনৈতিক ও মানবিক অভয় দিচ্ছেন, সেটাই ২৪’র ভোটে তৃণমূলের ঘরে ফসল তুলে দেবে। সেই আন্দাজ ইতিমধ্যেই পেতে শুরু করে দিয়েছেন পদ্মনেতারা। ওয়াকিবহাল মহলের ধারণা, বিজেপি ২টি কেন্দ্র সুনিশ্চিত করতে গিয়ে রাজ্যের বাকি ৪০টি আসন তৃণমূলের হাতে তুলে দিল।