নিজস্ব প্রতিনিধি: বঙ্গোপসাগর(Bay of Bengal) থেকে কলকাতার(Kolkata) দূরত্ব ১৩৫ কিমির মতো। কিন্তু সেই দূরত্ব এখন নিত্যদিন একটু একটু করে কমছে। সৌজন্যে সাগরের জলস্তর বৃদ্ধি। পাশাপাশি জলের উচ্চতা বাড়ছে গঙ্গার(Ganges) বুকেও। আর এই জলস্তর বৃদ্ধির জেরেই এখন বড়সড় বিপদের মুখে পড়ে গিয়েছে কলকাতা। বিপদের মুখে দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার একটা বড় অংশও। পরিসংখ্যান বলছে, উপকূল এলাকায় জোয়ারের সময় জলস্তর বৃদ্ধি পায় গড়ে ৩ মিটার পর্যন্ত। কিন্তু ডায়মন্ডহারবার(Daimond Harbour) এবং সংলগ্ন এলাকায় জলস্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে ৪ মিটারের আশেপাশে। যা উদ্বেগের বলেই মনে করছেন পরিবেশবিদ থেকে নদী বিশেষজ্ঞরা। দূরত্বের হিসাবে কলকাতা উপকূল এলাকায় না পড়লেও ডায়মন্ডহারবার পড়ে যায়। সেখানেই পরীক্ষা চালিয়ে এই তথ্য তুলে আনা হয়েছে।
আরও পড়ুন মোদির বারাণসী ও মমতার কলকাতাকে জুড়বে নয়া বন্দে ভারত
জলবায়ু পরিবর্তন এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনার উপকূল এলাকার জনজীবনে তার প্রভাব নিয়ে সাম্প্রতিক একটি গবেষণায় উঠে এসেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য। বিশ্ব উষ্ণায়নের জেরে সাগরের জল বাড়ছে। আবার হিমালয়ের বুকে থাকা হিমবাহগুলিও দ্রুত গলে যাচ্ছে। তার জেরে গঙ্গায় স্বাভাবিক সময়ে জলস্তর বেশি থাকতে দেখা যাচ্ছে। আর সেটা গঙ্গার নিম্নগতি এলাকাতেই চোখে পড়ছে। কলকাতা ও ডায়মন্ডহারবার, এই দুই শহরই গঙ্গার নিম্নগতিতে। সেখানেই দেখা যাচ্ছে জোয়ারের সময় জলের স্বাভাবিক উচ্চতা যেমন বেশি থাকছে তেমনি তাতে স্রোতও বেশি হচ্ছে। এ ভাবে চলতে থাকলে আগামী ২৫ বছরের মধ্যেই এই দুই শহর ও তার আশেপাশের এলাকাগুলিতে বড় ধরনের প্রাকৃতিক বিপর্যয় ঘটে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন পরিবেশবিদ থেকে নদী বিশেষজ্ঞরা। এর জন্য তাঁরা কাঠগড়ায় তুলছেন অপরিকল্পিত ভাবে বাঁধ নির্মাণের জেরে নদীর গতিপথ বদলানোর ঘটনাকেই।
আরও পড়ুন টাকা ফেরাতেই হবে, কোনও ছাড় নয়, কড়া নির্দেশ আবাসে
পরিবেশবিদ থেকে নদী বিশেষজ্ঞ মায় গবেষকদের দাবি, ঘূর্ণিঝড়ের পর অনেককেই পরিবেশ নিয়ে সচেতন হতে দেখা যায়। কিন্তু প্রতিনিয়ত পরিবেশের পরিবর্তন নিয়ে অনেকেই মাথা ঘামান না। এটা আরও মারাত্মক এবং ধ্বংসাত্মক ব্যাপার। ডায়মন্ডহারবারের মতো শহর এবং অন্যান্য উপকূলীয় এলাকায় নদীতে ব্যাপকহারে জলস্ফীতি দেখা যাচ্ছে। এ ভাবে চলতে থাকলে আগামী ২০-২৫ বছরের মধ্যে বড়সড় চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে এই এলাকা। মানুষের সচেতন হওয়া দরকার। কার্যত ডায়মন্ডহারবার ও কলকাতা দুই শহরই একটু একটু করে ডুবতে শুরু করে দিয়েছে। হাওড়া ও উলুবেড়িয়া শহরও খুব একটা ভাল অবস্থায় নেই। এই ৪ শহরের বুকে পরীক্ষা চালিয়ে দেখা গিয়েছে সেখানে মাটির নীচে থাকা জলে লবণের পরিমাণ আগের থেকে বেড়েছে। সেই সঙ্গে বেড়েছে ম্যানগ্রোভ জাতীয় গাছের সংখ্যা। বাড়ছে নদী তীরবর্তী এলাকায় ভাঙনও। আর এইসব কিছুই এই ৪টি শহরের বিপদ বাড়িয়ে দিয়েছে।