নিজস্ব প্রতিনিধি: মুখ বুজে অনেকে অনেক কিছুই সহ্য করেন। কিন্তু একদিন সেই সহ্যের বাঁধটাও ভেঙে যায়। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের(Mamata Banerjee) সেই সহ্যের বাঁধটা ভাঙল শিক্ষক দিবসের(Teachers Day) দিনই। কলকাতার আলিপুরে ধনধান্য অডিটোরিয়ামে রাজ্য সরকারের নিজস্ব শিক্ষক দিবসের অনুষ্ঠানে তিনি এদিন সরব হলেন রাজ্যপালের(Governor) স্বেচ্ছাচারিতা, যথেচ্ছাচার, স্বৈরতান্ত্রিক মনোভাবের বিরুদ্ধে। রাজ্যের সাংবিধানিক প্রধানের যাবতীয় অসাংবিধানিক কাজকর্মের বিরুদ্ধে এদিন সরব হতে বাধ্যই হয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোস(C V Anand Bose) যেভাবে রাজ্যের উচ্চশিক্ষার প্রতিষ্ঠান হিসাবে চিহ্নিত বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে নিজের খুশি মতন উপাচার্য নিয়োগ ও অপসারণ করতে শুরু করে দিয়েছেন, যেভাবে রাজ্যে সরকারের শিক্ষা দফতরের(West Bengal State Education Department) নির্দেশ না মানার বিজ্ঞপ্তি জারি করছেন তা কার্যত এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিতে চরম নৈরাজ্য তৈরির পাশাপাশি সেখানে চূড়ান্ত প্রশাসনিক অরাজকতা, অস্থিরতা ও অচলাবস্থা ডেকে এনেছে। স্বাভাবিক ভাবেই মুখ্যমন্ত্রীও এদিন পাল্টা আক্রমণে নামতে বাধ্য হয়েছেন।
এদিন শিক্ষক দিবসের অনুষ্ঠানের মঞ্চ থেকেই রাজ্যপালকে নিশানা বানিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘শিক্ষা ব্যবস্থাকে স্তব্ধ করিয়ে দেওয়ার চক্রান্ত করছেন রাজ্যপাল। আমরা এই চক্রান্ত মানব না। উনি কী ভাবছেন? মুখ্যমন্ত্রীর থেকেও বড়? সে উনি বড় হতেই পারেন। আমি বলে দিচ্ছি, এই যদি চলতে থাকে তা হলে অর্থনৈতিক বাধা তৈরি করব। দেখি কে চালায়। রাজ্যপাল পদাধিকার বলে রাজ্যের সব বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য হলেও অর্থ বরাদ্দ করে রাজ্য সরকার। কেরল থেকে এনে অধ্যাপক করবেন, ডিন করবেন ঠিক আছে। কোনও বিশ্ববিদ্যালয় যদি ওনার নির্দেশ মেনে চলে তা হলে আর্থিক বাধা তৈরি করা হবে। বেতন কে দেয়? রাজ্য সরকার না উনি? মধ্যরাতে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়োগ হয়ে গেল। কেরলের এক জন আইপিএসকে উপাচার্য করা হয়েছে। রবীন্দ্রভারতীতে একজন বিচারপতিকে উপচার্য করে দিয়েছে। এই চক্রান্ত আমরা মানব না। রাজ্যের শিক্ষাব্যবস্থা ধ্বংস করে দেওয়া হচ্ছে। নির্বাচিত সরকারের অধিকার কেড়ে নেওয়া হচ্ছে। বারবার বাধার মুখে পড়তে হচ্ছে রাজ্যকে।’
এর পাশাপাশি মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘রাতারাতি উপাচার্য বদলে ফেলা হচ্ছে। যারা শিক্ষাব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত নয়, তাঁদের উপাচার্য পদে বসানো হচ্ছে। যাদবপুরের উপাচার্য পদে বিজেপির কোনও সভাপতিকে বসিয়ে দেওয়া হয়েছে। দেখি, কোন উপাচার্যকে বেতন কে দেয়? উনি শুধু নিয়োগপত্র দিতে পারেন, বেতন দিই আমরাই। শিক্ষাব্যবস্থাকে স্তব্ধ করে দেওয়ার চক্রান্ত করেছেন রাজ্যপাল। এই চক্রান্ত আমরা মানব না। উনি নিজেকে মুখ্যমন্ত্রীর চেয়ে বড় ভাবছেন। কেউ ভয় পাবেন না। উনি অ্যাপয়েন্টমেন্ট লেটার দেবেন কিন্তু মাইনে তো দিতে পারবেন না। প্রাক্তন উপাচার্যদের বলছি আপনারাই থাকবেন, কার কী করার আছে আমরা দেখছি। অন্যায়ের বিরুদ্ধে আন্দোলনে সবাই আমাদের পাশে থাকবেন।’ কার্যত মুখ্যমন্ত্রীর এদিন যুদ্ধং দেহী মনোভাব দেখে রাজ্যের শিক্ষামহলের দাবি, এই পরিস্থিতির জন্য রাজ্যপালই দায়ী। কলকাতা হাইকোর্ট পর্যন্ত যেখানে বলে দিয়েছে উভয় পক্ষ আলোচনা করে সিদ্ধান্তে আসুন সেখানে আদালতের নির্দেশকেও না মেনে রাজ্যপাল কীভাবে এই যথেচ্ছাচার চালিয়ে যাচ্ছেন? কার নির্দেশেই বা তিনি এমন করছেন!