নিজস্ব প্রতিনিধি: বিরোধীদের একনাগাড়ের দাবি, বাংলায়(Bengal) শিল্প আসছে না, বাংলায় কেউ বিনিয়োগ করতে চাইছে না, বাংলায় শিল্পের পরিবেশ নেই, শিল্প গঠনের অনুকূল পরিবেশ নেই, সিঙ্গুরের সময় থেকেই তৃণমূল(TMC) শিল্পবিরোধী। অন্যদিকে শাসক দলের বক্তব্য, বিরোধীরা বাংলার উন্নয়ন চোখে দেখতে পায় না। তাঁরা বাংলার ভালও চায় না। সারাক্ষণ খালি বাংলার বদনাম করার তাঁদের একমাত্র কাজ। বাংলার বাইরে গিয়েও তাঁরা বাংলার নেতিবাচক ভাবমূর্তি তুলে ধরে। এবার এই দুই বিপরীতমুখী বক্তব্যের মধ্যে একটা নির্ণায়ক সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিল খোদ কেন্দ্রের ক্ষমতাসীন নরেন্দ্র মোদির(Narendra Modi) সরকার। কেন্দ্রের বাণিজ্য মন্ত্রক সাফ জানিয়ে দিল, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের(Mamata Banerjee) বাংলায় ক্রমশই বাড়ছে প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ বা Foreign Direct Investment যাকে অনেকেই FDI বলে চেনেন। কেন্দ্রীয় বাণিজ্য মন্ত্রক জানিয়েছে, পরপর ৩ বছরে বাংলায় প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ এসেছে ১০ হাজার কোটি টাকার ওপর। আর এই তথ্যই কার্যত বিরোধীদের দাবিকে শুধু যে মিথ্যা বলে প্রমাণ করেছে তাই নয়, কার্যত তাঁদের ভোঁতা মুখকেও থেঁতো করে দিয়েছে।
আরও পড়ুন পঞ্চায়েত নির্বাচন নিয়ে আবারও শুভেন্দুর মামলা হাইকোর্টে, দ্বারস্থ কমিশনও
কেন্দ্রীয় বাণিজ্য মন্ত্রক জানিয়েছে, গত ২০২০-’২১ অর্থবর্ষ থেকে মমতার বাংলায় যে পরিমাণ FDI এসেছে, তা ধারাবাহিকভাবে বেড়ে চলেছে। কোভিডের সময় থেকে এখনও পর্যন্ত যে বিপুল পরিমাণ বিদেশি বিনিয়োগ হয়েছে, তাতে শুধু মমতার প্রশাসন আশার আলো দেখছে তাই নয়, কার্যত কিছুটা হলেও নরেন্দ্র মোদির সরকারের ভাবমূর্তিও উজ্জ্বল করতে সহায়ক হয়ে উঠেছে। কেননা বাংলা ভারতের বাইরে নয়, বাংলায় প্রত্যক্ষ বিদেশী বিনিয়োগ এলে তা ভারতের(India) বুকেও ঘটা প্রত্যক্ষ বিদেশী বিনিয়োগ হিসাবে চিহ্নিত হবে। কেন্দ্রীয় বাণিজ্য মন্ত্রকের হিসেব বলছে, ২০২০-’২১ অর্থবর্ষে বাংলায় FDI এসেছিল ৩ হাজার ১১৮ কোটি টাকার। তার পরের বছর, অর্থাৎ ২০২১-’২২ অর্থবর্ষে তা বেড়ে হয় ৩ হাজার ১৯৫ কোটি টাকা। গত অর্থবর্ষে সেই হিসেব পৌঁছয় ৩ হাজার ২১৭ কোটি টাকায়। কেন্দ্রের তথ্যই বলছে, ২০১৭-’১৮ অর্থবর্ষে বাংলায় বিদেশি বিনিয়োগ হয়েছিল ১ হাজার ৪০৯ কোটি টাকা। অর্থাৎ কয়েক বছর আগের হিসেবের দিকে তাকালে বোঝা যাচ্ছে, গত ৩ বছরে বিদেশি লগ্নি টানার ক্ষেত্রে অনেকটা এগিয়েছেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাংলা।
আরও পড়ুন আদিবাসীদের ডাকা বনধ ও রেল অবরোধ, প্রভাব একাধিক জেলায়
২০২০-’২১ অর্থবর্ষের গোড়া থেকে দেশে কোভিড আর লকডাউনের ঝড় বড় রকমের প্রভাব ফেলতে শুরু করে অর্থনীতির ওপরে। তবে বিশ্ব বাজারে সংক্রমণের থাবা পড়েছিল তার আগে থেকেই। সেই সময়ের নিরিখে হিসেব কষলে ২০১৯ সালের অক্টোবর মাস থেকে ২০২৩ সালের মার্চ মাস পর্যন্ত বাংলায় প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ এসেছে প্রায় ১০ হাজার ৯০০ কোটি টাকার। FDI টানার নিরিখে দেশে এখন দশম স্থানে রয়েছে বাংলা। প্রথম তিনে রয়েছে মহারাষ্ট্র, কর্ণাটক ও গুজরাত। তবে কেন্দ্রীয় তথ্য এটাও বলছে, গোটা দেশে যে পরিমাণ বিদেশি বিনিয়োগ এসেছে, বাংলা তার মাত্র ১ শতাংশ দখলে করেছে। মমতার বাংলায় FDI বৃদ্ধির নেপথ্যে কোন রহস্য লুকিয়ে রয়েছে?
আরও পড়ুন যাদবপুর পাচ্ছে না উৎকর্ষ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিরোপা, নেপথ্যে বাজেট
বণিকসভা Merchants Chambers of Commerce and Industry বা MCCI’র দাবি লগ্নি কখনও রাতারাতি আসে না। তার জন্য জমি তৈরি করা দরকার। যে প্রশাসনের ভাবমূর্তি যত ভালো, শিল্পায়নের নীতি যত আকর্ষণীয়, লগ্নির গা থেকে লাল ফিতের ফাঁস আলগা করার তৎপরতা যত বেশি, বিনিয়োগও সেখানে তত বেশি। বামেদের আমলে সেটাই তলানিতে এসে ঠেকেছিল। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আমলে সেই ছবিটায় বদল ঘটাতে প্রাণপণ চেষ্টা করা হচ্ছে। শিল্প গঠনের অনুকূল পরিবেশ ও পরিকাঠামো আস্তে আস্তে বাংলায় গড়ে উঠেছে। সেই পরিবেশ ও ভাবমূর্তি গড়তে একটা বড় ভূমিকা পালন করেছে বিশ্ববাংলা বাণিজ্য সম্মেলন। দেখা যাচ্ছে এই ৩ বছরের যে প্রত্যক্ষ বিদেশী বিনিয়োগ এসেছে তার প্রায় সবটাই ওই সম্মেলনে যোগ দেওয়া বিদেশী বাণিজ্য প্রতিনিধি দলের দেওয়া প্রতিশ্রুতিরই ফল। তার পাশাপাশি World Bank’র উদ্যোগে ‘Is Of Doing Business’ সংক্রান্ত যে প্রতিযোগিতা হয়, সেখানেও দেখা যাচ্ছে গত কয়েক বছরে দফায় দফায় সামনের সারিতে উঠে এসেছে বাংলা। সেটাও বাংলার বুকে প্রত্যক্ষ বিদেশী বিনিয়োগ টানতে সুবিধা করে দিয়েছে। বিশ্ববাংলা বাণিজ্য সম্মেলনও লগ্নির ভাবমূর্তিকে উজ্জ্বল করেছে।