নিজস্ব প্রতিনিধি: দীর্ঘদিন ধরেই নাগরিকত্বের দাবি জানিয়ে আসছেন মতুয়ারা(Matua)। যদিও তাঁদের প্রায় সবারই ভোটার কার্ড, আধার কার্ড, রেশন কার্ড রয়েছে। সেই দাবিকে সমর্থন জানিয়ে তাঁদের নাগরিকত্ব প্রদানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল বিজেপি(BJP)। উনিশের লোকসভা ভোট ও একুশের বিধানসভা ভোট, দুটি নির্বাচনেই বাংলার মতুয়া সমাজ হাত উপুড় করে ভোট দিয়েছিল বিজেপিকে। কিন্তু আরও একটা লোকসভা নির্বাচন যখন দরজায় কড়া নাড়া শুরু করে দিয়েছে তখনও সেই নাগরিকত্বের দাবি পূরণ করতে পারেনি নরেন্দ্র মোদির সরকার। আর সেই দাবি পূরণ না হতেই এখন রাজ্যের মতুয়া প্রভাবিত এলাকায় দেখা যাচ্ছে বিজেপির সভায়, মিছিলে, বৈঠকে সেভাবে আর ভিড় হচ্ছেই না। এই ছবিটাই বলে দিচ্ছে বিজেপির দিক থেকে মুখ ফেরাতে শুরু করে দিয়েছে মতুয়ারা। আর সেই ছবি দেখে রীতিমত কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে বঙ্গ বিজেপির নেতাদের।
আরও পড়ুন এবার মমতার সরকারও আনছে ১০০ দিনের কাজের প্রকল্প
বিজেপির থেকে যে সব মতুয়ারা মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন, তাঁদের দাবি মোটামুটি এক। তাঁদের দাবি, ‘কোনও না কোনও ভোট এলেই মতুয়া ভোটকে তুরুপের তাস করার চেষ্টা করে বিজেপি। শুরু হয়ে যায় মতুয়া সম্প্রদায়ের মানুষকে নিয়ে রাজনীতি। সিএএ’র গাজর ঝুলিয়ে আমাদের মন জয়ের চেষ্টা করে। আগের ভোটগুলোতে এভাবেই আমাদের বোকা বানিয়েছিল বিজেপি। কিন্তু এখন আর পারবে না। ভোট সব নেতার মুখেই এক কথা শুনতে পাবেন, খুব শীঘ্রই লাগু করা হবে সিএএ(CAA)। তবে এখন আর বোকা বানাতে পারবে না।’ এই কথাগুলো যে আর নিছক কথার কথা নয় সেটা এখন বেশ ভালই বুঝতে পারছেন বিজেপির নেতারা। মতুয়া অধ্যুষিত এলাকায় এখম বিজেপির সভাতে সেভাবে ভিড়ই হচ্ছে না। সোশ্যাল মিডিয়া থেকে সংবাদমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ছে সেই সব ফাঁকা সভার ছবি। আর তাতেই কার্যত রাতের ঘুম ছুটেছে বঙ্গ বিজেপির নেতাদের। আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি বাংলায় আসছেন বিজেপি সর্বভারতীয় সভাপতি জে পি নাড্ডা(J P Nadda)। মনে করা হচ্ছে এই বিষয়ে তিনি বঙ্গ বিজেপির নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে আলোচনাও করতে পারেন।
আরও পড়ুন রাজ্যের ২৪২১টি গ্রাম পঞ্চায়েতকে পুরস্কার ২৫০ কোটি টাকা
এ রাজ্যে মতুয়াদের সব থেকে বড় বসতি রয়েছে উত্তর ২৪ পরগনা জেলার বনগাঁ মহকুমা ও নদিয়া জেলার রানাঘাট মহকুমায়। এছাড়াও তাঁদের বসবাস আছে পূর্ব বর্ধমান, বাঁকুড়া, মালদা ও কোচবিহার জেলাতেও। রাজ্যের প্রায় ৮০টি বিধানসভা কেন্দ্র ও ১২টি লোকসভা কেন্দ্র মতুয়া প্রভাবিত বলে রাজ্য রাজনীতিতে চিহ্নিত হয়ে আছে। এহেন মতুয়ারা এখন বিজেপি থেকে মুখ ফিরিয়ে নেওয়ায় আসন্ন পঞ্চায়েত নির্বাচন ও আগামী বছরের লোকসভা নির্বাচন পদ্মশিবিরের কাছে রীতিমত কাঁটার কার্পেট হয়ে উঠতে চলেছে। মতুয়াদের এই বিজেপি বিমুখতা নিয়ে মুখ খুলছেন তৃণমূলের(TMC) নেতারাও। তাঁদের দাবি, গত লোকসভা নির্বাচনের সময় সিএএ, এনআরসি(NRC) নিয়ে বিজেপি মতুয়াদের একটা ভুল বার্তা দিয়েছিল। মতুয়া মানুষজন এখন সেটা ধরতে পেরেছেন। তাই তাঁরা এঁদের মিথ্যা প্রতিশ্রুতি শুনতে পছন্দ করছেন না, ওঁদের সভাতেও যাচ্ছেন না। এখন বিজেপির নানা সভায় সিএএ প্রসঙ্গ উঠলেও তা শোনার লোক থাকছে না। ভোট টানার ক্ষেত্রে বিজেপির পুরনো অস্ত্রের ধার কমেছে। তাতে মন মজছে না মতুয়া সম্প্রদায়ের মানুষের। তাই যত দিন যাবে, সিএএ নিয়ে বিজেপি নেতারা প্রতিশ্রুতির বান ডাকতে পারেন। কিন্তু মতুয়ারা তাতে মজবেন কিনা সন্দেহ আছে।