নিজস্ব প্রতিনিধি: রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের(Health Department) রিপোর্ট বলছে বাংলায়(Bengal) এখন প্রতি এক হাজার পুত্রসন্তান জন্মের তুলনায় কন্যাসন্তান জন্মের অনুপাত শুধু নিম্নমুখী নয়, কোথাও কোথাও তা অত্যন্ত উদ্বেগজনক স্তরে গিয়ে পৌঁছেছে। ২৩টির মধ্যে ১৯টি জেলাতেই কন্যাসন্তানের জন্মের হার কম। আর সেই রিপোর্ট সামনে আসতেই অস্বস্তি ছড়িয়েছিল রাজ্যের শীর্ষ প্রশাসনিক স্তরে। কেননা প্রশ্নের মুখে পড়ে গিয়েছিল রাজ্যে মেয়েদের জন্য চালু থাকা নানান আর্থসামাজিক প্রকল্পগুলি। এই প্রকল্পগুলি রাজ্যের আর্থিক পরিস্থিতির উন্নতি ঘটাতে পারলেও, কেন মানুষের মানসিকতায় কোনও পরিবর্তন আনতে পারেনি তা নিয়েই প্রশ্ন তুলে দিয়েছিল। পাশাপাশি সামনে উঠে এসেছিল কন্যা ভ্রুণহত্যার চিত্র। তার জেরেই এবার নড়েচড়ে বসল নবান্ন(Nabanna)। রাজ্যের জেলায় জেলায় কন্যা ভ্রূণহত্যা(Female Feticide) রুখতে কড়া পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশ দিল মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রশাসন। নবান্ন থেকে জেলা প্রশাসনগুলিকে সাফ জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, বেআইনি ভাবে কন্যা ভ্রুণহত্যা রুখতে যেন পিসি পিএনডিটি আইন(PC PNDT Law) প্রয়োগ করা হয়। এই মর্মে নির্দেশ জারি করে বিভিন্ন জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিককে বার্তা দিয়েছে রাজ্যের স্বাস্থ্যভবন।
আরও পড়ুন এতদিন মমতা বলতেন, এখন মোদিও বলছেন
স্বাভাবিক নিয়ম অনুযায়ী, শিশুপুত্র ও শিশুকন্যা জন্মানোর আদর্শ অনুপাত ১০০০:৯৫২। কিন্তু খুব করেও ৩টি সরকারি রিপোর্ট বলছে বাংলার ১৯টি জেলাতেই প্রতি হাজার পুত্র সন্তান পিছু কন্যা সন্তান জন্মানোর হার ৯৫২-এর কম। এই ১৯টি জেলার মধ্যে রয়েছে দুই দিনাজপুর, দুই বর্ধমান, দুই মেদিনীপুর, কলকাতা, হাওড়া, হুগলি, নদীয়া, মুর্শিদাবাদ, মালদহ, বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, বীরভূম, দার্জিলিং, কালিম্পং, ঝাড়গ্রাম, জলপাইগুড়ি ও কোচবিহার। এবার আসা যাক রিপোর্টের কথায়। ২০২০ সালের কেন্দ্রীয় সরকারের সিভিল রেজিস্ট্রেশন সিস্টেম বা সিআরএস অনুযায়ী, বাংলায় পুত্র ও কন্যা সন্তান জন্মের অনুপাতে উদ্বেগজনক অবস্থায় থাকা জেলাগুলি হল যথাক্রমে কলকাতা(৯৩৬), পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুর(৯৩৯ ও ৯০৭), নদীয়া(৯৩৬), উত্তর দিনাজপুর (৯২২) ও কালিম্পং(৯২৬)। রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের নিজস্ব তথ্যভাণ্ডার এইচএমআইএস বা হেলথ ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেম বলছে ২০২১-২২ সালে কন্যাসন্তান জন্মে পিছিয়ে থাকা জেলাগুলি হল যথাক্রমে কলকাতা(৯৩৬), পশ্চিম মেদিনীপুর(৯৩৭), পশ্চিম বর্ধমান(৯১২), হুগলি(৯৩৪), পুরুলিয়া(৮৯৭), ঝাড়গ্রাম(৯২৪), মালদা(৯৩৩) এবং কোচবিহার(৯৩১)। এছাড়াও দেশের অন্যতম বড় সমীক্ষা ন্যাশনাল ফ্যামিলি হেলথ সার্ভে বা এনএফএইচএস-৫ অনুযায়ী কন্যাসন্তান জন্ম উদ্বেগজনক কম হচ্ছে কলকাতা(৮০৯), পূর্ব মেদিনীপুর(৭৭৭), পুরুলিয়া(৮৬০), পশ্চিম ও পূর্ব বর্ধমান(৮৭৭ ও ৭৮৭) এবং বীরভূমের(৯৩৪) বুকে।
আরও পড়ুন যোশীমঠের পরিণতির অপেক্ষায় বাংলার দার্জিলিংও
স্বাভাবিক কারণেই রাজ্যজুড়ে প্রশ্ন উঠেছিল, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়(Mamata Banerjee) বাংলার মেয়েদের আর্থসামাজিক ক্ষেত্রে তাঁদের গুরুত্ব বাড়াতে একগুচ্ছ প্রকল্প চালু করেছেন। তারপরেও কেন বাংলায় কন্যাসন্তানকে ঘিরে আজও অনীহা রয়ে গিয়েছে? বাংলায় মেয়েদের স্কুলছুট রুখতে ও বাল্য বিবাহ বন্ধ করতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় চালু করেন ‘কন্যাশ্রী’ প্রকল্প। সেই প্রকল্প শুধু যে বাংলা জুড়েই জনপ্রিয়তা পেয়েছে তাই নয়, বিদেশের কুর্ণিশও আদায় করে নিয়েছে। বাংলার বুকে মেয়েদের স্কুলছুটের পরিমাণ কমেছে, পাল্লা দিয়ে কমেছে বাল্যবিবাহের সংখ্যাও। আবার গরীব ঘরের মেয়েদের বিয়ের জন্য আর্থিক সাহায্য করতে মুখ্যমন্ত্রী চালু করেন ‘রূপশ্রী’ প্রকল্পও। সেই প্রকল্পও আজ বাংলার ঘরে ঘরে বন্দিত। তবে এই দুই প্রকল্পকেই ছাড়িয়ে গিয়েছে লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের জনপ্রিয়তা। কিন্তু পুত্র সন্তান পিছু কন্যা সন্তান জন্মানোর হার স্বাভাবিকের থেকে কম হয়ে যাওয়ায় প্রশ্নের মুখে পড়েছিল মুখ্যমন্ত্রীর এইসব প্রকল্পগুলি। তার জেরেই জেলায় জেলায় শুধু কড়া বার্তাই পাঠাল না নবান্ন সঙ্গে সঙ্গে নজরদারি বাড়াতে রাজ্যের ৫টি স্বাস্থ্য জেলা বিষ্ণুপুর, রামপুরহাট, নন্দীগ্রাম, ডায়মন্ডহারবার ও নন্দীগ্রামে নজরদারি কমিটি গড়ে দিল রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতর। এই কমিটি দু’টি হল ডিস্ট্রিক্ট অ্যাপ্রোপ্রিয়েট অথরিটি এবং ডিস্ট্রিক্ট অ্যাডভাইসরি কমিটি।