নিজস্ব প্রতিনিধি: দেশের বুকে আবারও নজীর গড়ল কলকাতা(Kolkata)। স্টেম সেল থেরাপির(Stem Cell Therapy) মাধ্যমে মধ্যবয়স্ক এক ব্যক্তির পা বাঁচিয়ে শোরগোল ফেলে দিল কলকাতার পিয়ারলেস হাসপাতাল(Pearless Hospital)। কেননা ওই রোগীর পায়ে রক্ত চলাচল বন্ধ হয়ে গিয়ে পা ফুলে যাওয়ার পাশাপাশি তাতে পচনও ধরে গিয়েছিল। তার জেরে তাঁর পা কেটে বাদ দেওয়া ভিন্ন দ্বিতীয় কোনও রাস্তা খোলা দেখতে পারনি অধিকাংশ মানুষ। এই অবস্থায় পিয়ারলেস হাসপাতালের চিকিৎসকেরা তাঁর পা কেটে বাদ না দিয়ে অ্যালোজেনিক মেসেনকাইমাল স্টেম সেল থেরাপির মাধ্যমে তাঁর চিকিৎসা করতে শুরু করেন। সেই চিকিৎসা সফল হয়েছে। কেননা ওই বেসরকারি হাসপাতাল থেকে জানানো হয়েছে, ওই ব্যক্তির পায়ে নতুন করে রক্তনালী জন্মাতে শুরু করেছে। তাঁর পাও খুব দ্রুত স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে।
আরও পড়ুন মমতার সরকারের নয়া মাইলফলক ‘স্বজল গ্রাম’, কটাক্ষ বিজেপির
জানা গিয়েছে বছর ৫৬’র ওই ব্যক্তি উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবিটিস-সহ বেশ কিছু শারীরিক সমস্যায় ভুগছেন। এই অবস্থায় তাঁর পায়ের রক্তনালীতে চর্বি জমতে শুরু করে। তার জেরেই তাঁর পা ফুলতে শুরু করে দিয়েছিল। পরিস্থিতি একটা সময় এমন হয়ে যায় যে পায়ের নীচের দিকের অংশে রক্ত চলাচলই বন্ধ হয়ে যায়। তার জেরে প্রবল যন্ত্রণার পাশাপাশি পা নাড়াচাড়া করতেও পারছিলেন ওই ব্যক্তি। একটা সময় সেই পা পচতেও শুরু করে দেয়। কলকাতারই একাধিক সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকেরা তার জেরে তাঁকে জানিয়েছিলেন পা কেটে বাদ দেওয়া ভিন্ন দ্বিতীয় কোনও রাস্তা নেই। কিন্তু শেষে ওই ব্যক্তির পরিবার তাঁকে পিয়ারলেস হাসপাতালে ভর্তি করায় ও সেখানেই অ্যালোজেনিক মেসেনকাইমাল স্টেম সেল থেরাপির মাধ্যমে তাঁর চিকিৎসা শুরু করেন চিকিৎসকেরা। ওই হাসপাতালের প্রবীণ কার্ডিয়োথোরাসিক ভাস্কুলার সার্জেন অশোক বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত ধরে গত ৪ নভেম্বর এই থেরাপি প্রয়োগ হয়। এখন হাসপাতাল থেকেই জানানো হয়েছে, ওই ব্যক্তি এখন অনেকটাই সুস্থ আছেন ও তাঁর পা ক্রমশ স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে।
আরও পড়ুন গণধর্ষণকাণ্ডে লাইসেন্স বাতিলের সম্ভাবনা বৈদিক ভিলেজের
এই ঘটনায় পিয়ারলেস হাসপাতালের ফার্মাকোলজি বিশেষজ্ঞ শুভ্রজ্যোতি ভৌমিক জানিয়েছেন, ‘ওই ব্যক্তির যে সমস্যা হয়েছিল তার নাম ‘ক্রিটিক্যাল লিম্ব ইস্কিমিয়া’। দেশে অন্তত ৫০ লক্ষ মানুষ এই রোগের সমস্যায় ভুগছেন। অসহ্য যন্ত্রণায় তাঁদের সিংহভাগেরই জীবন জেরবার হয়ে যায়। কারও বা বাইপাস সার্জারি করে বন্ধ হতে বসা রক্তবাহিকার বিকল্প পথ খুলে দেওয়া হয়, কারও আবার বাদ যায় রোগগ্রস্ত হাত কিংবা পা। বস্তুত, এই অসুখের রোগীদের ৩০ শতাংশের অঙ্গহানি ঠেকানো যায় না। অন্যের শরীর থেকে নেওয়া রক্তের অঙ্কুর কোষ বা অ্যালোজেনিক স্টেম সেল রোগীর ওপরে প্রয়োগ করে এই রোগের চিকিৎসা করা হয়। সম্প্রতি কেন্দ্রীয় ওষুধ নিয়ন্ত্রক সংস্থার ছাড়পত্র মেলার পর এই প্রথম এই চিকিৎসা পদ্ধতি বাংলায় প্রয়োগ করা হল ও তাতে সাফল্যও পাওয়া গেল। এই থেরাপিতে ব্যবহৃত একটিমাত্র ইঞ্জেকশনের দামই প্রায় ১.৬০ লাখ টাকা। পায়ের কাফ মাসলে ইঞ্জেকশনের মাধ্যমে ধীরে ধীরে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে ওষুধটি। ওষুধ প্রয়োগের ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই গায়েব হয়েছে যন্ত্রণা। সপ্তাহখানেকের মধ্যেই পায়ে জন্মাতে শুরু করেছে নতুন রক্তনালী। ফলে পা কেটে বাদ দেওয়ার আর প্রশ্ন নেই। সব মিলিয়ে লাখ দুয়েক টাকা খরচ পড়ে এই চিকিৎসায়। যদিও স্বাস্থ্যবিমার সুযোগ মেলে। এ ক্ষেত্রে রোগী যেহেতু ইএসআই-এর উপভোক্তা, তাই রোগীর পকেট থেকে একটি পয়সাও খরচ হয়নি। মেসেনকাইমাল স্টেম সেল থেরাপি এমন রোগীদের জন্যে যুগান্তকারী চিকিৎসা। এখনও এ দেশে খুব প্রচলতি হয়নি ঠিকই। তবে আগামী দিনে এর প্রয়োগ বাড়বে।’