নিজস্ব প্রতিনিধি: সপ্তমীর সন্ধ্যায় ফের জনজোয়ারে ভাসতে শুরু করেছে মহানগরী। দুপুর থেকেই কলকাতায় শিয়ালদহ ও হাওড়া স্টেশন থেকে মানুষের সমাগম ঘটতে শুরু করে। পিছিয়ে ছিল না মেট্রো। সন্ধ্যে পর্যন্ত লক্ষ লক্ষ মানুষ মেট্রো চেপে পৌঁছে গেছেন অতি দ্রুত উত্তর থেকে দক্ষিণ। বিকেল পাঁচটা থেকেই ভিড় জমতে শুরু করে ভিআইপি রোড(VIP Road) সংলগ্ন শ্রীভূমি স্পোর্টিং ক্লাব, দমদম তরুণ সংঘের মণ্ডপে। শুরু হয় দড়ি ফেলে ভিড় নিয়ন্ত্রণের পালা। দুপুর দুটো থেকেই কলকাতা পুলিশ ও বিধান নগর কমিশনারেট রাস্তায় নেমে পড়ে। কারণ গত কয়েক দিনে ভিড়ের যে উন্মাদনা পুলিশ দেখেছে তাতে সপ্তমীর সন্ধ্যে যে জনজোয়ারে ভেসে যাবে তা বলাই বাহুল্য। লালবাজার কন্ট্রোল রুমের হিসাব অনুযায়ী সন্ধ্যে ছটায় বালিগঞ্জ কালচারাল জনশ্রুতে ভেসে যায়। ভিড়ের টক্করে পিছিয়ে ছিল না সুরুচি সংঘ থেকে বাদামতলা আষাঢ় সংঘ ,চেতলা অগ্রণী, ত্রিধারা সম্মিলনী ,বেহালা নতুন দল সহ বিভিন্ন পুজো মন্ডপগুলি।
থিম আর সাবেকিআনার লড়াইয়ে টক্কর চলছে প্রত্যেকের সঙ্গে প্রত্যেকের। ত্রিধারা সম্মিলনীর পূজা মণ্ডপে ভিড়ের জেরে সেলফি তোলা বন্ধ করে দেয় কলকাতা পুলিশ। উত্তর কলকাতার বাগবাজার সার্বজনীন, হাতিবাগান সার্বজনীন ,বেনিয়াটলা, আহিরীটোলা, কাশি বোস লেন(Kasi Bose Lane), কুমারটুলি পার্ক ও মধ্য কলকাতার কলেজ স্কয়ার এবং সন্তোষ মিত্র স্কোয়ারে ভিড় দুপুর থেকে যত সময় এগিয়েছে তত লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়েছে। সপ্তমীর ভিড় সামলাতে কলকাতা পুলিশের গোটা ফোর্সকেই রাস্তায় নামানো। শুধু তাই নয় থানার অফিসারদের ট্রাফিকের কাজে ব্যবহার করা হয়। লালবাজারে পুলিশ কন্ট্রোল রুম(Lalbazar Police Controll Room) বিকেল থেকেই চালু হয়ে যায়। সপ্তমীর ভিড় প্রতি ঘন্টায় ঘন্টায় যেভাবে ছক্কা হাঁকাতে শুরু করেছে তা দেখে পুলিশের অনুমান রাত যত এগোবে জনস্রোত সুনামির ঢেউতে পরিণত হবে। যদিও অভিজ্ঞ পুলিশ অফিসারদের মতে ভিড় বাড়বে অষ্টমী তিথিতে। কারণ সপ্তমী তিথিতে মানুষজন সারা রাত সেভাবে ঘুরবে না রাত পোহালেই যেহেতু অষ্টমী পূজার পুষ্পাঞ্জলি রয়েছে। তাই তাড়াতাড়ি বাড়ি ফেরার তাড়া সকলেরই থাকবে।
অষ্টমীর সারা রাত জনজোয়ার উত্তর থেকে দক্ষিণে যে বইবে তাতে ১০০ শতাংশ নিশ্চিত লালবাজার কন্ট্রোল রুম। এদিকে আলিপুর আবহাওয়া দফতরের পক্ষ থেকে দশমী থেকে সমুদ্রে যাওয়ার মৎস্যজীবীদের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। নবমীর সন্ধ্যা থেকে হালকা বৃষ্টি হলেও দশমীতে বৃষ্টি তেজ কিছুটা বাড়বে বলে আগাম জানানো হয়েছে। তাই মহালয়ের আগের দিন থেকে রাস্তায় নেমে পড়া আমজনতা প্রতিদিনই ভিড় জমিয়েছে এক মণ্ডপ থেকে অপর মন্ডপে। সপ্তমীর সন্ধ্যায় তাই জনজোয়ারের সপ্তম সুরে ভাসছে মহানগরী। গাড়ির গতি সচল রাখতে সেন্ট্রাল এভিনিউ(Central Avenue) থেকে বিটি রোড বিধান সরণি থেকে গড়িয়া হাট যাদবপুর থেকে বেহালা সর্বত্র ট্রাফিক পুলিশের নজরদারি জোরদার করা হয়েছে। উদ্দেশ্য একটাই ভিড়ের সপ্তম সুরে ছন্দ পতন যেন না ঘটে যানবাহনের। শহরের বিভিন্ন পয়েন্টে থাকা কলকাতা পুলিশ হেল্প ডেক্সের পাশাপাশি রাস্তায় উচ্চপদস্থ অফিসারদের উপস্থিতি সন্ধ্যে থেকেই ছিল যথেষ্ট। শুধু কলকাতা পুলিশের ১৪০০০ পুলিশ ফোর্স নয় তার পাশাপাশি কয়েক হাজার এনসিসি কর্মী ও স্বেচ্ছাসেবকদের মুখে থাকা হুইসেলের শব্দ জানান দিয়েছে মণ্ডপে মণ্ডপে জনজোয়ারে ভেসে যাওয়া উৎসবমুখী জনগণকে।