নিজস্ব প্রতিনিধি: ‘আবকে বার ২০০ পার’ হাঁক পেড়ে বাংলা দখলে আসা বহিরাগত বিজেপিকে বাংলার মানুষ একুশের বিধানসভা নির্বাচনেই আটকে দিয়েছে। শুধু আটকে দেওয়াই নয়, বামেদের মতো বিজেপিরও কার্যত রক্তক্ষরণ শুরু হয়ে গিয়েছে একুশের বিধানসভা নির্বাচনের পর থেকেই। যা আটকাতে কার্যত চূড়ান্ত ব্যর্থ দেশের প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং দলের সর্বভারতীয় সভাপতি। একই রকম ভাবে ব্যর্থ বঙ্গ বিজেপি(BJP) নেতৃত্বও। তার মধ্যে যেমন থাকবেন বঙ্গ বিজেপির সভাপতি, তেমনি থাকবেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতাও। ব্যর্থ আরএসএস নেতৃত্বও। কিন্তু এখন যে প্রশ্নগুলো ভাবাচ্ছে বঙ্গ বিজেপির নেতা থেকে কর্মীদের তা হল, তৃণমূল(TMC) থেকে বিজেপিতে এসে সাংসদ, মন্ত্রী, দলীয় পদাধিকারী হওয়া পাবলিকগুলো ফের তৃণমূলে ফিরবেন কবে? বঙ্গ বিজেপিতে কান পাতলেই শোনা যাচ্ছে, এখন গেরুয়া শিবিরে সব থেকে বেশি উদ্বেগ ৪জন সাংসদকে ঘিরে, যাদের মধ্যে ২জন আবার কেন্দ্রীয় মন্ত্রীও।
অর্জুনের তৃণমূলে ফিরে যাওয়াকে প্রকাশ্যে বিশেষ গুরুত্ব দিতে চাইছেন না গেরুয়া শিবিরের নেতারা। তবে ভিতরে উঁকি মারলেই ছবিটা সম্পূর্ণ বদলে যাবে। কার্যত বঙ্গ বিজেপির নেতাদের শরীরি ভাষায় বলে দেবে, তৃণমূল থেকে আসা নেতানেত্রীদের ঘিরে দলের অন্দরে উৎকণ্ঠা ক্রমশই বাড়ছে। আপাতত সব থেকে বেশি উৎকণ্ঠা ছড়িয়েছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী তথা কোচবিহারের সাংসদ নিশীথ প্রামাণিক(Nishith Pramanick), কেন্দ্রীয় জাহাজ প্রতিমন্ত্রী তথা বনগাঁর সাংসদ শান্তনু ঠাকুর(Shantanu Thakur), হুগলির সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায়(Locket Chatterjee) এবং বিষ্ণুপুরের সাংসদ সৌমিত্র খাঁকে(Soumitra Khan) ঘিরে। শান্তনু বাদে বাকি ৩জনেরই প্রত্যক্ষভাবে তৃণমূল যোগ ছিল। শান্তনু নিজে তৃণমূলে নাম না লেখালেও তাঁর বাবা তৃণমূলের বিধায়ক ছিলেন, রাজ্যের মন্ত্রীও ছিলেন। ঘটনাচক্রে এই ৪জনই কিন্তু বিগত কয়েক মাস ধরেই তাঁদের পূর্বকার উগ্র তৃণমূল বিরোধীতার জায়গা থেকে অনেকতাই সরে এসেছেন। খুব কমই এখন তাঁদের গলায় তৃণমূল বিরোধীতার সুর শোনা যায়। আর এখানেই চিন্তা বাড়াচ্ছে বিজেপি নেতৃত্বের। শান্তনু ও নিশীথ তবুও কেন্দ্রীয় মন্ত্রী। কিন্তু, লকেট বা সৌমিত্র তা নয়। মন্ত্রীত্ব দিয়ে শান্তনু ও নিশীথকে তবুও হয়তো ২০২৪ পর্যন্ত ধরে রাখা যাবে বলে মনে করছেন বিজেপি নেতৃত্ব। কিন্তু লকেট আর সৌমিত্রকে কতদিন ধরে রাখা যাবে তা নিয়ে নিজেরাই ঘোর অন্ধকারে পদ্ম শিবিরের নেতারা।
গল্প এখানেই শেষ নয়। দলের অন্দরে আরও বেশ কিছু সাংসদ ও বিধায়কদের নিয়ে উদ্বেগ ছড়িয়েছে। সূত্রে জানা গিয়েছে, উত্তর মালদার বিজেপির সাংসদ খগেন মর্মুও নাকি দলবদলের চেষ্টা করছেন পুরোদমে। বঙ্গ বিজেপিতে সন্দেহের তালিকায় থাকছেন রানাঘাটের সাংসদ জগন্নাথ সরকারও। দলবদলুদের তালিকায় নাম উঠতে পারে ঝাড়গ্রামের বিজেপি সাংসদ কুনার হেমব্রমেরও। যদিও এই ৭জন সাংসদের কেউই মুখে প্রকাশ্যে স্বীকার করতে চান না যে তাঁরা বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে আসতে ইচ্ছুক বা তৃণমূলের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলেছেন তাঁরা। বরঞ্চ সংবাদমাধ্যম থেকে প্রশ্ন এলেই তা ক্লিন স্যুইপে উড়িয়ে দিচ্ছেন তাঁরা। ঠিক যেমনটি শোনা যেত ব্যারাকপুরের সাংসদ অর্জুন সিংয়ের গলায়। ‘কতবার বলব আমি তৃণমূলে যাব না, যাব না, যাব না’, অর্জুনের এই ডায়লগ এখন নাটক আর সিনেমার ডায়লগকেও হার মানাবে। তাই বিজেপির এই ৭জন সাংসদ মুখে যতই তৃণমূল বিরোধীতা চালিয়ে যান না কেন, দলের অন্দরেই এদের আর কেউ বিশ্বাস করছেন না বলেই বঙ্গ বিজেপির সূত্রে জানা গিয়েছে। বরঞ্চ তাঁদের ধারনা অর্জুনের পথ ধরে এরাও আজ না হোক কাল তৃণমূলের পথেই পা বাড়াবেন।