নিজস্ব প্রতিনিধি: ক্যানসার যেমন আপনার শারীরিক স্বাস্থ্যকে প্রভাবিত করে, তেমনি এটি আপনার অনুভূতির একটি বিস্তৃত পরিবর্তন নিয়ে আসতে পারে যা আপনি মোকাবেলা করতে অভ্যস্ত নন। এটি অনুভূতিগুলিকে আরও তীব্র মনে করাতে পারে। তাদের দৈনিক, ঘণ্টায় বা এমনকি মিনিট থেকে মিনিট পরিবর্তন হতে পারে।
যাদের গুরুতর, দীর্ঘস্থায়ী বা টার্মিনাল অসুস্থতা রয়েছে তাঁরা উদ্বেগ এবং হতাশার সম্মুখীন বেশি হয়। রোগ নির্ণয়ের পর, ৪০ শতাংশ ক্যান্সার রোগী উল্লেখযোগ্য যন্ত্রণার রিপোর্ট করেন যা গুরুতর উদ্বেগ, প্যানিক আক্রমণ, বিষণ্নতা এবং PTSD, বা পোস্টট্রোম্যাটিক স্ট্রেস ডিসঅর্ডার হতে পারে। এছাড়াও, যাদের ডায়াবেটিস বা রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস আছে তাঁদের, সাধারণ মানুষের তুলনায় বিষণ্ন হওয়ার সম্ভাবনা ছয়গুণ বেশি। ট্রান্সপ্ল্যান্ট রোগীদের পাশাপাশি দীর্ঘস্থায়ী ব্যথা এবং শ্বাসকষ্টজনিত রোগীদের এবং অন্যান্য রোগ, যেগুলোর জন্য তাদের সারাজীবন মোকাবিলা করতে হয়, বিষণ্নতা এবং উদ্বেগের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। গুরুতর অসুস্থতার মোকাবেলা করার চিকিৎসা এমন জটিল, যা ম্যানিয়া, হতাশা, অনিদ্রা এবং উদ্বেগ বাড়িয়ে দেয়।
মানসিক সুস্থতা বজায় রাখার কিছু টিপস
১) কি মূল্যবোধের সাথে আপনি বড় হয়েছেন তার ওপর নির্ভর করবে কিভাবে আপনি এর মোকাবেলা করবেন। আমরা অনেক সময় ভাবি আমাদের আরো শক্ত হতে হবে, নিজেদের পরিবারকে রক্ষা করতে হবে, ভেঙে পড়লে চলবে না ইত্যাদি। এবং সেজন্য আমরা অন্যের কাছে সাহায্যের জন্য যেতে কুণ্ঠা বোধ করি। কিন্তু বিশ্বাস করুন, আপনাকে সবসময় শক্ত হয়ে থাকতেই হবে এমনটা নয়। আপনি ভেঙে পড়তে পারেন, কাঁদতে পারেন, অন্যের কাছে সাহায্য চাইতে পারেন।
২) অন্যের জীবনের সাথে আপনার জীবনে তুলনা করবেন না। প্রত্যেকটি মানুষ আলাদা। তাদের পরিস্থিতি আলাদা। তাদের লড়ে নেওয়ার ক্ষমতা আলাদা। আপনি যদি স্বচ্ছন্দ বোধ করেন তবেই আপনার পরিবারের মানুষের সাথে আপনার কথা শেয়ার করতে পারেন নতুবা নয়। কাছের মানুষের কাছে সাহায্য চাইতে ভুলবেন না।
৩) যতটা কর্মব্যস্ত থাকা সম্ভব ততটা থাকুন। যতটা দৈনন্দিন রুটিন মেনে চলা সম্ভব ততটা মানুন। যে কাজটা আপনার করতে ভাল লাগে, সেই ভালবাসার কাজের জন্য দিনে অন্তত কিছুটা সময় রাখুন এবং জোর করে হলেও সেই কাজে, মনকে নিবিষ্ট করুন।
৪) একই অভিজ্ঞতার সম্মুখীন অথবা যারা একই অবস্থার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছেন এমন গোষ্ঠী বা গ্রুপ খুঁজুন। যখন আপনি আপনার মনের কথা তাদের সাথে ভাগ করে নিতে পারবেন, তখন আপনার মনে হবে যে আপনি একা নন। আপনার মত আরও অনেকে আছে যারা লড়ে চলেছেন।
৫) রোগ নির্ণয়ের সময় থেকে ভবিষ্যতে কি হতে চলেছে, সাংঘাতিক কোন পার্শপ্রতিক্রিয়া হবে ইত্যাদি আগে থেকে ভেবে নেবেন না। সেই মুহূর্তে যেটা করনীয় সেটা করুন। মুহূর্তে মনোনিবেশ করুন।
৬) প্রয়োজনে পেশাদার কাউন্সিলর বা থেরাপিস্টের পরামর্শ নিন। আপনি যদি তাঁর কাছে যেতে না পারেন, ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যোগাযোগ করতে পারেন।
বিশ্বাস করুন, সমস্ত রকমের চাপ, উত্তেজনা মোকাবেলা করার শক্তি আপনার মধ্যেই আছে। নিজের উপর ভরসা রাখুন।
লেখক : পুষ্পিতা মুখার্জি (মনোবিদ ও শিক্ষিকা)