এই মুহূর্তে




মহাবীর হনুমানের চলার গতি কত জানেন? শুনলে চোখ কপালে উঠবে




পৃথ্বীজিৎ চট্টোপাধ্যায় :                      জয় হনুমান জ্ঞান গুণ সাগর ।

জয় কপীশ তিহু লোক উজাগর ॥

অখণ্ড ব্রহ্মচারী মহাজ্ঞানী কোটি সূর্য তেজ সমৃদ্ধ বজরংবলী হনুমানের মহিমা অপরিসীম। তিনি হলেন এক প্রাচীন হিন্দু দেবতা ও মর্যাদা পুরুষোত্তম রামের ঐশ্বরিক বানর সঙ্গী।পৌরাণিক কাহিনি মতে, হনুমান হলেন অষ্টচিরঞ্জীবীর একজন। অর্থাৎ হনুমান অমর, তাঁর মৃত্যু নেই। জানা যায়, তিনি রাম অনুজ লক্ষণের প্রাণ বাঁচাতে লঙ্কা থেকে হিমালয়ের গন্ধমাদন পর্বত থেকে বিশল্যকরণী নামের সঞ্জীবনী ভেষজ আনতে গিয়েছিলেন। আবার শৈশবে সূর্যকে পাকা আম ভেবে খেতে গিয়েছিলেন। তবে, সেক্ষেত্রে আমাদের মনে প্রশ্ন জাগতেই পারে, যে, তিনি যখন এত দ্রুত এত কম সময়ের মধ্যে লঙ্কা থেকে প্রায় ২৫০০ কিলোমিটার দূরে হিমালয়ের দ্রোণগিরি থেকে ভেষজ আনতে গিয়ে গোটা পর্বত তুলে নিয়ে এসেছিলেন, আবার যথাস্থানে সেই পর্বত রেখেও এসেছিলেন, তাহলে তিনি কত দ্রুত গতি সম্পন্ন ছিলেন ! কতটা গতিশীল হলে ওই সময়ে দুই দুই চার বার ২৫০০ কিলোমিটার পথ অর্থাৎ মোট ১০ হাজার কিলোমিটার অতিক্রম করা যায়?

প্রথমেই বলা উচিত, মহাবীর হনুমান, অসীম শক্তি, অদম্য সাহস এবং অলৌকিক গতির জন্য পরিচিত। রামায়ণে তাঁর বীরত্বপূর্ণ কর্মকাণ্ড এবং অবিশ্বাস্য গতি আজও ভক্তদের মধ্যে বিস্ময় জাগায়। হনুমানের গতি নিয়ে বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণ থেকে কোনও পরিমিত সংখ্যা নেই, তবে তাঁর কাহিনিগুলি থেকে বোঝা যায় যে, তিনি আক্ষরিক অর্থেই “বায়ুপুত্র” – বায়ুর মতোই গতিশীল এবং সীমাহীন ক্ষমতার অধিকারী।

রামায়ণের লঙ্কাকাণ্ডে মেঘনাদের শক্তিশেলে আহত লক্ষ্মণের প্রাণ বাঁচাতে হনুমানের দ্রোণগিরি পর্বত থেকে সঞ্জীবনী বুটি আন্তে গিয়েছিলেন। কথিত আছে, সুষেণ বৈদ্য লক্ষণের প্রাণ বাঁচানোর জন্য হনুমানকে নির্দেশ দেন হিমালয়ের দ্রোণগিরি থেকে সঞ্জীবনী সহ চারটি ভেষজ আনার জন্য। সমস্যা ছিল, সূর্যোদয়ের আগেই সেই ঔষধি আনতে হবে, নাহলে লক্ষণের প্রাণ বাঁচানো সম্ভব হবে না। বিভিন্ন পৌরাণিক কাহিনি থেকে প্রাপ্ত তথ্যের থেকে অনুমান করা হয়, তখন রাত প্রায় দেড়টা। হনুমান হিমালয়ের উদ্দেশে যাত্রা শুরু করেন।

মনে রাখতে হবে, হনুমান এই পুরো পথ পাড়ি দিয়েছিলেন আকাশপথে। পথে রাক্ষস কালনেমি তাঁকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করে, ফলে এতে খানিকটা  সময় নষ্ট হয়। এছাড়া হিমালয়ে গাছ গাছড়া খুঁজে বের করতে এবং পুরো পর্বত চষে ফেলার মতো কাজেও সময় লাগে। তবু তিনি অল্প সময়ের মধ্যেই দ্রোণগিরি থেকে গন্ধমাদন পর্বতের পুরো অংশ তুলে নিয়ে রওনা দেন। বৈদিক শাস্ত্র অনুযায়ী, রাত প্রায় ১টা থেকে ভোর ৫টার মধ্যে তাঁর এই বিপুল দূরত্ব অতিক্রম করার সময় ছিল, অর্থাৎ সর্বাধিক চার ঘণ্টার মধ্যে আড়াই হাজার কিলোমিটার আসা-যাওয়া করার। কিন্তু, হিসেব কষে দেখা যায়, বিভিন্ন আনুষঙ্গিক সময় বাদ দিয়ে গন্ধমাদন পর্বত আনতে মাত্র দু ঘণ্টা সময়ের মধ্য়ে পাঁচ হাজার কিলোমিটার পথ আকাশপথে পাড়ি দিতে হয়েছিল তাঁকে।

এই কাহিনির হিসাব থেকে অনুমান করা যায়, হনুমান কমপক্ষে প্রতি ঘণ্টায় ২৫০০ কিলোমিটারের অধিক গতিবেগে উড়েছিলেন, যা আধুনিক বিজ্ঞানের প্রেক্ষাপটে বিভিন্ন বিমানের গতির থেকেও বহুগুণ বেশি। তাই বলা যায়, তাঁর গতি মানুষের বোধগম্যের বাইরে এবং সম্পূর্ণ অলৌকিক। রামায়ণের বর্ণনায় ‘হনুমান চলিষ্ণু’ বা অতি দ্রুতগামী হিসেবে তাঁর বর্ণনা পাওয়া যায়।

অন্যদিকে হনুমান চলিশায় তাঁকে ‘অসীম গতি সম্পন্ন’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। সেখানে বলা হয়, “বিমল যশ বজরংবলী/সদা হনুমত গতি বলি”, অর্থাৎ বজরংবলীর গতি অপরিমেয় এবং তিনি যে কোনও জায়গায় স্বল্পতম সময়ে পৌঁছাতে পারেন।

প্রাচীন শাস্ত্রের আরও একটি দিক হল, হিন্দু পুরাণে অনেক সময় মহাজাগতিক সত্যকে রূপক আকারে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। হনুমান যে বায়ুপুত্র, তার মানে তিনি প্রকৃতির সেই শক্তির প্রতীক, যা বাতাসের চেয়ে দ্রুততর গতি ধারণ করে। ভারতীয় মহাকাব্য এবং পুরাণে একমাত্র হনুমানই এমন চরিত্র, যিনি এক লাফে সমুদ্র পেরিয়ে লঙ্কা গিয়েছিলেন। এই লাফের গতি হিসাব করলে বোঝা যায়, তিনি ঘণ্টায় কয়েক হাজার কিলোমিটার গতিতে চলতে সক্ষম ছিলেন। এখানেই শেষ নয়; হনুমান রাম-রাবণ যুদ্ধের সময় যেমন গতি দেখিয়েছেন, তেমনই লঙ্কার অগ্নিসংযোগের সময়ও মুহূর্তের মধ্যে পুরো নগরীতে ছুটে বেড়িয়েছেন। এই গতি সাধারণত মানুষের কল্পনাতেও আসে না।

সবশেষে বলা যায়, হনুমানের গতি একেবারে পৌরাণিক এবং অলৌকিক। তিনি শুধু শক্তির প্রতীক নন, ধৈর্য, সাহস আর প্রভুভক্তিরও এক অপূর্ব উদাহরণ। এই কারণে হনুমান যুগ যুগান্তর ধরে অগণিত মানুষের কাছে নির্ভীকতা, শক্তি, অনন্ত গতির দেবতা পি সংকট মোচন হিসেবে পূজিত হন।

Published by:

Ei Muhurte

Share Link:

More Releted News:

পরিচয় ভাঁড়িয়ে ‘আব্দুল’ হয়ে গেলেন ‘নেহা’, ১০ বছর ঘাঁপটি মেরে বসবাসের পর গ্রেফতার বাংলাদেশি যুবক

ট্রাম্পের সঙ্গে বিবাদ, ফোন নম্বর বদলে ফেললেন মাস্ক

গুগলে ৫৪ লক্ষের বেতনে যোগ দিলেন জলপাইগুড়ির শ্রেয়া, গল্প শুনলে চোখে জল আসবে

লুকানো হৃদরোগ শনাক্তে কার্ডিওলজিস্টদের চেয়েও নির্ভুল এই নতুন AI টুল

জানেন কী, কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে একমাত্র এই কৌরব যুদ্ধ করেছিলেন পাণ্ডবদের হয়ে?

জানেন, কেন লক্ষ্মীদেবী সবসময় ভগবান নারায়ণের পায়ের কাছে বসেন?

Advertisement
এক ঝলকে
Advertisement

জেলা ভিত্তিক সংবাদ