এই মুহূর্তে




মৎস্যরূপে পৃথিবীকে রক্ষা করেছিলেন শ্রী বিষ্ণু – জেনে নিন অজানা কাহিনী




পৃথ্বীজিৎ চট্টোপাধ্যায় : মহাভারতে কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে আপনজনদের মৃতদেহ দেখে শোকাহত ও মূর্চ্ছিতপ্রায় বীর অর্জুনকে শ্রীকৃষ্ণ বলেছিলেন –

“যদা যদা হি ধর্মস্য গ্লানির্ভবতি ভারত।

অভ্যুত্থানম অধর্মস্য তদাত্মানং সৃজাম্যহম্॥

পরিত্রাণায় হি সাধুনাং বিনাশয় চ দুষ্কৃতাম।

ধর্মসংস্থাপনার্থায় সম্ভবামি যুগে যুগে॥”

অর্থাৎ, যুগে যুগে যখনই পৃথিবীতে অধর্মের প্রাবল্য বেড়ে যায়, তখনই ভগবান শ্রীবিষ্ণু অবতীর্ণ হন ধর্মের পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে ও সাধুদের রক্ষা করতে। পৌরাণিক কাহিনী অনুসারে তাঁর দশটি অবতারের মধ্যে প্রথম অবতার ছিলেন মৎস্য অবতার। সেক্ষেত্রে আমাদের জ্ঞান পিপাসু মনে প্রশ্ন জাগতেই পারে, যে মাছ রূপে কী ভাবে তিনি ধর্মের পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেছিলেন। চলুন জেনে নেওয়া যাক ভগবান মৎস্য অবতারের অজানা কাহিনী। কথিত আছে, একটি স্বর্ণালী মাছের রূপে সত্যযুগে আবির্ভূত হয়েছিলেন শ্রী নারায়ণ। এই অবতারের মূল উদ্দেশ্য ছিল ভয়ঙ্কর অসুর হায়াগ্রিভকে পরাজিত করে চতুর্বেদ উদ্ধার করা ও বিশ্বজগতকে এক মহাপ্লাবনের হাত থেকে রক্ষা করা।

সমুদ্ররাক্ষস হায়াগ্রিভের তাণ্ডব

পুরাণ অনুযায়ী, একদা হায়াগ্রিভ নামে এক অসুর ছিল অত্যন্ত শক্তিশালী ও দম্ভকারী। সে ব্রহ্মার কাছ থেকে চতুর্বেদ ছিনিয়ে নিয়ে সমুদ্রের গভীরে লুকিয়ে রেখেছিলেন। তাঁর অত্যাচারে সারা জগতে অস্থিরতা সৃষ্টি হয়। জল, স্থল, অন্তরীক্ষ—কোনও জায়গাই ছিল না হায়াগ্রিভের ধ্বংসযজ্ঞ থেকে মুক্ত। তখন বিপর্যস্ত মানবজাতি ও ঋষি-মুনিরা শরণাপন্ন হন শ্রীবিষ্ণুর কাছে। তিনি তখন বিশ্রামে ছিলেন ক্ষীরসাগরে, কিন্তু মর্ত্যবাসীর আর্তনাদ শুনে তিনি এক দৈব রূপ ধারণ করেন—মৎস্য অবতার।

রাজা সত্যব্রত ও সোনালি মাছ

এই সময় পৃথিবীতে সত্যব্রত নামে এক পরম বিষ্ণুভক্ত রাজা ছিলেন। একদিন ভোরে তিনি সূর্যোদয়ের সময় নদীতে দাঁড়িয়ে ঘটিতে জল ভরে সূর্যকে অর্ঘ্য দিচ্ছিলেন। হঠাৎ একটি সোনালি রঙের মাছ লাফিয়ে এসে তাঁর ঘটিতে ঢুকে পড়ে। রাজা সেটিকে নদীতে ফিরিয়ে দিতে চাইলে মাছটি তাঁকে অনুরোধ করে ও আশ্রয় প্রার্থনা করে—কারণ, নদীতে অনেক ভয়ঙ্কর প্রাণী রয়েছে, সে তাদের খাদ্য হতে চায় না। তাই সত্যব্রত রাজা মাছটিকে প্রাসাদে নিয়ে যান। কিন্তু পরদিন তিনি দেখেন মাছটি অনেক বড় হয়ে গিয়েছে। ঘটিতে আর ধরছে না। তিনি বড় পাত্রে মাছটিকে রাখেন। কিন্তু প্রতিদিনই মাছটি আকারে এত বড় হতে থাকে যে, রাজপ্রাসাদের ছোট পুকুরেও সেটি আর ধরছে না। অবশেষে তিনি মাছটিকে সমুদ্রে ছেড়ে দেন।

মাছের দৈব রূপে প্রকাশ

সমুদ্রে গিয়েও মাছটি আরও বিশাল আকার ধারণ করে। তখন সত্যব্রত বুঝতে পারেন, এটি কোনও সাধারণ মাছ নয়। এর মধ্যে রয়েছে এক ঐশ্বরিক শক্তি। তিনি হাতজোড় করে উপাসনা করলে বিষ্ণু স্বয়ং আবির্ভূত হন, যাঁর দেহের উপরের অংশ মানুষের এবং নিচের অংশ মাছের মতো। তিনি রাজাকে সতর্ক করে জানান—সাত দিনের মধ্যে পৃথিবীতে এক ভয়াবহ মহাপ্লাবন ঘটবে, যাতে সবকিছু জলে ডুবে যাবে।

মহাপ্লাবনের ভবিষ্যদ্বাণী ও প্রস্তুতি

বিষ্ণুর আদেশে রাজা সত্যব্রত একটি বিশাল নৌকা তৈরি করেন। সেই নৌকায় তিনি নিজের প্রজা, বিভিন্ন ঋষি-মুনি, ও নানা প্রজাতির জীবজন্তুদের স্থান দেন। সাত দিন পর সত্যিই শুরু হয় মহা প্লাবন। পৃথিবী ঢেকে যায় বিশাল জলরাশিতে, ঢেউয়ে ভেসে যেতে থাকে সবকিছু।

মৎস্যরূপী বিষ্ণুর রক্ষা

এই সংকটময় সময়ে একটি বিরাট মাছ সেই নৌকার পাশে এসে উপস্থিত হয়, যার কপালে একটি শিং থাকে। সত্যব্রত বাসুকি নাগকে দড়ি হিসেবে ব্যবহার করে মাছটির শিঙের সঙ্গে নৌকা বেঁধে দেন। তারপর সেই মাছ রূপী বিষ্ণু সমস্ত জীবকে নিয়ে নিরাপদ স্থানে গমন করেন।

মৎস্য পুরাণের সূচনা

এই যাত্রাপথে রাজা সত্যব্রত ও মৎস্যরূপী বিষ্ণুর মধ্যে বহু গুরুত্বপূর্ণ আলাপচারিতা ঘটে, যা পরে মৎস্য পুরাণে লিপিবদ্ধ হয়। রাজাকে নিরাপদ স্থানে পৌঁছে দিয়ে বিষ্ণু আবার তাঁর ধ্যানমগ্ন রূপে ফিরে যান। পরবর্তীতে মৎস্য অবতার সমুদ্রগর্ভে প্রবেশ করে হায়াগ্রিভকে বধ করেন এবং চতুর্বেদ উদ্ধার করে ব্রহ্মার হাতে ফিরিয়ে দেন। এর ফলে আবার পৃথিবীতে জ্ঞান ও ধর্মের পুনঃপ্রতিষ্ঠা ঘটে।

মৎস্য জয়ন্তী

পুরাণ অনুসারে, চৈত্র মাসের শুক্লপক্ষের তৃতীয়া তিথিতে বিষ্ণু এই মৎস্য অবতার রূপে আবির্ভূত হয়েছিলেন। এই কারণে এই দিনটি মৎস্য জয়ন্তী নামে পরিচিত। বহু বিষ্ণুভক্ত এই তিথিতে উপবাস পালন করে ও শ্রীনারায়ণের পূজা করে থাকেন। নিঃসন্দেহে বলা যায়, মৎস্য অবতার কাহিনি শুধু একটি ধর্মীয় গল্প নয়, এটি প্রতীকীভাবে বোঝায় যে যেকোনো সংকটে ঈশ্বর আমাদের রক্ষা করেন, তবে তাতে বিশ্বাস ও প্রস্তুতিরও প্রয়োজন। রাজা সত্যব্রত যেমন বিষ্ণুর আদেশে বিশ্বাস করে প্রস্তুতি নিয়েছিলেন, তেমনই এই কাহিনি আমাদের শেখায়—বিশ্বাস, ধৈর্য, ও ধর্মপথে চললেই আমরা দুর্দিনেও ঈশ্বরের কৃপা লাভ করতে পারি। মৎস্য অবতার তাই এক অমূল্য বার্তা বহন করে: আস্থা ও ধর্মের শক্তিতে জয় নিশ্চিত।




Published by:

Ei Muhurte

Share Link:

More Releted News:

ভারতের মুকুটে নয়া পালক, ইউনেস্কোর মেমোরি অফ দ্য ওয়ার্ল্ড রেজিস্টারে লিপিবদ্ধ হল গীতা

”আপকে য্যায়সা কোই নেহি”, ইতালির প্রধানমন্ত্রী মেলোনির প্রেমে মজেছেন ট্রাম্প’

‘ক্রিকেটাররা আমাকে নগ্ন ছবি পাঠিয়েছে’, বিস্ফোরক দাবি ‘ছেলে থেকে মেয়ে হওয়া’ আনায়ার

অমর প্রেম, স্বামীর মৃত্যুর পরে বিষ খেয়ে আত্মঘাতী স্ত্রী, একই চিতায় পুড়লেন দুজনে

‘Ghibli’ এখন অতীত, সোশ্যাল মিডিয়ায় হিট নতুন ট্রেন্ড! AI দিচ্ছে পোষ্যদের মানুষের রূপ!

ভারতীয় রেলে কী ভাবে এল শৌচাগার ? জানুন অজানা কাহিনি

Advertisement




এক ঝলকে
Advertisement




জেলা ভিত্তিক সংবাদ

দার্জিলিং

কালিম্পং

জলপাইগুড়ি

আলিপুরদুয়ার

কোচবিহার

উত্তর দিনাজপুর

দক্ষিণ দিনাজপুর

মালদা

মুর্শিদাবাদ

নদিয়া

পূর্ব বর্ধমান

বীরভূম

পশ্চিম বর্ধমান

বাঁকুড়া

পুরুলিয়া

ঝাড়গ্রাম

পশ্চিম মেদিনীপুর

হুগলি

উত্তর চব্বিশ পরগনা

দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা

হাওড়া

পূর্ব মেদিনীপুর